এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : বিজয় সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজয় সমাবেশ থেকে দল-মত নির্বিশেষে সবার জন্য কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, দেশের প্রতিটি নাগরিকের রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করবে আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সব শ্রেণি- পেশার মানুষের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। গতকাল রাজধানীর সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যাণে লাখো মানুষের বিশাল বিজয় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী। টানা তৃতীয় মেয়াদে নিরঙ্কুশ বিজয় উপলক্ষে আওয়ামী লীগ এ সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশ উপলক্ষে আশপাশের এলাকায় ছিল সাজ সাজ রব, রঙবেরঙের ব্যানার, পোস্টার ও প্ল্যাকার্ডে সাজানো হয়েছিল উদ্যানসহ পুরো এলাকা। বিপুল জনসমাগমেও ছিল উৎসবের আমেজ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয় শুধু আওয়ামী লীগের নয়, এই বিজয় স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির, আপামর জনগণের।

জনগণ এবার স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের ভোটের মর্যাদা রক্ষা করে তাদের জীবন-মান উন্নত করবার জন্য প্রয়োজনে আমি আমার বুকের রক্ত দিতে প্রস্তুত। আমি সেই ওয়াদা আজকে করে যেতে চাই। তিনি বলেন, আমি এটুকুই বলবো- দেশের মানুষ যে বিশ্বাস রেখেছে তার মর্যাদা আমি আমার জীবন দিয়ে হলেও করে যাবো। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জয় পেয়েছে এটা সত্য।

যখন দায়িত্ব পেয়েছি, দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই-দল মত নির্বিশেষ প্রত্যেকের জন্য কাজ করবো। সবার রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করবো। প্রতিটি নাগরিক আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সকলের তরে, সকলের জন্য। সকলের জন্য কাজ করবো। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের পক্ষে রায় দিয়েছে। আমরা বিজয়ের সম্মান রক্ষা করে সুষম উন্নয়ন করে যাবো। এই রায় সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও মাদকের বিরুদ্ধে রায়। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের এটি মাথায় রাখতে হবে। কঠিন দায়িত্ব আমরা পেয়েছি। সেই দায়িত্ব আমাদের নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে উঠবে। সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব এটাই হচ্ছে আমাদের অঙ্গীকার। আমরা যে অঙ্গীকার করেছি তা অক্ষরে অক্ষরে পূরণ করবো। এই সমাবেশে আমি এটিই বলে যেতে চাই।
গত ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৫৭টি আসনে জয় নিয়ে টানা তৃতীয়বার সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। ভোটের ১৯ দিন পর গতকাল বিজয় উৎসব পালন করে দলটি। বেলা ৩টার পরপরই শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হলে স্লোগানে স্ল্লোগানে তাকে স্বাগত জানান নেতা-কর্মী, সমর্থকরা। উদ্যানের ভেতরে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকার আদলে তৈরি করা হয় ‘বিজয় মঞ্চ’, তার পেছনের ব্যানার সাজানো হয় দলের এবারের ইশতেহারের মলাটের রঙে। বৈঠাসহ ছোট-বড় ৪০টিরও বেশি নৌকা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত ফেস্টুনে সাজানো হয় সমাবেশ মাঠ। মঞ্চে শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, এডভোকেট সাহারা খাতুন, লে. কর্নেল অব. ফারুক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, ডা. দীপু মনি। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানসহ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের নেতা ও মন্ত্রিপরিষদের বেশির ভাগ সদস্য মঞ্চে ছিলেন। আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন যৌথভাবে সভা পরিচালনা করেন। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতির বক্তব্যের আগে অভিনন্দন বার্তা পাঠ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। জনসভায় যোগ দিতে সকাল ৯ টায় সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যান অভিমুখী মিছিল দেখা যায় ঢাকার নানা স্থানে।

বাংলা একাডেমির বিপরীত দিক দিয়ে উদ্যানে ঢোকার পথে ছিল দীর্ঘ সারি। জয় বাংলা স্লোগানের সঙ্গে ঢাক-ঢোলের বাদ্যে মুখর নেতা-কর্মীদের দুপুরে মাতিয়ে তোলেন জনপ্রিয় সব সঙ্গীতশিল্পী। গানে গানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বন্দনা যেমন ছিল, তেমনি ছিল গত এক দশকে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথাও।

এদিকে ১৯ মিনিটের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া সব দলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, সব দল নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচনকে অর্থবহ করেছে। ভোটে আসা দলগুলোর উদ্দেশে তিনি বলেন, নির্বাচনে জয়-পরাজয় একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। আমি বলতে চাই, আওয়ামী লীগ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছে এটা সত্য। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ও মহাজোটকে বিজয়ী করেছে। তিনি বলেন, এই বিজয় কেবল আওয়ামী লীগের নয়, এ বিজয় স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির, এ বিজয় সকল জনগণের। বিজয় উৎসবে আসার জন্য তিনি সেখানে উপস্থিত সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে পুলিশ, বিজিবি, আনসারসহ সকল সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং নির্বাচন কমিশনকে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি ভোটার ও তৃণমূলের নেতা-কর্মীদেরও ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা এবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। নিশ্চয়ই একটি কথা উপলব্ধি করেছে, ঐক্যবদ্ধ শক্তি সব সময় বিজয় অর্জন করে- এই নির্বাচনে এটা প্রমাণ হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারের পক্ষে জনগণ রায় দিয়েছে।

জনগণ ভোট দিয়েছে, সে ভোটের সম্মান যাতে থাকে অবশ্যই আমরা মাথায় রেখে সার্বিকভাবে সুষম উন্নয়ন করে যাব। এ রায় সন্ত্রাসের, জঙ্গিবাদের, মাদকের বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে রায়। নির্বাচিত প্রতিনিধি যারা তাদের এটা মনে রাখতে হবে। দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা আমাদের কর্তব্য। বিজয় পাওয়া যত কঠিন, তা রক্ষা করে জনগণের জন্য কাজ করা আরও কঠিন। সে কঠিন কাজের দায়িত্ব পেয়েছি, তা পালন করতে হবে, সেটাই আমি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। শেখ হাসিনা বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে জনগণ জঙ্গি, মাদক, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। শান্তি ও উন্নয়নের স্বপক্ষে রায় দিয়েছে। অন্ধকার থেকে আলোর পথে যাত্রার জন্য রায় দিয়েছে। তিনি বলেন, তরুণদের জন্য সুন্দর বাংলাদেশ, ডিজিটাল বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে রায় দিয়েছে জনগণ। তিনি বলেন, আমরা যে অঙ্গীকার করেছি, সেই অঙ্গীকার আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার পক্ষে রায় দিয়েছে দেশের মানুষ। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী দেশকে সম্পূর্ণ দারিদ্র্যমুক্ত করতে সবার সহযোগিতা চান।

তিনি বলেন, একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে এটাই মূল লক্ষ্য যে, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের চেতনা নিয়ে দেশ শাসন করে যাব। একটি উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলব। যেখানে দেশের মানুষের সকলের সহযোগিতা চাই। ছাত্র-শিক্ষকসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে আহ্বান জানাই, আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের বর্তমানকে উৎসর্গ করি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। যাতে তারা একটি উন্নত ও সুন্দর সমাজ পায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন যেমন বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এবং যেন বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলতে পারে সেভাবে আমরা আমাদের দেশকে গড়ে তুলতে চাই। সেজন্য যা যা করা দরকার করবো। প্রতিটি গ্রাম শহরের সকল নাগরিক সুবিধা পাবে। তৃণমূলে মানুষের জীবন উন্নত করবো। শিক্ষার আলো প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে।

প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় হবে, প্রতিটি উপজেলায় কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে। ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে ও ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত হয়ে বাংলাদেশ এগুলো উদযাপন করবে বলে ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ সেটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হলে দেশ থেকে যেমন দুর্নীতি দূর করতে হবে, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। একই সঙ্গে মাদকমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত দেশ করতে হবে- যেখানে মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। শেখ হাসিনা বলেন, ৪র্থবারের মতো মানুষ আমাকে তাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছে। ’৭৫-এর ১৫ই আগস্টের স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, খুনিরা ভেবেছিল বঙ্গবন্ধুর কোনো রক্ত বেঁচে থাকবে না, যাতে করে বাংলাদেশ আবার উঠে দাঁড়াতে না পারে। আমি আর আমার ছোট বোন ছয় বছর বিদেশে ছিলাম। সে সময় দেখেছি বাংলাদেশের সেই চিত্র।

ছিন্ন বস্ত্র, দেখেছি মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, পেটে ক্ষুধার জ্বালা। তখন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে স্বপ্ন নিয়ে আদর্শ নিয়ে বাবা স্বাধীন করেছেন, সেটা পূরণ করে যেতে পারেননি, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে নিয়ে যখন উন্নয়নের পথে যাত্রা শুরু করেন তখনই সেই ১৫ই আগস্টের ঘটনা ঘটে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আমার জীবন উৎসর্গ করেছি। স্বজন হারানোর বেদনা নিয়েও প্রতিজ্ঞা করেছি এ দেশকে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেছি। যে বাংলাদেশে একটি মানুষও ক্ষুধার্ত থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না, সবাই চিকিৎসা পাবে, তরুণেরা কর্মসংস্থান পাবে। বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ। এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা, লক্ষ্য। তিনি বলেন, রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে মনে করি দেশের মানুষের জন্য কতটুকু কী করতে পারলাম- সেটাই বড় কথা। কী পেলাম সেটা বড় কথা নয়। আমি আমার জীবনকে উৎসর্গ করছি। ব্যক্তিগত কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের সহযোগিতা চাই। আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বাস করে আমাদের মূল্যবান ভোট দিয়েছে। এই ভোটের সম্মান আমি রক্ষা করবো।

এই দেশের মানুষের উন্নয়ন করতে গিয়ে জীবন দিয়ে গেছেন আমার মা ও ভাইয়েরা। অনেক মানুষ জীবন দিয়েছেন মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে। কবি সুকান্তের কবিতার পংক্তি উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্য শেষ করেন। বলেন, ‘তবু যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ, প্রাণপণে পৃথিবীর সরাবো জঞ্জাল, এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি- নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’

সমাবেশে আমির হোসেন আমু বলেন, দেশের জনগণ বারবার বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিজয়ী করে তার ওপর আস্থা জানিয়ে আসছে। এ আস্থার স্থাপনই প্রমান করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষেই বঙ্গবন্ধু আদর্শ বাস্তবায়ন করা সম্ভব। তিনি বলেন, ১৯৮১ সালে ১৭ই মে দেশে ফেরার পর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশের মানুষের রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের সংগ্রাম শুরু করেছিলেন। এখন তিনি বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবে দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামে নেতৃত্ব দান করছেন। তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘দেশের মানুষ উন্নয়নের পক্ষে এবং সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ সকল ক্ষেত্রে পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।’ বঙ্গবন্ধুর মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও লক্ষ্য নির্ধারণ করে কাজ করেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ হবে জামায়াত, যুদ্ধাপরাধী, খুনি ও সন্ত্রাসীমুক্ত সংসদ। ’৭০ সালের মতো গণজোয়ার সৃষ্টি করে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ শেষ করার জন্য দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে। মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের অদম্য আকাঙ্ক্ষা নিয়ে দেশের জনগণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবিস্মরণীয় বিজয় এনে দিয়েছে।’ মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৫ বছর সামপ্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে উন্নত দেশ গঠনে নেতৃত্ব দেবেন। যারা নির্বাচনে হেরে যায়, তারা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না।’

‘আমার শেখ হাসিনাই ভালা’
শেখ হাসিনা যখন বিজয় সমাবেশের মঞ্চে বসেছিলেন সামনের মঞ্চে গান গাইছিলেন শিল্পী ও এমপি মমতাজ বেগম। তিনি গাইছিলেন ‘সব নেতার চাইতে আমার শেখ হাসিনাই ভালা’। মমতাজের গানটি শুনে তালি দিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উন্নয়নের পথে দিলো নৌকা মার্কায় ভোট এই মূল বক্তব্য নিয়ে কয়েক মিনিট ধরে গান গাইছিলেন মমতাজ। গানের কথাগুলো ছিল, বাড়ি বাড়ি মিষ্টি বিলায় মিয়া ভাইয়ের শালা, সব নেতার চাইতে আমার শেখ হাসিনা ভালা। সব মার্কার চেয়ে আমার নৌকা মার্কা ভালা। এরপরই তিনি গান শুকরিয়া শুকরিয়া, কোটি কোটি মুকরিয়া, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়া, বঙ্গবন্ধুর নৌকা মার্কায় ভোট দিয়া, শেখ হাসিনার নৌকা মার্কায় ভোট দিয়া।

একসময় প্রধানমন্ত্রী গানের মধ্যে হাতে তালি দিয়ে দিয়ে উচ্ছ্বাস জানান। জয় বাংলা জিতবে এবার নৌকা গানে মুখরিত ছিল পুরো নির্বাচনের প্রচারের সময়টা। মমতাজের গানের পরপরই সেই গানটি পরিবেশন করেন শিল্পীরা। জনসভার কারণে সকাল ১১টা থেকে শাহবাগের রূপসী বাংলা সিগন্যাল, কাঁটাবন মার্কেট মোড়, নীলক্ষেত মোড়, চান খাঁরপুল, জিপিও ও মৎস্য ভবন মোড় থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানমুখী সব রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। জনসভায় যোগ দিতে সকাল ৯টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অভিমুখী মিছিল দেখা যায় ঢাকার নানা স্থানে। বাংলা একাডেমির বিপরীত দিক দিয়ে উদ্যানে ঢোকার পথে ছিল দীর্ঘ সারি।‘জয় বাংলা’ স্লোগানের সঙ্গে ঢাক-ঢোলের বাদ্যে মুখর এই নেতা-কর্মীদের দুপুরে মাতিয়ে তোলেন জনপ্রিয় সব সঙ্গীত শিল্পী।

সকাল থেকেই নেতাকর্মীদের স্রোত, কড়া নিরাপত্তা: আওয়ামী লীগের বিজয় সমাবেশ ঘিরে সকাল থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ভিড় বাড়তে থাকে। সকাল ১১টার দিকে শাহবাগ, রূপসী বাংলা মোড়, কাঁটাবন, নীলক্ষেত, চান খাঁরপুল, জিপিও ও মৎস ভবন মোড় থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানমুখী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। পাশাপাশি ওই এলাকার সড়কগুলোতে গণপরিবহন ও সাধারণ যানবাহন চলাচল সীমিত ছিল। এ সময় শুধু সমাবেশে আসা নেতাকর্মীদের বহনকারী ট্র্যাক, পিকআপ ও বাস চলাচল করে। মাথায় টুপি, হাতে পতাকা, লাল, নীল, সাদা টি-শার্ট পরে ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, তরুণ লীগ, তাঁতী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, শ্রমিক লীগসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে আসেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল সমাবেশ ঘিরে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও তার আশপাশের এলাকায় পুলিশের পাশাপাশি, র‌্যাব, মহানগর গোয়েন্দা সংস্থা ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। শাহবাগ, মৎস্য ভবন, হাইকোর্ট এলাকা, টিএসসি, দোয়েল চত্বর, নীলক্ষেত, আইইবিসহ সবকটি সড়কে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। সমাবেশস্থলের প্রবেশ পথে আর্চওয়ে গেট বসানো হয়েছিল। হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করে নেতাকর্মীদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। মহানগর পুলিশের রমনা জোনের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, আওয়ামী লীগের সমাবেশে বিপুল পরিমাণ মানুষের উপস্থিতির কথা চিন্তা করে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এদিকে সমাবেশ ঘিরে রাজধানীর কিছু অংশে যানজট এবং কিছু অংশে গণপরিবহন সংকটে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হয়। কিছু কিছু সড়কে বাসসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। আর যেসব সড়তে অল্পসংখ্যক বাস চলাচল ছিল, এসব বাসে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। শাহবাগ থেকে মৎস ভবন, টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর।

এসব সড়কে কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল ছিল না। ব্যারিকেড বসিয়ে পুলিশ সদস্যরা যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করছিলেন। এছাড়া বাংলামোটর, রূপসী বাংলা মোড়, শাহবাগ, কাঁটাবন, নীলক্ষেত, পলাশী, বকশিবাজার, চানখারপুল, গোলাপশাহ মাজারম জিরো পয়েন্ট, পল্টন, কাকরাইল চার্চ, অফিসার্স ক্লাব, মিন্টু রোড ক্রসিং থেকে যানবাহন ডাইভারশন করে দেয়া হয়েছে। এদিকে সায়েদাবাদ, গুলিস্তান, মতিঝিল ও সদরঘাট থেকে বিমানবন্দর, আব্দুল্লাহপুর, গাজীপুর রুটে অন্যান্য দিনের মতো বাস চলাচল ছিল না। পাশাপাশি মিরপুর সড়কেও গণপরিবহন চলেছে কম।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version