এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : ধানের শীষের প্রার্থীদের ওপর ক্ষমতাসীনদের অব্যাহত হামলার ঘটনায় নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ড. কামাল হোসেন। দেশের বর্তমান পরিবেশ-পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বানচালের চেষ্টা চলছে বলে আশঙ্কা করে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সংবাদ সম্মেলনে এই আশঙ্কার কথা জানান তিনি। পুরানা পল্টনে জামান টাওয়ারে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের উদ্যোগে নির্বাচনের প্রচারণায় বিভিন্নস্থানে ধানের শীষের প্রার্থীদের ওপর হামলা, গুলিবর্ষণসহ নানা ঘটনা তুলে ধরতেই এই সংবাদ সম্মেলন হয়। ড. কামাল হোসেন বলেন, আশঙ্কা তো আছেই।

নির্বাচনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ হতে দেয়া হবে না- তারা বুঝতে পারছে মানুষের জনমত। আপনারাও এটা জানার চেষ্টা করলে জানতে পারবেন। জনমত কোন্‌ দিকে আছে? সরকারের পক্ষে আছে, না যারা বিরোধী দলের পক্ষে আছে- তা আপনারা জেনে নিন। তিনি বলেন, আমরা শুধু আপনাদের তথ্যগুলো দিচ্ছি।

এ ব্যাপারে (বানচাল) আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। আপনারা দেখুন। ড. কামাল হোসেন বলেন, আজকে বিজয় দিবস। এই বিজয় দিবসের সঙ্গে নির্বাচনেরও কাজ চলছে। আমাদের স্বাধীন দেশের সংবিধানে নির্বাচিত সংসদের বিধান রয়েছে।

দেশের মালিক জনগণ। ১৭-১৮ কোটি মানুষ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবেন নির্বাচনের মাধ্যমে। সেই কারণে নির্বাচনের গুরুত্ব দেয়া হয়। প্রবীণ এ নেতা বলেন, নির্বাচনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ করার জন্য আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। এ ব্যাপারে আপনারা (গণমাধ্যম) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন যাতে স্বাধীনভাবে জনগণ সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনে ভোট দিতে পারে। আপনারা সকলে থাকবেন। নানা ঘটনার অভিযোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, দেখেন- দুঃখজনক হলেও সত্য আপনারাই তথ্য দিচ্ছেন, পত্র-পত্রিকায় দেখছি যে, ভোটারদের ওপর হুমকি দেয়া হচ্ছে। যারা মিছিল করছেন তাদের ওপর আক্রমণ করা হচ্ছে। প্রার্থীদের ওপর আক্রমণ করা হচ্ছে। ভোটের প্রচারণায় প্রার্থীরা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন- এমন ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনার পরে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয় না। এটা কারো খেয়াল-খুশির ব্যাপার নয়।

ড. কামাল বলেন, সংবিধানে আছে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা। যারা নির্বাচনে বাধার সৃষ্টি করে, আক্রমণ করে, অন্যভাবে সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করে এদের বিরুদ্ধে কার্যকর ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা। এটা হলো সংবিধানের কর্তব্য। সেই কর্তব্য পালন করার ব্যাপারে আমরা ঘাটতি দেখছি। অন্যদিকে আমরা দেখছি বিরোধী দলের প্রার্থীদের হয়রানি করা হচ্ছে। অবাক কাণ্ড তারা শিকার হচ্ছেন আক্রমণের, তাদেরকে গ্রেপ্তার করে বন্দি করা হচ্ছে, আর যারা আক্রমণ করছে তারা বহাল তবিয়তে আছে। ড. কামাল বলেন, নির্বাচন সামনে। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে এসব ঘটনা যদি ঘটতে থাকে স্বাভাবিকভাবে আশঙ্কা হবে ভোটের দিন কী হবে? আপনারা সবাই জনগণের হয়ে পাহারা দেবেন ভোটের দিন সেরকম কোনো কিছু যাতে না ঘটে। ভোটাররা যাতে তাদের অধিকার ফিরে পায়, স্বাধীনভাবে যাতে তারা ভোট দিতে পারে, জাল ভোট যাতে না দিতে পারে। আমাদের পাশাপাশি থেকে এসব অবলোকন করতে হবে।

লিখিত বক্তব্যে ড. কামাল বলেন, নির্বাচনের মাঠ পর্যায়ে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আগামী ১৮ই ডিসেম্বর মঙ্গলবারের মধ্যে মাঠে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৩০০ আসনের প্রার্থীরা নানাবিধ বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে পুলিশ ধানের শীষের প্রার্থীদের বাধা দিচ্ছে। পুলিশ কর্মকর্তারা প্রার্থী, কর্মী ও সমর্থকদের শাসাচ্ছে। সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা গুলি করছে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে শাসাচ্ছে। গায়েবি মামলায় প্রার্থীসহ কর্মী-সমর্থকদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় মাঠ পর্যায়ে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ১৮ই ডিসেম্বরের মধ্যে মাঠে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানাচ্ছি।

জেএসডি’র সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, আগামী ৩০ তারিখ নির্বাচন। আর মাত্র ১৩ দিন বাকি। এখন যদি প্রার্থীদের ওপর গুলিবর্ষণ হয়- নোয়াখালীতে মাহবুবউদ্দিন খোকনের ওপর পাঁচটা গুলি করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর স্ত্রী ও সিরাজগঞ্জ-২ আসনের প্রার্থী রুমানা মাহমুদের ওপর গুলি হয়েছে। ঢাকায় সুব্র্রত চৌধুরীর ওপর হামলা হয়েছে। ঢাকা-৮, ঢাকা-৯, ঢাকা-১০ আসন সহ বিভিন্ন আসনে হামলা হয়েছে। আমি উত্তরাতে সেদিন মাজারে গিয়েছিলাম সেখানেও হামলা হয়েছে। রব বলেন, এখন ১৩ দিন আগে যদি গুলি হয় তাহলে এরপরে কী চালাবে? ট্যাংক চালাবে, কামান চালাবে? এ কী অবস্থা? পৃথিবী কোথায়, জাতিসংঘ কোথায়, কমনওয়েলথ কোথায়? আমরা তো মানুষ। একাত্তর সালে বর্বর পাকিস্তানিরাও এরকম ঘটনা ঘটায়নি।

তিনি বলেন, তারা (ক্ষমতাসীনরা) জনগণকে নামতে দেবে না, কর্মীদেরকে নামতে দেবে না, প্রার্থীদেরকে নামতে দেবে না, এটা কী? আমরা তো নির্বাচন করতে চাই। ভয় দেখালে ভয় পাওয়ার লোক আমরা নই। এটা ভয় না- ওরা তো গুলি চালাচ্ছে। আ স ম রব বলেন, আমরা আমাদের কর্মীদেরকে সংযত থাকতে বলেছি। সহনশীল থাকতে হবে, সাহসের সঙ্গে থাকতে হবে। আমরা যদি একবার জনগণকে বলি এই হামলার মোকাবিলা করো, জনগণ যদি মোকাবিলা করতে যায় পরিণতি কী হবে- সেটা একটু চিন্তা করুন। আমি বলতে চাই, আজ জনগণ জয়লাভ করতে চাচ্ছে। জনগণকে যদি জয়লাভ করতে না দেন একাত্তর সালে জনগণ যদি অস্ত্র দিয়ে জবাব দিয়ে থাকে এখন অস্ত্র ছাড়া ব্যালটের মাধ্যমে জনগণ জবাব দেবে। সরকারকে বলবো, এখনো সময় আছে আপনারা সংযত হোন। হামলা-মামলা বন্ধ করুন, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে দিন।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, নির্বাচনে যেসব সহিংসতা হচ্ছে সবকিছু সরকারের মদতে করা হচ্ছে। ওরা সশস্ত্র ও নিরস্ত্র জনগণের ওপর হামলা করছে। আমরা শুধু বলতে চাই, একটা যুদ্ধের মধ্যে আছি। তাদের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে তারা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তাহলে আমরাও যুদ্ধ করবো। ৩০শে ডিসেম্বর আমরা ব্যালটের মাধ্যমে এর জবাব দেবো। ঢাকাসহ সারা দেশে ধানের শীষের প্রার্থীদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার নানা অভিযোগও তুলে ধরেন নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, গণফোরামের কার্যকর সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, জগলুল হায়দার আফ্রিক, নুরুল হুদা মিলু চৌধুরী, বিকল্পধারার অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারী উপস্থিত ছিলেন।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version