এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে বিপাকে আওয়ামী লীগ। নানাভাবে বোঝানোর পরও অনেকে তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। উল্টো দলের মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে তারা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করছেন। এ ছাড়া মহাজোটের শরিক দলগুলোর পক্ষ থেকে বারবার আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের কাছে বিষয়টি তুলে ধরা হচ্ছে। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ দলীয় বিদ্রোহীদের কারণে তারা নির্বাচনী এলাকায় সুবিধা করতে পারছেন না। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দুইদিন আগে বলেছেন নির্বাচনী মাঠে বিদ্রোহীদের রাখা হয়েছে রাজনীতির কৌশলের কারণে।
অন্যদিকে গতকাল দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক সংবাদ সম্মেলন করে বিদ্রোহীদের দুইদিনের আলটিমেটাম দেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের প্রার্থীর বিরুদ্ধে এখনো যারা বিদ্রোহী হিসেবে ভোটের মাঠে রয়েছেন তাদের দুইদিনের মধ্যে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হবে।
আর এ সময়ের মধ্যে তা প্রত্যাহার না করলে সাংগঠনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বা মহাজোটের কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী নেই। কিছু স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে। এটা দেড় ডজন নয় আরো অনেক কম। তিনি বলেন, নির্বাচনের মাঠে এখনো নিজ দল আওয়ামী লীগ বা মহাজোটের প্রার্থীর বিরুদ্ধে যারা এখনো রয়েছেন তাদের ১৭ই ডিসেম্বরের মধ্যে সরে দাঁড়াতে হবে এবং সরে দাঁড়ানোর বিষয়টি জানাতে সংবাদ সম্মেলন করতে হবে মহাজোটের এ সব বিদ্রোহী প্রার্থীদের। তাদের অবশ্যই আওয়ামী লীগ বা মহাজোটের প্রার্থীর স্বপক্ষে ভোটের মাঠে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।
নতুবা আমরা সাংগঠনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেব। আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে, প্রায় অর্ধশত আসনে দলেরই এক বা একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে ক্ষুব্ধ এসব নেতা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন নি। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে খোলা চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে মনোনয়ন না পাওয়া প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হয়েছে। বারবার তাদের এবারের নির্বাচনের গুরুত্ব বোঝানো হয়েছে। দলের শীর্ষ পাঁচ নেতাকে বিদ্রোহীদের নিবৃত্ত করার দায়িত্বও দেয়া হয়। কয়েকজনকে ঢাকায় ডেকে এনেও বোঝানো হয়। এমনকি দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাও কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেন। তারপরও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন গত ৯ই ডিসেম্বর অনেকেই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন নি।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা বেশি দেখা গেছে। পাশাপাশি জোটের বাইরে আরো ১৩২ আসনে জাতীয় পার্টি প্রার্থী দেয়ায় বিষয়টি আওয়ামী লীগের জন্য বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেন্দ্র থেকে অনেক দেন-দরবার করেও তাদের বশে আনা যায়নি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একাধিকবার সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পরও যেসব প্রার্থী দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রার্থী হবেন তাদের আজীবনের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। পিরোজপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজি। তবে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আশরাফুর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তিনি গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে বিজয়ী হন। পরে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন।
তার ভাই মঠবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রিয়াজ উদ্দিনও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বহাল আছেন। ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন। তবে তাকে চ্যালেঞ্জ করে স্বতন্ত্র তথা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন নান্দাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম। মানিকগঞ্জ-১ আসনে বর্তমান এমপি ক্রিকেটার নাঈমুর রহমান দুর্জয়কে আবার মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে তাকে চ্যালেঞ্জ করে প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবিএম আনোয়ারুল হক। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি তৎকালীন বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে পরাজিত করেছিলেন। এবার স্বতন্ত্র হিসেবে সিংহ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। বিষয়টি দুর্জয়ের মাথাব্যথার বড় কারণ। মেহেরপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী দেয়া হলেও এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী কেতাব আলীও লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচনে লড়ছেন। কুমিল্লা-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন মুরাদনগর উপজেলা যুবলীগ নেতা আব্দুল্লাহ নজরুল। নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার।
গাইবান্ধা-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা বারী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এমদাদুল হক, জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত সাবেক এমপি কর্নেল (অব.) ডা. আব্দুল কাদের খান। লক্ষ্মীপুর-২ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন কুয়েত আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক সহিদুল ইসলাম পাপুল। কক্সবাজার-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন যুব মহিলা লীগের সদস্য তানিয়া আফরীন ও চকরিয়া উপজেলার বিএমচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বদিউল আলম। পটুয়াখালী-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক রেজা। এ ছাড়া টাঙ্গাইলের তিনটি আসনে চারজন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। গত ৮ই ডিসেম্বর শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত চিঠি পাঠানো হয় দলের বিদ্রোহীদের কাছে। সেখানে তিনি বলেন, আপনার কাছে আমার বিশেষ অনুরোধ, ঐক্যবদ্ধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে মহাজোট প্রার্থীর পক্ষে আপনার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে মহাজোটকে বিজয়ী করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করবেন। আপনার ত্যাগ, শ্রম ও আন্তরিকতা সবকিছুই আমার বিবেচনায় আছে।