এশিয়ান বাংলা, রংপুর : আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই দেশের উন্নয়ন হয়। মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। আওয়ামী লীগ দেশে যে উন্নয়নের ধারা সূচনা করেছে তা অব্যাহত রাখতে আবারো নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করতে হবে। গতকাল রংপুর ও দিনাজপুরে পৃথক নির্বাচনী জনসভায় দেয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। রংপুরের পীরগঞ্জে আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা দুর্নীতির দায়ে সাজা নিয়ে জেলে আছে, পলাতক আছে, তাদের হাতে ক্ষমতা গেলে দেশের কোনো কাজ হবে না, উন্নয়ন হবে না। নৌকার পালে হাওয়া লেগেছে। নৌকার বিজয় হবেই। আমি আপনাদের কাছে ভোট চাইতে এসেছি।

আপনারা নৌকায় ভোট দিন। আমরা উন্নয়ন দেব, সমৃদ্ধি দেব। আপনাদের জীবনমান উন্নত করে দেব।

জনসভায় তিনি রংপুর-৪ পীরগাছা-কাউনিয়া আসনে টিপু মুন্সি, রংপুর-৫ আসনে এইচ এন আশিকুর রহমান ও রংপুর-৬ পীরগঞ্জ আসনে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে নৌকা মার্কায় ভোট চান। পীরগঞ্জে আওয়ামী লীগের প্রার্থী স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর হাত উঁচু করে ধরে তিনি বলেন, এই যে আমার মেয়েকে আপনাদের সামনে তুলে দিচ্ছি। শিরীন নির্বাচিত হলে তাকে আমরা আবারও স্পিকার করতে পারব। শিরীন যেভাবে আপনাদের জন্য কাজ করছে আমি হলে অতোটা পারতাম না। কারণ, আমার সারা দেশ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে কাজ করতে হয়। পীরগঞ্জে এমপি থাকবে শিরীন আর আমি আপনাদের পুত্রবধূ পীরগঞ্জে শিরীনের মাধ্যমে উন্নয়নগুলো দেখবো।

তিনি বলেন, পীরগঞ্জের ব্যাপক উন্নয়ন এরই মধ্যে আমরা করেছি। পীরগঞ্জের আরো উন্নয়নের জন্য আমি একটা মাস্টারপ্ল্যান করতে বলেছি। আজকে আমার করা ব্রিজের ওপর দিয়ে এখান থেকে আমি দিনাজপুর যাব। এভাবে সারা বাংলাদেশের উন্নয়ন করেছি আমরা। আগামী নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনে আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন। পীরগঞ্জে আপনারা আমাকেই ভোট দেবেন। পীরগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট তাজিমুল ইসলাম শামীমের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, চিত্র নায়ক ফেরদৌস, নায়িকা পূর্ণিমা, টিভি অভিনেতা তারিন জাহানসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।
এর আগে বিমানযোগে সৈয়দপুরে এসে প্রধানমন্ত্রী সড়ক পথে তারাগঞ্জে আসেন। বেলা সাড়ে ১২টায় তারাগঞ্জ বাজারে এলে মানুষ স্লোগান দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রীও হাত নেড়ে সাড়া দেন। তারাগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে ৮ মিনিটের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী তার শাসনামলে নানা উন্নয়ন তুলে ধরেন ও নৌকায় ভোট চান। উপস্থিত মানুষ হাত উঁচিয়ে নৌকায় ভোট দেবার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। এ সময় বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউককে পরিচয় করিয়ে দেন।

এদিকে দিনাজপুরে পৃথক পাঁচটি নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। বিরামপুর, ফুলবাড়ী উপজেলা, দিনাজপুর শহর, কাহারোল ও চিরিরবন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত পৃথক পথ সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ বারবার নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই তার সরকারের পক্ষে এসব উন্নয়ন সাধন করা সম্ভব হয়েছে। নৌকা যখন ক্ষমতায় আসে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। তাই নৌকা মার্কায় ভোট চাই।

তিনি এ সময় তার আগামী সরকারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরে বলেন, একটি মানুষও অনাহারে থাকবে না। আমার একটাই লক্ষ্য, আপনারা ভালো থাকবেন, দু’বেলা পেট ভরে ভাত খাবেন, ছেলেমেয়ে লেখাপড়া শিখবে, সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে।
রংপুরের পীরগঞ্জ হয়ে সড়ক পথে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার ঢাকা মোড়ে থামেন। সেখানে ৩ মিনিটের নির্বাচনী পথ সভায় ভাষণ দেন। সন্ধ্যা ৫টা ৫০ মিনিটে ফুলবাড়ী উপজেলার নিমতলা মোড়ে ৫ মিনিটের নির্বাচনী পথ সভায় ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিনাজপুর শহরের নিমনগর ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড মোড়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনী পথ সভায় সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে যোগ দেন। সেখানে তিনি ৭ মিনিট ভাষণ দেন। এ ছাড়াও তিনি কাহারোল উপজেলার দশ মাইল এবং চিরিরবন্দর উপজেলার রানীবন্দর বাহাদুর বাজার এলাকায় সংক্ষিপ্ত নির্বাচনী পথ সভায় ভাষণ দেন। শেষে রাতে তিনি সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে বিমানযোগে ঢাকায় ফিরেন।

পৃথক পৃথক নির্বাচনী পথ সভায় তিনি নৌকার প্রার্থী দিনাজপুর-৩ সদর আসনের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি, দিনাজপুর-৫ (পাবর্তীপুর-ফলবাড়ী) আসনের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, দিনাজপুর-৪ (চিরিরবন্দর-খানসামা) আসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ এমপি, দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহারোল) আসনের মনোরঞ্জনশীল গোপাল এবং দিনাজপুর-৬ (বিরামপুর-নবাবগঞ্জ-ঘোড়াঘাট ও হাকিমপুর) আসনের শিবলী সাদিক এমপিকে বিজয়ী করার আহ্বান জানিয়ে তাকে জনগণের হাতে সোপর্দ করেন। তিনি উপস্থিত সকলের কাছে নৌকায় ভোট প্রদানের প্রতিশ্রুতি চাইলে জনগণ দু’হাত তুলে তাতে সম্মতি জানায়।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় তার নির্বাচনী মহাজোটের উল্লেখ করে যেসব স্থানে মহাজোটের প্রার্থী রয়েছে সেসব আসনের জনগণকে মহাজোটের প্রার্থীকেও ভোট দেয়ার আহ্বান জানান। এ সময় তিনি দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চল আরো উন্নয়ন করার প্রতিশ্রুতি দেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একনজর দেখতে রাস্তার দু’ধারে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল বহু মানুষ। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা এ সময় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার মেয়ে শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন, জাতীয় পতাকা, দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে স্লোগানে স্লোগানে দলীয় প্রধানকে স্বাগত জানান।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version