এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : ত্বক আপনার শরীরের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। এটি আপনার স্বাস্থ্য সম্পর্কে তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফুসকুড়ি, দাগ, আঘাতে বিবর্ণ হয়ে যাওয়া- এমন অনেক কিছুই আপনার শরীরের সমস্যাগুলোকে ইঙ্গিত করে।
১। আপনি অনেক চাপে আছেন:অফিসের কোনো সমস্যা হোক আর হোক ব্যক্তিগত জীবনের কোনো অবস্থা- আপনি যে আবেগজনিত চাপে আছেন- তা তুলে ধরবে আপনার শরীরের ত্বক।যদি আপনার ত্বকে কোনো ব্রেকআউট স্পষ্ট হয় তবে এটি আপনার খাবার গ্রহণ বা বয়সের কারণে নাও হতে পারে। এটি আসলে হতে পারে আপনার মানসিক চাপের বহিঃপ্রকাশ। ফলে, আপনার জীবনের ওপর যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে তা খুঁজে বের করতে পদক্ষেপ নিন এখনই।
২। ডায়াবেটিসের সংকেত: আপনার নিচের পায়ে গাঢ় দাগ দেখেন তবে মনে করতে পারেন এটি ডায়াবেটিসের সংকেত দিচ্ছে। ডায়াবেটিস ডার্মোপ্যাথি হিসেবে পরিচিত এই দাগ শুরু হতে পারে লাল বা গোলাপি হিসেবে এবং একপর্যায়ে তা পরিণত হয় বাদামি রঙে। শরীরের ডায়াবেটিসের কারণে ত্বকের রক্তনালীতে যে পরিবর্তন হয়, এটি তারই ফল। সুতরাং এ ধরনের দাগ দেখলেই অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৩। যে দাগ ক্যান্সারের লক্ষণ :যদি রোদে যেতে ভালোবাসেন তবে আপনাকে ঘন ঘন ত্বকের ক্যান্সারের সম্ভাবনা পরীক্ষা করতে হবে। যদিও ত্বকের ক্যান্সার কেবল রোদে যাওয়ার কারণ থেকে হয় না; এটি জেনেটিক এমনকি অন্য রোগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও দেখা দিতে পারে। বিভিন্ন ধরনের ত্বকের ক্যান্সার রয়েছে তবে মেলানোমা সবচেয়ে গুরুতর। শরীরে তিল বা আঁচিল থাকলে তার দিকে নজর রাখুন। লক্ষ্য রাখুন এর আকার ও রঙে পরিবর্তন দৃশ্যমান হচ্ছে কি-না।
৪। খুব বেশি সময় রোদে কাটালে :স্কিন ক্যান্সার যে কেবল সূর্যের নিচে দীর্ঘ সময় কাটালে হয় তা নয়। রোদে পোড়া দাগ প্রমাণ করে আপনার শরীরে অনেক বেশি ইউভি রশ্মি প্রবেশ করেছে। রোদের দাগ সাধারণত আপনি কী পরিমাণ সময় সূর্যের নিচে ব্যয় করেছেন তা নির্দেশ করে। প্রারম্ভিক বার্ধক্য এবং ত্বকের ক্যান্সার প্রতিরোধে আপনাকে যা করতে হবে তা হলো ১০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে সূর্যের নিচে থাকলে সর্বদা অন্তত এসপিএফ ৩০ সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।
৫। হজমে সমস্যা এবং এনজাইম ফাংশনের সংকেত:যদি আপনার নিচের ঠোঁটের চারপাশে কোনো দাগ দৃশ্যমান হয় তবে এটি কেবল হরমোনজনিত ব্রণ তা নয়, এর বাইরে অন্য কোনো সমস্যাকে ইঙ্গিত করতে পারে। এটি আসলে হজম সমস্যা এবং এনজাইম ফাংশন সংক্রান্ত সংকেত হতে পারে। এই স্থানে সাধারণত ব্রণ হয় না। সুতরাং দেখতে হবে এটি কীট এবং জীবানু সংক্রান্ত কোনো সমস্যা কি-না।
৬। হরমোন ভারসাম্যহীনতা:আপনার ত্বকে দৃশ্যমান কোনো কিছুর সঙ্গে হরমোনের সম্পর্ক থাকতে পারে। যদি আপনার হরমোন সঠিকভাবে কাজ না করে, বয়ঃসন্ধিকাল, ঋতুস্রাব বন্ধ বা অন্য কোনো কারণে প্রায়ই আপনার ত্বকে লক্ষণ ফুটে ওঠে। ব্রণ, চুল বৃদ্ধি কিংবা চুল পড়া অথবা শুষ্ক ত্বকের লক্ষণও হরমোন ভারসাম্যহীনতার কারণে হতে পারে। যদিও এই সমস্যাগুলো চিকিৎসক ছাড়া নির্ণয় করা কঠিন।
৭। জল শোষণ না হওয়া:পানি আপনার শরীরের স্বাভাবিক ক্রিয়া বজায় রাখতে সাহায্য করে। যখন আপনার শরীর পানি শোষণ না করে আপনার ত্বক এটি প্রদর্শন করবে, ত্বক শুষ্ক ও নিস্তেজ হয়ে পড়বে। যদি ত্বক পানি শোষণ করে তবে সাধারণত কোনো দাগ থাকবে না। যদিও শুষ্ক ত্বক যতটা খারাপ তার চেয়ে বেশি খারাপ শরীরে পানিশূন্যতা। প্রতিদিন যে পরিমাণ পানি পান করা উচিত তার পরিমাণ ব্যক্তি বিশেষে পরিবর্তিত হয় তবে আপনাকে প্রতিদিন প্রায় দুই লিটার পানি পান করতে হবে।
৮। এলার্জি প্রতিক্রিয়া:ফুসকুড়ি, লাল ফোসকা বা ত্বকে এ ধরনের উপসর্গ প্রমাণ করে এটি আপনার এলার্জি প্রতিক্রিয়া। এটি এনাফিল্যাক্সিসের মতো বিপজ্জনক নাও হতে পারে (যা প্রায়শই শ্বাস কষ্টে, চোখ ফুলে যাওয়া ও সম্ভাব্য মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলির কারণ হতে পারে), তবে এটি এমন কিছু নয় যা হালকাভাবে গ্রহণ করা উচিত। যদি আপনি একটি নতুন অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করেন, তবে আপনার শরীরের চারপাশ পরীক্ষা করুন এবং ফুসকুড়ি, লাল ফোসকা কোনো মাদকদ্রব্য গ্রহণ থেকে সৃষ্ট অ্যালার্জি কি-না তা পরীক্ষা করতে ভুলবেন না।
৯। যকৃত রোগের উপসর্গ :যদি আপনার যকৃত সঠিকভাবে কাজ না করে তবে এটি জন্ডিসের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। এ রোগে শরীরের ত্বক ও চোখে হলুদাভা দেখা দেয়। রক্তে প্রচুর পরিমাণে রঞ্জক পদার্থের উপস্থিতি থাকার কারণে ত্বক হলুদ হয়ে যায়। এটি হেপাটাইটিসের লক্ষণ বা শরীরে অপরিমিত অ্যালকোহল প্রবেশের সংকেতও হতে পারে।
১০। ঋতুস্রাব বন্ধের সংকেত: ঋতুস্রাব বন্ধের ফলে অনেক উপসর্গ দেখা দেয়, এর একটি দৃশ্যমান হয় ত্বকে। হরমোনজনিত সমস্যা সামনে নিয়ে আসে ঋতুস্রাব বন্ধের ঘটনা। এটি দৃশ্যমান হয় ত্বক লালচে হওয়ার মধ্য দিয়ে। গরম বোধ করা এবং রাতে ঘাম ঝরাও মেনোপোজ বা ঋতুস্রাব বন্ধের সাধারণ লক্ষণ।