এশিয়ান বাংলা, সিলেট : ড. মোমেনের প্রশ্নের জবাবে ক্ষোভ জানালেন খন্দকার মুক্তাদির। বললেন, ‘ক্যাম্পেইন করছি, আবার মামলারও মোকাবিলা করছি।’ গতকাল সকালে সিলেট নয়াসড়কের খ্রিষ্টান মিশনে দেখা হয় সিলেট-১ আসনের প্রধান দুটি জোটের দুই প্রার্থীর। পাশাপাশি বসার পর তাদের মধ্যে কথার ফাঁকে বিএনপি প্রার্থী খন্দকার আবদুল মুক্তাদির এই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তবে, আগ বাড়িয়ে প্রশ্ন করেছিলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ড. একে আবদুল মোমেন।
পরে সাংবাদিকদের কাছে এ বিষয়টি জানান খন্দকার অবদুল মুক্তাদির। তিনি জানান, ‘আমাকে উনি জিজ্ঞেস করলেন, ক্যাম্পেইন ভালো চলছে কী না? জবাবে আমি বলি, ক্যাম্পেইন করছি, সঙ্গে সঙ্গে আপনাদের দেয়া মামলাগুলোও মোকাবিলা করছি। তখন তিনি বলেন, মামলা হচ্ছে কেবল ক্রিমিনালদের বিরুদ্ধে। এ সময় একজন বিএনপি নেতা এসে তার সঙ্গে করমর্দন করেন।
তখন আমি উনাকে বলি, আপনি এখন যার সঙ্গে করমর্দন করলেন তিনিও একজন ক্রিমিনাল। তার বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে।’ এ সময় মুক্তাদির আরো বলেন, ‘এভাবে তারা সব বিরোধী নেতাকর্মীদের ক্রিমিনাল মনে করে। জনগণকেও ক্রিমিনাল মনে করে। নানা মামলা-হামলা সত্ত্বেও জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। এতে ভয় পেয়েই তারা এরকম আচরণ করছে। তবু ৩০ তারিখের ভোটে আমাদের বিজয় অনিবার্য।’
পরে ড. মোমেন ও খন্দকার মুক্তাদির দুইজনই এক সঙ্গে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বড়দিনের উৎসবে যোগ দেন। এ সময় তারা দুইজন বড়দিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। পরে তারা বড়দিনের কেকও এক সঙ্গে কাটেন। এ সময় তাদের দু’জনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। আর ড. মোমেনের পাশে ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। এ ছাড়া সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ। কেক কেটে ড. মোমেন মুক্তাদিরের মুখে কেকের এক টুকরো তুলে দিতে চাইলেও মুক্তাদির সাড়া দেননি। এর কারণ হিসেবে তিনিবলেন, চাকু দিয়ে কেক মুখে নেন না। তবে, মেয়র আরিফ কেক মুখে নেন। আবার তিনি তুলেও দেন।
সিলেটে ভোটের মাঠে সম্প্রীতির বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে সবাই। আগেও সিলেটে এভাবেই সম্প্রীতি বিরাজমান ছিল। মাঠে যুদ্ধ হলেও সম্প্রীতিতে এগিয়ে ছিল রাজনৈতিক দলগুলো। তবে, অনুষ্ঠান শেষে খন্দকার আবদুল মুক্তাদির হাসিখুশি আলাপচারিতাকে ‘মেকি’ সমপ্রীতি হিসেবেই অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ক্যামেরার সামনে ছবি তোলাকে সৌহার্দ্য-সমপ্রীতি বলতে পারেন। তবে, এই সৌহার্দ্য মেকি। এতে আন্তরিকতা নেই। গত তিন রাতে এসএমপির পাঁচ থানায় পাঁচটি মামলা হয়েছে। আমার শতশত নেতাকর্মী আসামি। সুতরাং এটি মেকি সম্প্রীতি ছাড়া আর কিছু হতে পারে।
আর অনুষ্ঠান শেষে বেরিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ড. একে আবদুল মোমেনও প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী খন্দকার আবদুল মুক্তাদিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছুড়েছেন। বলেছেন, ‘আমাদের দপ্তর, আমাদের মাইক ভেঙেছে। প্রচার কাজে ব্যবহৃত গাড়ি ভেঙেছে। তবু আমরা আমাদের সব সমর্থকদের একটাই কথা বলেছি, তারা (বিএনপি) কষ্টে আছেন। তারা ভাবছেন নিশ্চিত পরাজিত হয়ে গেছেন। তাই হিংসা থেকে এসব করছেন। তবে, তাদের হিংসার বিরুদ্ধে সহিংসতা দেখাচ্ছি না। আমাদের সমর্থকরাও এই হিংসার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অ্যাকশন নেয়নি। আমরা কেবল পুলিশকে জানিয়েছি। নিরাপত্তাবাহিনী তাদের কাজ করবে। আমরা পুলিশকে কোনো প্রভাবিত করছি না।’ তিনি বলেন, ‘এখানে আমাদের প্রতিপক্ষ নির্বিঘ্নে ভোট প্রচারণা চালাচ্ছেন। কোথাও কোনো বাধাগ্রস্ত আমাদের দ্বারা হচ্ছে না। কিন্তু তাদের মজ্জাগত অভ্যাস নালিশ করা। তাদের নেত্রীও এটা করেন। গত সিটি নির্বাচনেও এটি করেছিলেন। তবু তখন তারা জয় পান। আমি জানি না এটি তাদের কৌশল কী না, এরমাধ্যমে তারা কিছু জনসমর্থন পান কী না। তবে, আমরা এসবে নেই। আমরা সবসময় সাদাকে সাদা ও কালাকে কালা বলি।’