এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : ফের বড় ধরনের রদবদল আনা হয়েছে সৌদি আরবের রাজসভায়। সেই সঙ্গে প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজকীয় এক ডিক্রির মাধ্যমে এই রদবদলের কথা জানান বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ। এতে শীর্ষ পদগুলোতে জায়গা পেয়েছেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ঘনিষ্ঠজনরাই। শুধু রাজসভাই নয়, বিভিন্ন রাজ্যে নিয়োগ নতুন রাজকীয় গভর্নররাও মোহাম্মদের অতি ঘনিষ্ঠ মিত্র। সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগির হত্যাকাণ্ডে আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যেই মন্ত্রিসভায় রদবদল আনা হল। এর মধ্য দিয়ে যুবরাজ মোহাম্মদের সৌদির ভবিষ্যৎ বাদশাহ হওয়ার পথ অনেকখানিই পরিষ্কার হয়ে গেল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বাদশাহ হওয়ার ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে যুবরাজের প্রতি সমর্থনও জানিয়েছে রাশিয়া। এ ব্যাপারে কোনো ঝামেলা না করতে যুক্তরাষ্ট্রকেও হুশিয়ারি দিয়েছে মস্কো। রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি মিখাইল বোগদানোভ বৃহস্পতিবার মস্কোয় এক সাক্ষাৎকারে বলেন, বাদশাহ সালমানের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার ‘পূর্ণ অধিকার’ যুবরাজ মোহাম্মদের রয়েছে। খবর বিবিসির।
ডিক্রি অনুযায়ী সৌদির নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছেন ইব্রাহিম আল আসাফ। আগের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবেইরকে তার প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে। ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলের সৌদি কনসুলেটের ভেতর জামাল খাসোগির হত্যাকাণ্ডের জেরেই আদেলের এ পদাবনতি বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। প্রথম দিকে খাসোগি ‘নিখোঁজ কাণ্ডের’ সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করলেও পরে কনসুলেটের ভেতরই তিনি ‘দুর্বৃত্ত’দের হাতে হত্যার শিকার হন বলে স্বীকার করে নেয় রিয়াদ। আদেল শুরু থেকেই খাসোগিকে নিয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যম ‘অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি’ করছে বলে সমালোচনা করে আসছিলেন।
তার জায়গায় দায়িত্ব পাওয়া ইব্রাহিম আল আসাফ দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবের অর্থমন্ত্রী ছিলেন। গত বছরের নভেম্বরে কয়েক প্রিন্স ও মন্ত্রীসহ যে ২১১ জন ব্যবসায়ীকে আটক করা হয় তিনি তাদের অন্যতম। শিক্ষা ও গণমাধ্যমবিষয়ক দুই মন্ত্রণালয়েও বদল এনেছেন বাদশাহ। শিক্ষামন্ত্রী আহমেদ বিন মোহাম্মদ আল-ইসাকে সৌদি গণশিক্ষা পর্যালোচনা কমিশনের প্রধান ও রাজকীয় উপদেষ্টা পদে নিয়ে আসা হয়েছে। উপদেষ্টা হয়েছেন গণমাধ্যমের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী আওয়াদ বিন সালেহ আল আওয়াদ।
হামাদ আল-শেখ হয়েছেন নতুন শিক্ষামন্ত্রী। গণমাধ্যমের দায়িত্ব গেছে তুর্কি আল-শাবানার হাতে। ইমরান আল-মুতাইরিকে দেয়া হয়েছে সহকারী বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব। গুরুত্বপূর্ণ ন্যাশনাল গার্ডের মন্ত্রী বানানো হয়েছে আবদুল্লাহ বিন বান্দারকে। মোহাম্মদ বিন সালেহ আল-গোফেইলিকে ন্যাশনাল গার্ডের উপদেষ্টার পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। সৌদ বিন আবদুল আজিজ হিলালের জায়গায় জননিরাপত্তা বিভাগের প্রধান করা হয়েছে খালেদ আল-হারবিকে। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হয়েছেন মুসায়েদ আল আইবান।
তুর্কি আল আশেখকে জেনারেল এন্টারটেইনমেন্ট অথরিটির চেয়ারম্যান বানানো হয়েছে। তিনি আগে ছিলেন জেনারেল স্পোর্টস অথরিটির চেয়ারম্যান। এ পদে এসেছেন প্রিন্স আবদুল আজিজ বিন তুর্কি আল-ফয়সাল। পর্যটন ও জাতীয় ঐতিহ্য-বিষয়ক কমিশনের প্রেসিডেন্টের পদ থেকে প্রিন্স সুলতান বিন সালমানকে সরিয়ে বসানো হয়েছে আহমেদ আল-খতিবকে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়কমন্ত্রী ড. মাজেদ আল-কাসাবিকে প্রদর্শনী ও সম্মেলন বিষয়ক কমিশনের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এর বাইরে লন্ডনে দেশটির রাষ্ট্রদূত প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নাওয়াফ বিন আবদুল আজিজকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বলেও আরব নিউজ জানিয়েছে। বেশ কয়েকটি অঞ্চলের গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নর পদেও রদবদল হয়েছে।