এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : প্রচার-প্রচারণা না থাকলেও গতকাল বিভিন্ন স্থানে প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। ভাঙচুর করা হয়েছে নির্বাচনী ক্যাম্প ও যানবাহন। পটুয়াখালী-৩ আসনে হামলার শিকার হয়েছেন বিএনপি প্রার্থী গোলাম মাওলা রনি। স্থানীয় মসজিদ থেকে বাসায় ফেরার পথে তিনি হামলার শিকার হন। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে বিএনপি প্রার্থী হারুনুর রশিদের বাড়িতে আবারও হামলা হয়েছে।

গোলাম মাওলা রনির ওপর হামলা
পটুয়াখালী-৩ আসন (গলাচিপা-দশমিনা) বিএনপি’র মনোনীত প্রার্থী গোলাম মাওলা রনির ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার স্থানীয় মসজিদ থেকে মাগরিবের নামাজ পড়ে বাসায় যাওয়ার পথে এ হামলার ঘটনা হয় বলে তিনি জানান। তবে স্থানীয় প্রশাসন বলছে ভিন্ন কথা। শুক্রবার গলাচিপা উলানিয়া বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

গোলাম মাওলা রনি জানান, গলাচিপার উলানিয়া বাজারসংলগ্ন একটি মসজিদ থেকে মাগরিবের নামাজ পরে বাসায় ফেরার পথে নসরুল সওদাগারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অতিক্রমের সময় ১০ থেকে ১২ জন সন্ত্রাসী লোহার রড ও লাঠিসোঁটা নিয়ে তাকে আঘাত করে। এ সময় তিনি সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হন। বর্তমানে তিনি পটুয়াখালী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে রওনা হয়েছেন বলে জানান। এ ঘটনায় গোলাম মাওলা রনি নিজেই মোবাইল ফোনে উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছেন। গলাচিপা থানার ওসি আক্তার মোর্শেদ বলেন, ঘটনাস্থলে সার্বক্ষণিক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তাকে হামলা করা হয়েছে এটা সত্য নয়। তার গায়ে ডিম ছুড়ে মারা হয়েছে। ওসি আরও বলেন, তাকে সার্বিক নিরাপত্তার জন্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার শাহ্‌ মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম জানান, তাকে কে বা কারা গায়ে ডিম ছুড়ে মেরেছে। তিনি সন্ত্রাসী হামলার শিকার হননি। এটা ভুল তথ্য। ওখানে আমার লোক রয়েছে তাদের মাধ্যমে আমি অবহিত হয়েছি।
ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি জানান, ফরিদগঞ্জে বিএনপির প্রার্থী সাবেক এমপি হারুনুর রশিদের বাড়িতে আবারও হামলা হয়েছে। এ সময় দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। হামলায় দেশীয় অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে। পুলিশ প্রার্থীর বাড়ি থেকে ৪ জনকে আটক করেছে। উপজেলার মান্দারখিল গ্রামে প্রার্থীর নিজ বাড়িতে গতকাল দুপুরে এ ঘটনা ঘটেছে। হামলার সময় প্রার্থী নিজ বাড়িতে ছিলেন। বর্তমানে তিনি বাড়ির ভেতরে অবরুদ্ধ রয়েছেন।

প্রার্থী হারুনুর রশিদ সকাল থেকে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন। দুপুর ১২টা নাগাদ দেশীয় অস্ত্র হাতে শতাধিক আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী অতর্কিতে হারুনের বাড়িতে ধর ধর চিৎকার দিয়ে হামলা করে। এ সময় ধানের শীষের নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা সংগঠিত হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে ও পাল্টা ধাওয়া দেয়। এতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। একপর্যায়ে হামলাকারীরা পিছু হটে।

এরপর দ্বিতীয় দফা দ্বিগুণ লোক নিয়ে পুনরায় হামলা করলে আবারও সংঘর্ষ বাধে। খবর পেয়ে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। তারা লাঠিচার্জ করে সংঘর্ষকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় দ্বিমুখী সংঘর্ষ বেধে যায়। এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষের এক পর্যায়ে ধানের শীষের কর্মীরা পিছু হটে।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির দু’নেতা বলেছেন, পোলিং এজেন্ট নিয়োগ বিষয়ে হারুন ভাই আমাদের সঙ্গে ঘরে বসে শান্তিপূর্ণভাবে আলোচনা করছিলেন। এ সময় প্রায় তিন শতাধিক নেতা, কর্মী, সমর্থক বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন। আচমকা প্রথমে যুবলীগের কয়েকজন নেতার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের কর্মীরা আমাদের ওপর হামলা করে। আমরা আত্মরক্ষার্থে প্রতিরোধ করলে তারা পালিয়ে যায়। দ্বিতীয় দফা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাদের নেতৃত্বে হামলা করা হয়। এ সময় পুলিশ এসে আমাদের নেতা কর্মীদের ওপর চড়াও হয় ও বেধড়ক পেটায়। তাদের সঙ্গে সরকারদলীয় নেতা কর্মীরাও যোগ দেয়। প্রার্থীর বাড়ি থেকে পুলিশ বিএনপির ৪ জনকে আটক করেছে বলে দলীয় নেতারা দাবি করেছেন। আটকৃতরা তিনজনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন আজাদ পাটওয়ারী, এমরান হোসেন, তারেক হোসেন। সংঘর্ষ চলাকালীন আন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে।

তারাকান্দা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি জানান, তারাকান্দায় গত দুদিনে বিএনপির নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর ও গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির দাবিতে গতকাল বিকালে উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলন ঈদগা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, তারাকান্দা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম তালুকদার, এসময় উপস্থিত ছিলেন তারাকান্দা উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক রাসেল মণ্ডল, শ্রমিক দলের যুগাম আহ্বায়ক ইসলাম উদ্দিন মেম্বার প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, গত ২৬ ও ২৭শে ডিসেম্বর রাতে উপজেলার কাকনী, মাঝিয়ালী, সিমান্তলী বাজার, রামপুর বাজার, মধুপুর বাজারে হেলমেট পরিহিত দুর্বৃত্তরা বিএনপির নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর ও পোস্টার, প্যানা পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে।
গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি জানান, গাংনীতে বিএনপি নেতা আব্দুল আওয়ালের বাড়িতে বোমা হামলা করেছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৮টার দিকে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে।

মেহেরপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বামন্দী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়ালের গাংনীর বামন্দীস্থ বাড়িতে বোমা হামলা করে দুর্বৃত্তরা। তবে বোমা হামলার ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। আব্দুল আওয়ালের ছোট ভাই ছাত্রদল নেতা চপল বিশ্বাস জানান, রাতে দুর্বৃত্তরা আমার বড় ভাই আব্দুল আওয়ালের বাড়ির প্রবেশ পথে পরপর ২টি বোমা ছুড়ে মারলে, বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। বোমা হামলা করেই দুবৃর্ত্তরা পালিয়ে যায়। এ সময় আব্দুল আওয়াল বাড়িতে ছিলেন না। গাংনী থানার ওসি হরেন্দ্রনাথ সরকার (পিপিএম) জানান, ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় বামন্দী পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি জানান, কালাই উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নের বিয়ালা বাজারে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অফিসে ভাঙচুর চালিয়েছে স্থানীয় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এই সময় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের ৪ নেতাকে মারপিট করে আহত করেছে তারা। আহতদের রাতেই জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতরা হলেন- মাত্রাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নাছির আলী, মাত্রাই ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি গোলাম মোস্তফা, ছাত্রলীগ কর্মী মাহমুদুল ইসলাম ও যুবলীগ কর্মী বেলাল হোসেন।
বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, দলীয় কোন্দল ও পূর্ববিরোধের জেরে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় শাহ মুর্তজা গালিব মুন (৩৫) নামে এক যুবলীগ নেতার ঘর থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ির উঠানে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে নিজ দলীয় কর্মীরা। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে উপজেলার কাছিপাড়া ইউনিয়নের কারখানা গ্রামে ওই ঘটনা ঘটে। মুন কাছিপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক।

যুবলীগ নেতা মুনের অভিযোগ, দলীয় কোন্দল ও পূর্ব বিরোধের জেরে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে কাছিপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহিনের নেতৃত্বে ২৫-৩০ জনের একটি দল তাদের ঘরে হামলা চালায়। তাকে না পেয়ে তার ব্যবহৃত হোন্ডা কোম্পানির মোটরসাইকেলটি ঘর থেকে উঠানে নামিয়ে আগুন লাগিয়ে পুড়ে ফেলে এবং তাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে চলে যায়। তবে যুবলীগ নেতা মো. শাহিন এ অভিযোগ অস্বীকার করেন।
সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি জানান, জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই গ্রপে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় অন্তত: ৩০টি বাড়িঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে উভয়পক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালে সরিষাবাড়ী-ভূঞাপুর প্রধান সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা যান চলাচলা বন্ধ থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১০ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। গতকাল শুক্রবার সকালে উপজেলার পিংনা ইউনিয়নের নরপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, চলতি বছরের ৩১শে মে পিংনা ইউনিয়নের নরপাড়া গ্রামে বালু ব্যবসার আধিপত্য নিয়ে এক সংঘর্ষে ছাত্রলীগ নেতা জাহিদ হাসান নিহত হন। এ ঘটনার জের ধরে নিহত জাহিদের চাচাতো ভাই ইউসুফ আকন্দ ও আসামি পক্ষের তোফাজ্জল হোসেন মিলিটারির গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। সম্প্রতি জাহিদ হত্যা মামলার আসামিরা জামিনে বের হলে আওয়ামী লীগে দুইপক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে তোফাজ্জল মিলিটারির লোকজন ইউসুফ আকন্দকে সোনামুই বাজার থেকে সাহাপাড়ায় ধরে নিয়ে রামদা ও হাতুড়ি দিয়ে পেটায়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ জনতা প্রতিপক্ষের ২২টি পরিবারের অন্তত ৩০টি ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এ সময় উভয়পক্ষে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বাধে। পরে বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এদিকে ঘটনাস্থল থেকে বিলাত মেম্বারের ছেলে নাসির উদ্দিনকে পুলিশ আটক করলে পরিস্থিতি নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আটককৃতকে স্থানীয়রা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ ৬ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও ৪ রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষ ও গুলিতে প্রায় অর্ধশত লোক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পিংনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার মোতাহার হোসেন জানান, ‘তোফাজ্জল মিলিটারি ও তাঁর লোকজন সব সময় এলাকায় নানা বিশৃঙ্খলা করে বেড়ায়। তার নেতৃত্বেই সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। এদের আইনের আওতায় আনা জরুরি।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ ছানোয়ার হোসেন বাদশা বলেন, ‘বালুর ব্যবসাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি। বিশৃঙ্খলাকারী কেউ আওয়ামী লীগের হতে পারে না। তারা যে-ই হোক এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।’
সরিষাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মাজেদুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৬ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও ৪ রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। বিষয়টি নিয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version