এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে নয়টি দেশীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমতিপত্র বাতিলের জন্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে দাবি জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। সংস্থাগুলো হলো ডেমোক্রেসি ওয়াচ, খান ফাউন্ডেশন, লাইট হাউজ, বাংলাদেশ মানবাধিকার সমন্বয় পরিষদ, জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন, নবলোক, কোস্টট্রাস্ট, শরীয়তপুর ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি ও নোয়াখালী রুরাল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি। জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় নির্বাচনের বিভিন্ন তথ্যাদি জানাতে স্থাপিত মিডিয়া সেন্টারের উদ্বোধনকালে এ কথা জানান। তিনি বলেন, আমরা দুইবার লিখিতভাবে ইসিকে (নির্বাচন কমিশন) জানিয়েছি আমাদের আপত্তির কথা।

এ সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী সংসদের সদস্য আকতারুজ্জামান, উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের মোহাম্মদ এ আরাফাতসহ সিনিয়র সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এইচটি ইমাম বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)’র ৯১/সি ধারা লঙ্ঘন করে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত অথবা তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশের প্রতি সমর্থনকারী ও সহানুভূতিশীল ১১টি স্থানীয় সংস্থাকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমতি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, তার মধ্যে ৯টি সংস্থা ১৪০টি সংসদীয় আসনে মোট ৬৫৮৫ জন পর্যবেক্ষককে পাঠাচ্ছে। যারা প্রায় সকলেই বিএনপি-জামায়াতের সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী। এই নির্বাচন নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই এটি করা হয়েছে।

বিদেশি পর্যবেক্ষক সংস্থা আনফ্রেলের বিষয়ে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক সংস্থা আনফ্রেলের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের প্রতিনিধি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের ডেপুটি এটর্নি জেনারেল আদিলুর রহমান শুভ্র। তিনি সরাসরি বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি বলেন, শুভ্র আনফ্রেলের পরিচালনা পর্ষদেরও সদস্য। তা সত্ত্বেও যাচাই বাছাই করে আনফ্রেলের ৬ পর্যবেক্ষককে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমতি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনে সেনাবাহিনী নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেনের বিবৃতির কথা উল্লেখ করে এইচ টি ইমাম বলেন, ড. কামাল অনুশাসনমূলক লিখিত যে বিবৃতি দিয়েছেন তা সংবিধান ও আইনের পরিপন্থি। এ ধরনের যে কোনো বিবৃতি ও কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য তিনি ড. কামালের প্রতি আহ্বান জানান। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইসি’র সঙ্গে বৈঠক ছেড়ে উঠে যাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এইচটি ইমাম বলেন, আজকের (মঙ্গলবার) বৈঠক নিয়ে কিছু তথ্য পেয়েছি।

আজ ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের খুব শক্তিশালী একটি দল গিয়েছিল নির্বাচন কমিশনে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর থেকে শুরু করে মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান সবাই ছিলেন বৈঠকে। ওই বৈঠক তারা বয়কট করেননি, এই তথ্যটাই দিতে চাই। বৈঠকে কী হয়েছিল, সে বিষয়ে এইচ টি ইমাম বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ করতে করতে একপর্যায়ে ড. কামাল হোসেন ক্ষেপে গিয়ে নারায়ণগঞ্জের কোনো এক উপ-পরিদর্শককে (এসআই) ‘জানোয়ার’ বলেছেন।

সিইসি তাৎক্ষণিকভাবে তার এমন ভাষা ব্যবহারে প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, আপনি (ড. কামাল) এই শব্দ কেন এ রকমভাবে ব্যবহার করলেন? এমন ভাষা আপনার মুখে শোভা পায় না। আওয়ামী লীগ নেতা এইচটি ইমামের ভাষ্য অনুযায়ী, ড. কামালকে সিইসি বলেন, এখানে যে একজন পুলিশ সদস্যকে জানোয়ার বললেন, এটি কি শোভনীয়? এটি কি আশা করা যায়? এইচ টি ইমাম বলেন, এরপর যা ঘটেছে তা হলো ড. কামাল হোসেন জোরে জোরে টেবিল চাপড়িয়েছেন। এর আগেও তো তিনি সাংবাদিকদের ‘খামোশ’ বলেছেন। তখন সিইসি ও অন্যান্যরা বলেন, আমরা অপমানিত বোধ করছি। আপনারা না থাকলেই ভালো। কাজেই এই ইসি’র সঙ্গে বৈঠক জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বয়কট করেননি, বরং তারা বৈঠকে একরকম মাস্তানি করেছেন এমনটিই জানান এইচ টি ইমাম।

এইচ টিইমাম বলেন, বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনের আগে দেশে বড় ধরনের একটি নাশকতামূলক হামলার পরিকল্পনা করছে। এ ধরনের হামলা মোকাবিলায় দেশের প্রতিটি মানুষকে সচেতন থাকতে হবে। এইচটি ইমাম বলেন, জাতীয় নির্বাচনকে ভণ্ডুল ও প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য নানামুখী ষড়যন্ত্র ছিল, এখনও তা অব্যাহত রয়েছে। নির্বাচনের প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকে বিএনপি-জামায়াত ও ঐক্যফ্রন্টের সন্ত্রাসীদের হাতে আওয়ামী লীগের ৫ নেতা-কর্মী নিহত হয়েছে এবং ৩৫০ নেতা-কর্মী মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। তিনি বলেন, প্রতি মুহূর্তে আমরা বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের হাতে আমাদের প্রার্থী ও দলীয় নেতা-কর্মী আক্রান্ত হওয়ার খবর পাচ্ছি।

আওয়ামী লীগের শ’ শ’ নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের মধ্যে ভয়-ভীতি সৃষ্টি করা হচ্ছে এবং তাদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন ঘোষিত বিধি-নিষেধ শিথিল করার অনুরোধ জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে, এমন কোনও বিধি-নিষেধ আমরা সমর্থন করি না। আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে, ভোটকেন্দ্রের ১০০ গজ দূরত্বে যানবাহন চলাফেরা ও অবস্থান করতে পারে, এমন নির্দেশনা জারি করা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, সংবাদ সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা সাংবাদিকদের মোটরসাইকেল যেন স্টিকারসহ চলাফেরা করতে যারে, সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version