এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত যথেষ্ট নিরপেক্ষ ভূমিকায় রয়েছে বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম। তিনি বলেছেন, নির্বাচন কমিশন যথেষ্ট নিরপেক্ষ ও নির্মোহ রয়েছে। বুধবার নির্বাচন ভবনে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে চারটি পর্যবেক্ষক সংস্থার বিরুদ্ধে আপত্তি জানানো হয়েছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। ওই ৪ সংস্থাকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ থেকে বিরত রাখার দাবি জানিয়েছে দলটি।
বৈঠক শেষে এইচটি ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, কয়েকটি জেলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে। পটুয়াখালী, ময়মনসিংহের ফুলপুর, মানিকগঞ্জের সিংগাইর, পাবনার শাহজাদপুর ও নরসিংদী জেলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালিয়েছে এবং তাদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর করেছে। নির্বাচন কমিশনকে আমরা সতর্ক করলাম এসব ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা নিতে আমরা কমিশনকে অনুরোধ করেছি।
অপরাধীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হোক। এইচ টি ইমাম জানান, সব অভিযোগের বিষয়ে কমিশন জানতো না। আমরা তাদের অবহিত করলাম। আলোচনা করে তারা ব্যবস্থা নেবেন বলে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। ইসি বৃহত্তম দল হিসেবে আমাদের দায়িত্বের বিষয়টি উল্লেখ করলে আমরা আমাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছি বলে জানিয়েছি। আমরা বলেছি, আমাদের আক্রমণ করলে রক্ষা তো আপনাদেরই করতে হবে।
সেক্ষেত্রে কমিশনও তাদের দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানিয়েছে। নির্বাচন কমিশন এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকায় নির্দেশ দেবেন এবং যথবিহীত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান। সারা দেশে যেসব হামলা ও সহিংসতা হয়েছে মোটামুটিভাবে তার বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের উপর হয়েছে। আমাদের দুইজন সদস্য নিহত হয়েছেন। যারা তৃণমূলে নির্বাচনী কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতেন। বেছে বেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর আক্রমণ মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। সে বিষয়টি আমরা কমিশনকে অবহিত করেছি। ঠাকুরগাঁয়ে মির্জা ফখরুলের ওপর হামলা বিএনপি’র মনোনয়ন বাণিজ্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ- দাবি করে তিনি বলেন, স্থানীয়ভাবে গুলশান ও নয়াপল্টন অফিসে মনোনয়ন বাণিজ্য নিয়ে যে তুমুল তোলপাড় হয়েছিল, সেটার বহিঃপ্রকাশ ঠাকুরগাঁওয়ে হয়েছে। তারা নিজেরা মারামারি করেছে। সেখানে আওয়ামী লীগের কেউ ছিল না। তিনি যে সেখানে যাবেন সেটি পুলিশকে জানাননি। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের আগে নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটতে পারে। সে বিষয়ে আমরা সকলেই তৎপর।
নোয়াখালীর সেনবাগে যুবলীগকর্মী নিহতের ঘটনাকে ২০১৪ সালের সহিংসতা ও মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতার সঙ্গে তুলনা করেন তিনি। ইসি’র সঙ্গে বৈঠকে নিবন্ধিত ১১৮টি দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থার মধ্যে চারটি সংস্থার নির্বাচন পর্যবেক্ষণের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। ডেমোক্রেসি ওয়াচ, খান ফাউন্ডশেন, লাইট হাউজ, মানবাধিকার সমম্বয়ক পরিষদ- এই চারটি সংস্থার বিরুদ্ধে মারাত্মক তথ্য আছে বলে দাবি দলটির। নির্বাচন কমিশনকে এই চারটি সংস্থাকে পর্যবেক্ষণের অনুমতি না দেয়ার দাবি জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ প্রসঙ্গে এইচ টি ইমাম বলেন, দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থার মধ্যে চারটি সংস্থার বিরুদ্ধে মারাত্মক তথ্য আছে। তারা একেবারেই দলীয়। এনজিও ব্যুরো থেকে যখন নিবন্ধন নেয় তখন তো আর বলেন না নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবো। তবে নির্বাচন কমিশনে এসে তারা নিবন্ধন পেয়ে যান। তিনি বলেন, ডেমোক্রেসি ওয়াচ পরিচালনা করেন বিএনপিপন্থি সাংবাদিক শফিক রেহমানের স্ত্রী তালেয়া রেহমান।
শফিক রেহমান বিএনপি’র এজন বড় নেতা, লেখক এবং বিএনপি’র পক্ষে প্রচার-প্রচারণা করেন। অতীতে তারা ভোটকেন্দ্রে ঢুকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের নামে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন। আরেকটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা খান ফাউন্ডেশন বিএনপি নেতা ড. মঈন খানের স্ত্রী পরিচালনা করেন। এবং এটি একেবারেই দলীয়। নির্বাচনের আইন অনুযায়ী তারাই নির্বাচনে পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন যাদের কোনো রজনৈতিক দল ও আদর্শের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই। একেবারে দলীয় কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে তারা পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন না। লাইট হাউজ এনজিও তারেক রহমান পরিচালনা করেন দাবি করে তিনি বলেন, লাইট হাউজ বগুড়ার। লাইট হাউজের প্রতিষ্ঠাতা তারেক রহমান নিজেই। এবং তিনি এটি পরিচালনা করেন। লাইট হাউজের সঙ্গে সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে আমাদের কাছে বিভিন্ন রকম তথ্য আছে। তারা শুধু রাজনীতির সঙ্গেই সম্পৃক্ত নন।
তারা রাজনৈতিকভাবে বিভিন্ন রকম প্রভাব সৃষ্টি করেন। বাংলদেশ মানবাধিকার সমন্বয় পরিষদ বিষয়ে তিনি বলেন, অধিকার’র আদিলুর রহমানের সঙ্গে বিদেশি কয়েকটি সংস্থার সম্পৃক্ততা থাকায় তাদের নিবন্ধন বাতিল করা হয়। সেটি এখন বাংলাদেশের মানবাধিকার সমন্বয় পরিষদ নামে এসেছে। আমরা এদের বিষয়ে উদ্বিগ্ন। এদের যদি নিয়ন্ত্রণ করা না হয় তাহলে বিপর্যয় ঘটতে পারে। বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ও ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ উপস্থিত ছিলেন।