এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : ইন্দোনেশিয়ায় সমুদ্রের মধ্যে আগ্নেয়গিরির একটি অংশ ধসে সৃষ্ট সুনামিতে মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৪২৯ জনে পৌঁছেছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

আহতের সংখ্যা এক হাজার ৪৫৯ এবং নিখোঁজ রয়েছে ১৫০ জন। নিখোঁজদের সন্ধানে দক্ষিণ সুমাত্রার দক্ষিণ লাম্পাং, সেরাং ও প্যানদেলাংয়ের উপকূলীয় অঞ্চলজুড়ে ব্যাপক উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে উদ্ধারকর্মীরা। নিখোঁজদের জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তা সত্ত্বেও বাড়ানো হচ্ছে উদ্ধার অভিযানের পরিধি।

অভিযান ত্বরান্বিত করতে মঙ্গলবার সকাল থেকে ড্রোনের মতো আরও আধুনিক প্রযুক্তি এবং প্রশিক্ষিত কুকুর ব্যবহার করা হচ্ছে। স্থানীয় উদ্ধারকারীদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইন্দোনেশিয়ার সেনাবাহিনীও।

যারা সুনামির তাণ্ডব থেকে কোনোক্রমে বেঁচে গেছে, তারা এখন হাসপাতালগুলোর বিছানায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। ভুক্তভোগীদের মধ্যে নারী ও শিশুদের সংখ্যাই বেশি। আশ্রয়শিবিরগুলোতে গাদাগাদি করে অবস্থান কয়েক হাজার অধিবাসীর। সেখানে পর্যাপ্ত খাবার নেই, ওষুধ নেই, নেই পানযোগ্য পানি। খাদ্য ও পানির জন্য একরকম হাহাকার চলছে। এক অমানবিক পরিস্থিতির মধ্যে গণস্বাস্থ্য সংকটের মুখে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার রয়টার্স ও এএফপির প্রতিবেদনে সুনামি-পরবর্তী সুমাত্রা ও জাভা উপকূলের এ চিত্র উঠে এসেছে।

শনিবার রাতে সুনামির দুটি বিশাল ঢেউ সুমাত্রা ও জাভা দ্বীপের উপকূলীয় শহরগুলো গুঁড়িয়ে দেয়। এতে ধ্বংস হয়েছে ৭শ’র বেশি বাড়ি, ছোট ছোট দোকান, ভিলা এবং অনেক হোটেলও। ধ্বংসস্তূপে রাস্তাগুলো বন্ধ হয়ে থাকায় উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হচ্ছে, তবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে হাতহতদের খোঁজে তল্লাশি অভিযানে সহায়তা করতে ভারী ক্রেন পাঠানো হচ্ছে।

আনাক ক্রাকাতোয়া আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ফের সুনামি সৃষ্টি করতে পারে আশঙ্কায় এর নিকটবর্তী উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক করে সৈকত থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। এসব এলাকা থেকে অন্তত ১২ হাজার অধিবাসীকে আশ্রয়শিবিরে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। অস্থায়ীভাবে নির্মিত বেশ কিছু আশ্রয়শিবিরের গাদাগাদি করে অবস্থান করছে তারা। এএফপি জানায়, মঙ্গলবার প্রথমবারের জন্য সুনামিকবলিত উপকূল এলাকায় বহুল কাঙ্ক্ষিত ত্রাণ-সামগ্রী পৌঁছায়। সেগুলো এখন আশ্রয়শিবিরের আশ্রয় নেয়া ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে। তবে ত্রাণকর্মীরা হুশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই বিশুদ্ধ পানি ও জীবন রক্ষাকারী ওষুধের সরবরাহ শেষ হয়ে যাবে।

হতাহতদের সংখ্যা বাড়ায় গণস্বাস্থ্যের সংকট তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ডাক্তার ও চিকিৎসা কর্মীরা। আকসি সেপাট তেংগাপ নামে এনজিওতে কর্মরত ডাক্তার রিজাল আলিমিন। এই মুহূর্তে স্থানীয় একটি স্কুলে প্রতিষ্ঠিত অস্থায়ী আশ্রয়শিবিরের কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘বেশ কিছু শিশু জ্বর ও মাথাব্যথা ভুগছে। কিন্তু তাদের কোনো ওষুধ বা বিশুদ্ধ পানিও নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য এই জায়গাটা স্বাস্থ্যকর নয়। এই তীব্র শীতেও তাদের মেঝের ওপরেই ঘুমাতে হচ্ছে। এছাড়া আমাদের কাছে প্রয়োজনের চেয়ে কম ওষুধ রয়েছে। খাবার ও পানিও পর্যাপ্ত নেই।’
ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার মুখপাত্র সুতোপো পুরও নুগরোহো এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, আনাক ক্রাকাতোয়া থেকে অগ্ন্যুৎপাত অব্যাহত থাকায় আরেকটি সুনামি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version