এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : সীমান্তের প্রচারণা মাইক আগেই সরিয়ে নিয়েছে দুই কোরিয়া। এবার পাহারা চৌকিগুলোও ভেঙে ফেলছে। সম্প্রতি শত্রু থেকে বন্ধু হওয়া দেশ দুটির দুই নেতার মধ্যে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। প্রতীকী এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বুধবার থেকে।

এদিন বিশ্বের অন্যতম সশস্ত্র পাহারাপূর্ণ সীমান্তের অসামরিকায়িত অঞ্চল (ডিমিলিটারাইজড জোন) পার হয়ে শান্তিপূর্ণভাবে একে অপরের দেশে প্রবেশ করেন উভয় দেশের দুটি সেনাদল। চৌকিগুলো ভেঙে ফেলা বা নিরস্ত্র করা পর্যবেক্ষণ করতেই এক জায়গায় মিলিত হন তারা।

১৯৪৮ সালে দুই কোরিয়া বিভক্তকারী অসামরিকায়িত অঞ্চল সৃষ্টির পর এই প্রথমবারের মতো দুই পক্ষের সেনারা একে অপরের দেশে পা রাখল। দেশ দুটির গণমাধ্যমে তাই একে ৭০ বছর পর ঐতিহাসিক সেনামিলন হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। খবর রয়টার্স ও এএফপির।

অসামরিক অঞ্চল গড়ার দুই বছর পরই ১৯৫০ সালে দক্ষিণে আগ্রাসন চালায় উত্তর। কোরীয় উপদ্বীপে সূচিত হয় কোরীয় যুদ্ধের। ইতিহাসের অন্যতম এ ভয়াবহ যুদ্ধে পিয়ংইয়ংকে সমর্থন করে চীন ও রাশিয়া। বিপরীতে সিউলের পক্ষ নিয়ে লড়াই করে মার্কিন বাহিনী।

তিন বছর পর ১৯৫৩ সালে এক যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে সংঘাত শেষ হলেও গত ৭০ বছর ধরে কার্যত যুদ্ধাবস্থায় রয়েছে দেশ দুটি। গত বছর দক্ষিণে প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইনের ক্ষমতায় আসার পর থেকে সেই পরিস্থিতি দ্রুতই বদলাতে শুরু করে।

এরই মধ্যে অসামরিকায়িত অঞ্চলের পানমুনজামে নিকট আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছে যুদ্ধের সময় আলাদা হয়ে পড়া কয়েকশ’ বৃদ্ধ নারী-পুরুষ। এক দেশের বিরুদ্ধে আরেক দেশের প্রচারণা চালাতে এতদিন ধরে বসানো ছিল যে প্রচারণা মাইক তা খুলে ফেলা হয়েছে।

দুই দেশের মধ্যে বন্ধন আরও দৃঢ় করতে বসানো হচ্ছে নতুন ট্রেন লাইন। এরই ধারাবাহিকতায় এবার ভেঙে ফেলা হচ্ছে পাহারা চৌকি। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে মুনের পিয়ংইয়ং সফরে উত্তরের নেতা কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়ে একমত হন তারা।

বুধবারের সেনাদের ওই পর্যবেক্ষণ ছিল অনেকটা প্রতীকী। কারণ নভেম্বরেই শুরু হয় চৌকি ভাঙার কাজ। উত্তর ইতিমধ্যে নিজেদের ১০টা চৌকি গুঁড়িয়ে দিয়েছে। বিপরীতে দক্ষিণ ভেঙেছে ১০টা।

বুলডোজার দিয়ে উভয় পক্ষের মোট ২০টা চৌকি ভাঙা হয়েছে। সিগারেট টানতে টানতে আর খোশগল্প করতে করতে জায়গাগুলো পর্যবেক্ষণ করেন সেনারা। তবে উত্তরে এখনও ৫০টা ও দক্ষিণে ১৫০টা চৌকি অবশিষ্ট রয়েছে।

আড়াই কিলোমিটার চওড়া অসামরিকায়িত অঞ্চলের ১৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকাজুড়ে চৌকিগুলোর অবস্থান।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এদিন সকালে অসামরিকায়িত অঞ্চলে নিজ নিজ সীমান্তে হাজির হন উত্তর ও দক্ষিণের মোট ১৪ সেনা। এরপর লাইন ধরে ধীর পদচলনে দু’দেশের বিভাজন রেখায় দাঁড়ান দক্ষিণের ৭ সেনা।

একইভাবে দক্ষিণের সেনাদের সামনাসামনি এসে দাঁড়ান উত্তরের ৭ সেনা।

এরপর দুই দল একে অপরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মোলাকাত করেন। এ সময় প্রত্যেকের কাঁধে একটা করে ব্যাগ, হাতে একটা করে ক্যামেরা ও রেকর্ডার ছিল। মোলাকাত পর্ব শেষে উভয় পক্ষকে ছবি তোলেন তারা। এরপর দক্ষিণের দল উত্তরের অংশে আর উত্তরের দল দক্ষিণের অংশে প্রবেশ করেন।

চৌকিগুলো ঠিকমতো ভাঙা হয়েছে কিনা, সেনা প্রহরা ও অস্ত্র সরানো হয়েছে কিনা প্রভৃতি পরীক্ষা করে দেখেন সেনারা।

এসব দৃশ্যের বেশ কিছু ভিডিও গণমাধ্যমের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে। দক্ষিণের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘দুই দেশের বিভাজনের পর এই প্রথমবারের জন্য উত্তর ও দক্ষিণের সেনারা শান্তিপূর্ণভাবে বিভাজন রেখা অতিক্রম করল।’

অসামরিকায়িত অঞ্চল বলা হলেও দক্ষিণ কোরিয়া ও উত্তর কোরিয়ার সীমান্ত বিশ্বের সবচেয়ে সামরিক ও সশস্ত্র প্রহরাপূর্ণ সীমান্তগুলোর অন্যতম। এর সীমান্তে কাঁটাতারের উঁচুবেড়াসহ পাতা রয়েছে হাজার হাজার স্থলমাইন। তবে স্থলমাইনগুলো সরানোর ব্যাপারেও কাজ শুরু করেছে দুই পক্ষ।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version