এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : ৫০ দিন পর আদালতে এলেন। চারদিন আগেই শেষ হয়েছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন বা ফলাফল নিয়ে কিছু বলেননি। অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আদালতের ক্ষুদ্র পরিসর নিয়ে। কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া হুইল চেয়ারে করে এসেছিলেন পুরনো ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডে পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারের বিশেষ জজ আদালতে। আদালত কক্ষটি ৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২০ ফুট প্রস্থের। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা ১২ মিনিটে হুইল চেয়ারে করে গোলাপি রঙের শাড়ি পরা খালেদা জিয়াকে আদালত কক্ষে হাজির করা হলে তিনি বলেন, এখানে এত লোকজন কেন? এত পুলিশ থাকলে আমার আইনজীবীরা কোথায় দাঁড়াবে? আদালতের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এত সংকীর্ণ জায়গায় আদালত চলতে পারে না। আমার আইনজীবীরা বসতে পারছে না।

আর যদি এই জায়গায় ট্রায়াল চলে তাহলে আমি আর আসবো না। সাজা দেয়ার জন্যই এনেছেন। সাজা দেবেন। আমি আর আসতে পারবো না।’

জবাবে ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান বলেন, আগামী কোর্টে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা হবে। তখন খালেদা জিয়া আবারও বিচারককে বলেন, ব্যবস্থা শুধু করার কথা বলা হয় কিন্তু করা হয় না। এর উত্তরে বিচারক বলেন, আমি নতুন এসেছি। আজ আমার প্রথম কোর্ট। আমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা করবো।
এদিন খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করা ও মামলার শুনানিকে কেন্দ্র করে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের আশপাশে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। কারাগারের পথে পথে সশস্ত্র পুলিশ সদস্য টহল দেয়।
আগামী ১৩ই জানুয়ারি নাইকো মামলার শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন আদালত। তার আগে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা তার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য আলাদা আবেদন জানালে আদালত তা খারিজ করে দেন। এফবিআই সদস্যদের সাক্ষ্য দেয়ার অনুমতি চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন নথিভুক্ত করা হয়েছে।

শুনানি শেষে হলে বেলা সোয়া ২টায় খালেদা জিয়াকে আবারও কারাকক্ষে নেয়ার সময় গণমাধ্যমের উদ্দেশ্যে কিছু বলবেন কি না জানতে চাইলে জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, আমার কিছু বলার নেই। এর পরপরই আবারও হুইল চেয়ারে করে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে।

গত ৮ই নভেম্বর খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে হঠাৎ করে কারাগারের বিশেষ আদালতে আনা হয়েছিল। ১৪ই নভেম্বর আবারো তাকে ওই আদালতে আনা হয়। এর আগে তিনি হাইকোর্টের আদেশের গত ৬ই অক্টোবর থেকে ৫ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ডের অধীনে বিএসএমএমইউ’র একটি ভিআইপি কেবিনে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

জরুরি আমলের সরকারের সময় ২০০৭ সালের ৯ই ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে গ্যসচুক্তি করায় রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা ক্ষতির অভিযোগে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০০৮ সালের ৫ই মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেয়া হয়।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী একেএম মোশাররফ হোসেন, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সিএম ইউসুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version