এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : ‘মোদি হটাও দেশ বাঁচাও’ এই স্লোগান তুলে শনিবার কলকাতায় ব্রিগেড ময়দানের মঞ্চে হাজির কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, গুজরাত থেকে অরুণাচল প্রদেশের বিজেপি বিরোধী নেতারা ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের অঙ্গীকার করেছেন। ঐক্যবদ্ধ ভারতের ছবিটাই এদিনের মঞ্চে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। সকলেই এই দিনটিকে ঐতিহাসিক দিন বলে চিহ্নিত করেছেন। নিজেদের ভাষণে কোনো নেতা বলেছেন, এই নির্বাচন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার নির্বাচন নয়। এই নির্বাচন দেশ বাঁচানোর, গণতন্ত্র বাঁচানোর। তাই এক হয়ে লড়াই করতে হবে। আবার কোনো নেতা বলেছেন, মতের পার্থক্য থাকলেও সরকারে পরিবর্তন আনতে আমরা এক জোট থাকবো। মোদি সরকারের বিভিন্ন নীতি ও দুর্নীতির প্রশ্নেও সোচ্চার ছিলেন বিরোধী নেতারা।

মোদির আমলে কীভাবে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করা হয়েছে, কৃষক ও যুবসমাজের সর্বনাশ করা হয়েছে এবং করপোরেটদের তোষণ করা হয়েছে সেই অভিযোগও করেছেন সকলে। এদিনের সমাবেশের আহ্বায়ক তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার ভাষণে আগামী দিনে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই আরো সুসংহত করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সভা করার আহ্বান জানিয়েছেন।

একই সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছেন, কে প্রধানমন্ত্রী হবেন, সেটা ভোটের পরেও ঠিক করা যেতে পারে, আপাতত বিজেপির বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়াই করাটাই বড় কথা। এদিন ব্রিগেড থেকে মমতার নতুন স্লোগান, ‘অনেক হয়েছে অচ্ছে দিন, এবার বিজেপিকে বাদ দিন’। তিনি আরো বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদির এক্সপায়ারি ডেট চলে এসেছে। সমাবেশে সাবেক বিজেপি নেতা যশবন্ত সিনহা বলেছেন, গত ৫৬ মাসে দেশে গণতন্ত্র বিপন্ন হয়েছে। দেশ আজ এক ভয়ঙ্কর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। এমনকি বিজেপির বিক্ষুব্ধ সাংসদ শত্রুঘ্ন সিংহ বলেছেন, এখানে এসে ভারতের জনগণের মুড বোঝা যাচ্ছে।

দেশের নয়া নেতৃত্বের প্রয়োজন। মোদিকে কটাক্ষ করে তিনি বলেছেন, রাফায়েল কেনা সংক্রান্ত তথ্য লুকিয়ে রাখবেন না। তাহলে মানুষ ঠিকই বলবে চৌকিদার চোর হ্যায়। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবগৌড়া উপদেশের ভঙ্গিতে বলেছেন, জোট সরকার আসলেই অনেক শক্তিশালী হয়। তাই ভাষা-ধর্ম নির্বিশেষে মহাজোটের এই শরিকদের উপর ভরসা রাখতে বলেছেন তিনি। সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব বলেছেন, বাংলা থেকে আজ যা শুরু হলো, গোটা দেশে এবার তা-ই চলবে।

কংগ্রেস নেত্রীর লেখা চিঠি নিয়ে সমাবেশে এসেছিলেন কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে। সেই চিঠিতে সোনিয়া বলেছেন, সংবিধানকে ধ্বংস করা হচ্ছে। তাই সকলের এক হয়ে লড়াই করাকে তিনি সমর্থন জানিয়েছেন। এর আগে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীও মমতার উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন।

আগামী লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে বিজেপি বিরোধী প্রায় সব শক্তির মধ্যে সমঝোতা তৈরির প্রয়াস বছরখানেক ধরেই চলছে। কখনো অখিলেশ বা কেজরিবালের ডাকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছুটে গিয়েছেন লক্ষ্ণৌ বা দিল্লিতে। কখনো সনিয়া গান্ধীর ডাকে দিল্লিতে বৈঠকে বসেছে বিভিন্ন বিরোধী দল। কখনো চন্দ্রবাবু নাইডু সচেষ্ট হয়েছেন। কিন্তু বিজেপি বিরোধী প্রায় সব দলকে এক মঞ্চে এনে এত বড় প্রকাশ্য সমাবেশ এই প্রথম। সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়া থেকে মারাঠা স্ট্রংম্যান শরদ পাওয়ার, লোকসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে থেকে তেলুগু দেশম সুপ্রিমো চন্দ্রবাবু নাইডু, অরবিন্দ কেজরিবাল থেকে ডিএমকে প্রধান এম কে স্ট্যালিন, প্রত্যেকেই এদিন এই মহাসমাবেশের জন্য প্রশংসা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এদিনের মঞ্চে শরদ যাদব, শারদ পাওয়ার, যশবন্ত সিনহা, এইচডি দেবগৌড়া, ফারুখ আবদুল্লার মতো প্রবীণ নেতাদের পাশাপাশি হাজির ছিলেন অখিলেশ যাদব, তেজস্বী যাদব, এমকে স্ট্যালিন, জয়ন্ত সিং, হার্দিক পটেল, জিগ্নেশ মেবাণীর মতো তরুণ নেতারাও। তারা একযোগে মোদি সরকারের সমালোচনা করে কেন্দ্রে বদলের ডাক দিয়ে বিরোধীদের একজোট হতে আহ্বান জানিয়েছেন। একই কথা বলেছেন, লোকতান্ত্রিক জনতা দলের প্রধান শরদ যাদব।

তিনি বলেছেন, দেশ সংকটে। মুক্তি চাই এই অবস্থা থেকে। উপায় একটাই, সবাইকে একজোট হতে হবে। তবে দেশ থেকে কালো মেঘরূপী মোদি সরকার সরে যাবে।
নোট বাতিলসহ একাধিক ইস্যুতে মোদিকে আক্রমণ করে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী এইচডি কুমারস্বামী বলেছেন, মোদি সরকার মূক এবং বধির। মানুষের কথা শোনার মতো সময় নেই। পুঁজিপতিদের হয়ে কাজ করছে। সাধারণ মানুষের বক্তব্য উপক্ষিত। বহুজন সমাজ পার্টির নেতা সতীশ মিশ্র বলেছেন, আর সহ্য করা যাচ্ছে না এই সরকারকে। কেন্দ্রে অসফল মোদি সরকার। প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ মোদি সরকার।

কর্মসংস্থান হয়নি, কাজ হারিয়েছে সাধারণ মানুষ। ব্রিগেডের মঞ্চ থেকেই এই সরকারকে উচ্ছেদের ডাক দিয়েছেন তিনি। ডিএমকে নেতা স্ট্যালিন বলেছেন, আগামী লোকসভা নির্বাচন হলো দ্বিতীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম। তিনি বলেছেন, দেশের সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়ানো হচ্ছে। সবার একটাই স্লোগান হওয়া উচিত, বিজেপি হঠাও দেশ বাঁচাও। আমরা একজোট, তাই মোদি ভয় পাচ্ছেন। ফারুখ আবদুল্লাহ বলেছেন, দেশে ধর্মের নামে বিভেদ চলছে। সবার আগে নেতাদের একজোট হতে হবে। দেশরক্ষায় আত্মত্যাগ প্রয়োজন। কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিংভি বলেছেন, মানুষের দাবি, আর নয় মোদি সরকার। এই সরকারের মধ্যে বিশাল প্রতিশোধ স্পৃহা। জনহিতের কথা বললেই দেশদ্রোহীর তকমা দেয়া হচ্ছে। এবার রামধনুর মতো সব রঙ একসঙ্গে। ভোট ভাগাভাগির সুবিধা পায় বিজেপি। ভোট ভাগাভাগি রুখে দিলেই ওরা হেরে যাবে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version