এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : সুনামির আঘাতে লন্ডভন্ড ইন্দোনেশিয়া। এতে কমপক্ষে ২২২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন সহস্রাধিক। ইন্দোনেশিয়ার সানদা প্রণালীতে শক্তিশালী সুনামির আঘাতে ধসে গেছে অসংখ্য ঘরবাড়ি। বহু মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে দিশেহারা। যতদূর চোখ যায়, শুধু ধ্বংসস্তূপ। শনিবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৯ টার দিকে সুনামি আঘাত হানে ওই এলাকায়। এরপর সেখানে উদ্ধার অভিযান চলছে।

জীবিতদের সন্ধানে হন্যে হয়ে অভিযান চালাচ্ছে উদ্ধারকর্মীরা। অন্যদিকে স্বজনহারাদের কান্নায় পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে। দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কর্তৃপক্ষ বলছে, সুনামিতে শত শত ভবনের ক্ষতি হয়েছে। তাদের ধারণা, ক্রাকাতোয়া আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুতপাতের পরে সমুদ্রের তলদেশে ভূমিধস হয়েছে। এর ফলেই ওই সুনামি হয়ে থাকতে পারে। পান্ডেগলাং, ল্যাম্পুং ও সেরাং অঞ্চলে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তবে ইন্দোনেশিয়া থেকে বিবিসির সাংবাদিক রেবেকা হেনশকে বললেন, শুধু ল্যাম্পুং প্রদেশেরই নিহতের সংখ্যা কয়েক শত হতে পারে। তবে নতুন করে কোনো ভূমিকম্পনের সতর্কতা দেয়া হয় নি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব ফুটেজ শেয়ার দেয়া হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে অবকাশ যাপনের স্থানগুলোতে একটি তাঁবুতে আঘাত করছে বিশাল এক ঢেউ। ওই স্থানে পারফরম করছিল ইন্দোনেশিয়ায় ভীষণ জনপ্রিয় একটি ব্যান্ড, যার নাম সেভেনটিন। অকস্মাৎ সুনামি আঘাত হেনে তাদের মঞ্চটি ভাসিয়ে নিয়ে যায়। ফলে ওই ব্যােিন্ডর সদস্যদেরকে আর দেখা যায় নি। ধারণা করা হচ্ছে, তাদেরকে ভাসিয়ে সমুদ্রের গহ্বরে টেনে নিয়েছে সুনামি। ইন্সটাগ্রামে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, তাদের বেসিস্ট ও রোড ম্যানেজার মারা গেছে বলে জানাচ্ছেন গায়ক রাইফিয়ান ফাজারসিয়াহ। ব্যান্ডের আরো তিনজন সদস্য ও রাইফিয়ান ফাজারসিয়াহর স্ত্রী নিখোঁজ রয়েছেন। উদ্ধার অভিযানে নেমেছে রেডক্রম। তারা একটি ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়াদের উদ্ধারে কাজ করছে।
সুনামির সময়ে পশ্চিম জাভার আনিয়ার সমুদ্রসৈকতে উপস্থিত ছিলেন নরওয়ের আগ্নেয়গিরি বিষয়ক ফটোসাংবাদিক ওয়িস্টেন লুন্দ অ্যান্ডারসন। তিনি ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে: আমার পরিবার রুমে ঘুমাচ্ছিল। তখন একা একাই আমি সমুদ্র সৈকতে গিয়েছিলেন। ক্রাকাতোয়া আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুতপাত ক্যামেরাবন্দি করার চেষ্টা করছিলাম। শনিবার সন্ধ্যার শুরুতে বড় রকমের অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়। এর পরপরই সৈকতে আছড়ে পড়তে থাকে বিশাল বিশাল ঢেউ। তখন এ বিষয়ে কোন তৎপরতা ছিল না। কারণ, তখন রাত হয়ে গেছে। অকস্মাৎ দেখতে পাই পাহাড়ের সমান উঁচু ঢেউ ছুটে আসছে পাড়ের দিকে। তা দেখে আমাকে দৌড়াতে হয়। দুটি ‘ওয়েভ’ বা ঢেউ আছড়ে পড়ে। প্রথমটি ভীষণ শক্তিশালী ছিল না। আমি দৌড়ে পালাতে পেরেছি। সোজা দৌড়ে হোটেলরুমে গিয়েছি। স্ত্রী ও সন্তানকে ডেকে তুললাম। তখন শুনতে পেলাম বিকট আকারের একটি ‘ওয়েভ’ ধেয়ে আসছে উপকূলে। যখন দ্বিতীয় ওয়েভটা আঘাত করলো জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখলাম তা।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version