এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : রাজধানী ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনের অধীন নির্বাচনী এলাকার প্রার্থীদের জন্য নৌকা প্রতীকে ভোট চাইলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। শুক্রবার রাজধানীর গুলশান ইয়ুথ ক্লাব মাঠে আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় উত্তর সিটি এলাকার নির্বাচনী আসনগুলোর দলীয় প্রার্থীদেরও পরিচয় করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। উন্নয়ন ও অগ্রগতি ধরে রাখতে নৌকায় ভোট দিয়ে আবারও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন নয় বরং দেশের মানুষের উন্নয়ন করাই মূল লক্ষ্য। ধানের শীষ মানেই দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং, এতিমের অর্থ আত্মসাৎ। আর নৌকা মার্কা মানে মানুষের কল্যাণ হওয়া, উন্নয়ন। তাই আপনারা আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জনগণের সেবা করার সুযোগ দিন। আমরা আপনাদের সেবায় নিয়োজিত থাকবো।

দীর্ঘদিন পর দেশের কূটনৈতিক জোন হিসেবে পরিচিত এ এলাকায় রাজনৈতিক দলের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলো। এর আগে বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে তিনি সভাস্থলে পৌঁছান।

বক্তব্যর শেষদিকে তিনি প্রার্থীদের কাছে ডেকে তাদের পরিচয় করিয়ে দেন। এ সময় ঢাকা-১৭ আসনে নৌকার প্রার্থী আকবর হোসেন পাঠান ফারুক, ঢাকা-১১ আসনের একেএম রহমতউল্লাহ, ঢাকা-১২ আসনের আসাদুজ্জামান খান কামাল, ঢাকা-১৩ আসনের সাদেক খান, ঢাকা-১৪ আসনের আসলামুল হক আসলাম, ঢাকা-১৫ আসনের কামাল আহমেদ মজুমদার, ঢাকা-১৬ আসনের মো. ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা ও ঢাকা-১৮ আসনের এডভোকেট সাহারা খাতুন ছাড়াও দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১ আসনের প্রার্থী সালমান এফ রহমানকে উপস্থিত জনতার সামনে পরিচয় করে দিয়ে তাদের জন্য ভোট প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন, নৌকা মার্কা উন্নতি, সমৃদ্ধি। নৌকা মার্কা জনগণের স্বাধীনতা, নৌকা মার্কা মানে জনগণের ভাগ্যকে উন্নীত করা। নৌকা মার্কা মানে এদেশের মানুষের কল্যাণ হওয়া, যা চির জীবন দেশবাসীর প্রাপ্য। কাজেই এটা বিবেচনা করে আমি আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই।

এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে সেবা করার সুযোগ দিয়েছে বলেই মানুষের জীবনের আয় রোজগার বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি। দেশের অর্থনীতি আরও উন্নত হবে। বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করাই আমাদের লক্ষ্য। নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে আসি নাই। আমরা সরকার পরিচালনা করি মানুষের জন্য। বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে মর্যাদাপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলাই ছিল আমাদের লক্ষ্য। আজকের বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে রোল মডেল। বাংলাদেশের মানুষ সুস্থভাবে বাঁচবে সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ঢাকার নাগরিক সুবিধা বাড়ানোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতিটি এলাকায় বিশেষায়িত হাসপাতাল করে দিয়েছি। ঢাকায় বস্তির মধ্যে অনেক মানুষ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করে।

আমরা এমন ব্যবস্থা নিচ্ছি যাতে আর তারা এভাবে থাকবে না। ফ্ল্যাটে থাকবে তারা। স্বল্প আয়, নিম্ন আয়ের মানুষ যাতে সুন্দরভাবে বসবাস করতে পারে সে ব্যবস্থা করে দেবো। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ঢাকার নাগরিক সুবিধা বাড়াতে মেট্রোরেল হচ্ছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেস হবে। পাতাল ট্রেন করে দেবো। এসব নিয়ে কাজ চলছে। গুলশান-বনানী থেকে শুরু করে সমগ্র ঢাকার উত্তরণ বিশেষ করে যেসব ইউনিয়ন ছিল সেগুলোকে ঢাকা সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সংযুক্ত করে দিয়েছি। মানুষ যাতে নাগরিক সুবিধা পায় সেজন্য বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছি । প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৫ বছর দেশে আসতে পারিনি। আমাকে জিয়াউর রহমান দেশে আসতে দেননি। আমি ক্ষমতায় এসে দেশের উন্নয়ন শুরু করেছি। আমি চেয়েছি এদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন এদেশের উন্নয়ন করতে। আমি সে সব স্বপ্নই বাস্তবায়ন করতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। আজকে বাংলাদেশ মানে পিছিয়ে পড়া দেশ নয়। আজকে আগের অবস্থা নেই। ২০০৮ এর নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে এই ঢাকা শহরে পানির অভাব, বিদ্যুতের সঙ্কট দূর করেছি । আগে ছিলো লোডশেডিং, এই আসে যায়। আজকে প্রত্যেকটা এলাকায় হাসপাতাল করে দিয়েছি।

বিশেষায়িত হাসপাতাল করে দিয়েছি। এই ঢাকায় যারা বস্তিবাসী আছেন তাদের জন্য বহুতল ভবন করে দেবো। তারা সেখানে থাকতে পারবেন, চাইলে ভাড়া দিতে পারবেন। তিনি বলেন, আজকে সকলের হাতে মোবাইল ফোন। এটা আমরা দিয়েছি। আগে প্রতি মিনিট ছিলো ১০ টাকা, তা কমিয়ে দিয়েছি। মেট্রোরেল, পাতাল রেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আমরা করেছি। ঢাকা সিটিকে আমরা দুইভাগে ভাগ করে দিয়েছি যাতে মানুষ নাগরিক সুবিধা পায় সে কারণে। বাংলাদেশ আজ পিছিয়ে পড়া দেশ নয়, এগিয়ে গেছে। জঙ্গিবাদ দমন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এই গুলশানে যখন হলি আর্টিজানে হামলা হলো, সবাই ধারণা করেছিল এর কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাবে না। কিন্তু মাত্র ৮ থেকে ৯ ঘণ্টায় আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। এরপর থেকে আমরা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি। এ সময় শেখ হাসিনা আরও বলেন, একসময় বাংলাদেশকে খরা, দুর্ভিক্ষ, দুর্যোগ, অভাবের দেশ বলা হতো। যারা বিদেশ যেতেন তাদের সেই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হতো। তবে সেই বদনাম আর নাই।

আজকে আর কারও কাছে হাত পেতে আমাদের চলতে হয় না। বাংলাদেশ আজ ভিক্ষুকের দেশ না। নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখেছে। গত ১৮ই ডিসেম্বর প্রকাশিত আওয়ামী লীগের ইশতেহারে বাংলাদেশকে আরও সমৃদ্ধি এনে দেয়ার প্রতিশ্রুতির কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ঘোষণা দিয়েছি, দুর্নীতি দূর করবো। মানুষের কল্যাণে কাজ করবো। মানুষের উন্নয়ন করবো। দেশের শান্তি নিরাপত্তার জন্য, দুর্নীতি দমন করার জন্য নৌকা মার্কায় ভোট চাই। আগামী ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও পরে ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবে বাংলাদেশ। সেই উদযাপন সামনে রেখে সরকার ইতিমধ্যে ২০২০ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ‘মুজিববর্ষ’ ঘোষণা করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, সেই সুবর্ণজয়ন্তী আমরা তখনই পালন করতে পারবো, যখন নৌকা মার্কায় ভোট পেয়ে আমরা সরকার গঠন করে জনগণের সেবা করতে পারব। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, নৌকার পালে হাওয়া লেগেছে, আজকে যে জোয়ার উঠেছে, ইনশাআল্লাহ্‌ নৌকার জয় হবে। সরকার গঠন করে এদেশের মানুষের সেবা করবো, মানুষকে উন্নত জীবন দেবো, আজ এ ওয়াদা রেখে যাচ্ছি। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে কড়া নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সকাল থেকে অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা দুপুরের মধ্যেই মিছিল নিয়ে মাঠে এসে উপস্থিত হন।

ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি একেএম রহমতুল্লাহর সভাপতিত্বে জনসভায় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, এডভোকেট সাহারা খাতুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, ঢাকা-১৭ আসনের প্রার্থী আবকর হোসেন পাঠান (ফারুক), বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম, মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, ঢাকা-১৭ আসনের প্রার্থী ইলিয়াছ উদ্দিন মোল্লা প্রমুখ নেতারা বক্তব্য রাখেন।

এদিকে নির্বাচনী গণসংযোগের অংশ হিসেবে আজ ২২শে ডিসেম্বর সিলেটে মাজার জিয়ারত করে আলিয়া মাদ্‌রাসা মাঠে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দেবেন শেখ হাসিনা। আগামীকাল তিনি যাবেন রংপুর। সকালে রংপুর-২ নির্বাচনী এলাকায় (তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জে) একটি জনসভায় অংশ নিয়ে পরে দুপুরে পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জনসভায় তার অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া আগামী ২৪শে ডিসেম্বর বেলা ১১টায় কামরাঙ্গীরচর মাঠে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দেবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version