এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : নির্বাচন থেকে সরে আসতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সর্বশেষ দুই দিনের আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। বেশিরভাগ আসনেই নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়ে গেছেন তারা। গতকাল পর্যন্ত হাতেগোনা কয়েক বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচন
থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। প্রায় অর্ধশত বিদ্রোহীর জায়গায় এখন আছেন ৪০ জনের মতো। এসব বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে বিপাকে আওয়ামী লীগ। নানাভাবে বোঝানোর পরও অনেকে তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। উল্টো দলের মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে তারা নির্বাচনী এলাকায় প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছে।
এ ছাড়া মহাজোটের শরিক দলগুলোর পক্ষ থেকে বারবার আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের কাছে বিষয়টি তুলে ধরছে। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ দলীয় বিদ্রোহীদের কারণে তারা নির্বাচনী এলাকায় সুবিধা করতে পারছেন না। এসব কারণে শেষ পদক্ষেপ হিসেবে তাদের চূড়ান্ত আল্টিমেটাম দেয়া হয়।
আওয়ামী লীগ জানিয়েছে, ১৭ই ডিসেম্বর ছিল আল্টিমেটাম শেষ হওয়ার দিন। তাই এখনো যারা নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে দল। কয়েক দিনের মধ্যেই তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হবে। এরপর বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। দলের সভাপতি বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছেন। এদিকে দলের আল্টিমেটামের মুখে ফেনী-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল বাশার মহাজোট প্রার্থী ও জাপা নেতা মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। বুধবার সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তিনি এ ঘোষণা দেন। ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম। দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে তিনি প্রথম কয়েক দিন বেশ জোরালো প্রচার শুরু করেন। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রতি খোলা চিঠি দেয়ার পর তার সমর্থকরা আওয়ামী লীগ প্রার্থী আনোয়ারুল আবেদীন খানের পক্ষে কাজ শুরু করেন।
এর পরই তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। ওদিকে আজীবন বহিষ্কারের খড়গ মাথায় নিয়ে চট্টগ্রামসহ আরো কয়েকটি আসনে ভোটের মাঠে প্রচার চালাচ্ছেন বেশ কয়েক বিদ্রোহী। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি আসনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান এমপি ও তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী। কিন্তু তাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে এখানে স্বতন্ত্র হিসেবে ভোটের মাঠে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এটিএম পেয়ারুল ইসলাম। কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হচ্ছেন গতবারের এমপি আশেক উল্লাহ রফিক। কিন্তু এ আসনে তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে আছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ড. আনসারুল করিম। ফেনী-১ (পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া) আসনে মহাজোটের শরিক দল জাসদের প্রার্থী শিরীন আখতারকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ভোটের মাঠে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খায়রুল বশর তপন ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শেখ আবদুল্লাহ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে মহাজোট থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়া হয়েছে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে। চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এখানে স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করবেন মইন উদ্দীন মইন। তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি। আজীবন বহিষ্কারের হুমকিকে আমলে না নিয়ে ভোটের মাঠে জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনিও। গত ১৫ই ডিসেম্বর দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক সংবাদ সম্মেলন করে বিদ্রোহীদের দুই দিনের আল্টিমেটাম দেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের প্রার্থীর বিরুদ্ধে এখনো যারা বিদ্রোহী হিসেবে ভোটের মাঠে রয়েছেন তাদের দুইদিনের মধ্যে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হবে। আর এ সময়ের মধ্যে তা প্রত্যাহার না করলে সাংগঠনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বা মহাজোটের কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী নাই। কিছু স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে। এটা দেড় ডজন নয় আরো অনেক কম। তিনি বলেন, নির্বাচনের মাঠে এখনো নিজ দল আওয়ামী লীগ বা মহাজোটের প্রার্থীর বিরুদ্ধে যারা এখনো রয়েছেন তাদের ১৭ই ডিসেম্বরের মধ্যে সরে দাঁড়াতে হবে এবং সরে দাঁড়ানোর বিষয়টি জানাতে সংবাদ সম্মেলন করতে হবে মহাজোটের এসব বিদ্রোহী প্রার্থীকে। তাদের অবশ্যই আওয়ামী লীগ বা মহাজোটের প্রার্থীর স্বপক্ষে ভোটের মাঠে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। নতুবা আমরা সাংগঠনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেবো।
দলের পক্ষ থেকে তার দেয়া ওই আল্টিমেটাম শেষ পর্যন্ত মানেন নি অনেকে। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে খোলা চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে মনোনয়ন না পাওয়া প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হয়েছে। বারবার তাদের এবারের নির্বাচনের গুরুত্ব বোঝানো হয়েছে। দলের শীর্ষ পাঁচ নেতাকে বিদ্রোহীদের নিবৃত্ত করার দায়িত্বও দেয়া হয়। কয়েকজনকে ঢাকায় ডেকে এনেও বোঝানো হয়। এমনকি দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাও কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলেন।