বিশেষ প্রতিনিধি ঃ শেখ হাসিনার ১০ দিনের যুক্তরাজ্য সফর উপলক্ষ্যে বরাবরের মতো প্রতিবাদ বিক্ষোভের পরিকল্পনা নেয় যুক্তরাজ্য বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের শরীক জামায়াত শিবিরের কর্মীরা। কিন্তু প্রতিবারের মতো এবার আর অপমান সহ্য না করে পাল্টা জবাব দেয়ার পরিকল্পনা নেয় যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা হাসিনাকে হেনস্থকারী বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ছবি তুলে তা দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। আর ওই নেতা-কর্মীদের আতœীয় -স্বজনদের অত্যাচার নির্যাতন করারও পরিকল্পনা নেয় আওয়ামী লীগ। এছাড়া হাসিনাকে হেনস্থকারী বিরোধী দলের কর্মীরা দেশে গেলে তাদের গুম বা হত্যারও পরিকল্পনা নিয়েছে আওয়ামী লীগের বিশেষ ক্যাডার বাহিনী। অন্যদিকে শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের সাথে টেলিকনফারেন্সের সময় সরাসরি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানকে হুমকি দিয়েছেন।
দশ দিনের সরকারি সফরে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে অবস্থান করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১ মে বুধবার হিথ্রো বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাই কমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিমসহ হাইকমিশনের কর্মকর্তারা। এছাড়া যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা হিথ্রো বিমান বন্দরে উপস্থিত ছিলেন। এদিকে যুক্তরাজ্য বিএনপি শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে হিথ্রো বিমানবন্দরে প্রতিবাদী বিক্ষোভ করেছে। বিএনপি নেতারা ঘোষনা করেছে শেখ হাসিনা যতদিন ব্রিটেন থাকবে ততদিনই তাকে কালো পতাকা প্রদর্শনসহ তার অবস্থানের বাইরে বিক্ষোভ করবে। যুক্তরাজ্য বিএনপির ঘোষনা অনুযায়ী হাসিনার অবস্থান করা সেন্ট্রাল লন্ডনের তাজ হোটেলের সামনে প্রতিদিন বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে তারা। প্রতিদিন ২০ দলীয় জোটের নেতা কর্মীরা ‘কিলার হাসিনা – স্টেপ ডাউন হাসিনা’,‘হাসিনা দ্যা বুচার অব বাংলাদেশ ঃ ইউ আর নট ওয়েলকাম ইন ইউকে’ এসব শ্লোগান সম্বলিত ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিলে তারা – ‘অবৈধ প্রধানমন্ত্রী , ফিরে যাও ফিরে যাও’ , ‘ অগনতান্ত্রিক ব্যক্তির গনতান্ত্রিক ব্রিটেনে জায়গা নেই ’, ‘গুম -খুনের হোতা , তুই হাসিনা তুই হাসিনা ’ প্রভৃতি শ্লোগান দেয়। বিকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে ওই প্রতিবাদী বিক্ষোভ কর্মসূচী চলতে থাকে। বিশেষ সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে হাসিনার সাথে আসা এসএসএফ‘র সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের ছবি ও ভিডিও বর্তমান সরকারের বিশেষ বাহিনীর কাছে পাঠিয়ে দেয়। হাসিনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের হিট লিস্ট করে দেশে গেলে তাদের মেরে ফেলার পরিকল্পনা করা হয়। ছবি তুলার বিষয়টি বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীরা ব্রিটিশ পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করে। পুলিশ বিষয়টি আমলে নিয়ে আওয়ামী লীগের কর্মীদের ওই এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলে। পুলিশ তাদের কাছে যে ক্যামেরায় ছবি তোলা হয়েছে তা চাইলে তারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে জানায়, যে ক্যামেরায় ছবি তুলা হয়েছে তা নিয়ে তাদের একজন চলে গেছে। এ বিষয়টি পুলিশ নথিভুক্ত করে।
বুধবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লন্ডন সফরের প্রতিবাদে যুক্তরাজ্য বিএনপির শত শত নেতাকর্মী ও নেতৃবৃন্দ লন্ডনের হিথ্রো বিমান বন্দরের ৪নং টার্মিনালের ভিআইপি রাস্তার সম্মুখে ব্যাপক বিক্ষোভ ও কালো পতাকা প্রদশর্ন করে। এসময় সেখানে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেকের নেতৃত্বে দলের নেতা কর্মীরা হাসিনার বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতে থাকে। তারা সেখানে বিক্ষোভ করতে থাকলে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা বিএনপির বিক্ষোভ প্রতিরোধ করতে গেলে ব্রিটিশ পুলিশ বাধা দেয়। ব্রিটিশ পুলিশ জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রক্ষার দায়িত্ব তাদের। আর যারা বিক্ষোভ করছে সেটাও তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের সাথে যাতে বিএনপির নেতা কর্মীদের সংঘর্ষ না হয় সেজন্য পুলিশ দু’পক্ষকে রাস্তার দু’পাশে অবস্থান করতে বাধ্য করে। কিন্তু বিএনপির নেতা কর্মীরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে বিমান বন্দরের ভিআইপি রাস্তা অতিক্রমের সময় শেখ হাসিনার গাড়ি বহরের সামনে দাড়িয়ে পড়ে এবং ডিম, জুতা ও পানির বোতল নিক্ষেপ করে।
বৃহস্পতিবারও যুক্তরাজ্য বিএনপি সেন্ট্রাল লন্ডনে শেখ হাসিনার অবস্থান করা তাজ হোটেলের সামনে প্রতিবাদী বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রাখে। এদিকে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা শেখ হাসিনার সাথে দেখা করতে চাইলে শারীরিক অসুস্থতার কারনে তাদের সাথে দেখা করতে পারেননি তিনি। তবে নেতা কর্মীদের অনুরোধে তাদের সাথে টেলিফোনে আলাপ করে শেখ হাসিনা। টেলিফোনের লাউড স্পিকারে কথা বলার সময় মিডিয়া কর্মীরা পাশে থাকলে তারা শেখ হাসিনার সাথে আওয়ামী লীগের নেতাদের কথোপকথন রেকর্ড করে। শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বলেন,এমনিতেই যুক্তরাজ্যের কোন হোটেল শেখ হাসিনার কথা শুনলে বুকিং দিতে চায় না। তাই তিনি যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের হোটেলের সামনে জড়ো হতে নিষেধ করেন। এসময় শেখ হাসিনা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘‘বেশি বাড়াবাড়ি করলে তার মাকে জীবনেও মুক্তি দেয়া হবে না। কারন চাপ দিয়ে কিছু আদায় করা যায় না। নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, আমি চিকিৎসা শেষে আপনাদের সঙ্গে দেখা করব। তিনি আরও বলেন, তারেক রহমান তার লোক লাগিয়ে আমাকে অপমানিত করতে চায়। এই রকম করলে সে তার মা (খালেদা জিয়া) কে জীবনেও জেল থেকে বের করতে পারবেনা।’’
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা যায়, যুক্তরাজ্য বিএনপি ও জামায়াত -শিবিরের যেসব নেতা কর্মী হাসিনা বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে তাদের ছবি তোলে তালিকা করার নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হাসিনা বিরোধী ওইসব বিক্ষোভের কারনেই লন্ডনের কোন হোটেল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বুকিং দিতে রাজি হচ্ছে না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে হুমকি দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি শেখ হাসিনা। তার ধারনা তারেক রহমানের নির্দেশেই যুক্তরাজ্য বিএনপির ও জামায়াত – শিবিরের নেতা কর্মীরা তার হোটেলের সামনে বিক্ষোভ করে। আর এ কারনেই বিএনপির ও জামায়াত – শিবিরের নেতা কর্মীদের বাংলাদেশে তাদের পরিবারের সদস্যদের শায়েস্তা করতে তালিকা করার নির্দেশ দিয়েছে শেখ হাসিনা। আর হাসিনার নির্দেশেই লন্ডনের বাংলাদেশ হাই কমিশনারের গোয়েন্দারা হাসিনা বিরোধী বিক্ষোভের ছবি তোলে ও ভিডিও করে নিয়ে যায়।
এদিকে শেখ হাসিনা তাজ হোটেলে অবস্থানের পর প্রতিদিন তাকে কালো পতাকা প্রদর্শন করে যুক্তরাজ্য বিএনপির প্রতিবাদী বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। সেন্ট্রাল লন্ডনের তাজ হোটেলের সামনে ওই বিক্ষোভ কর্মসূচীতে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহর থেকে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীরা অংশ নিচ্ছে। তাদের হাতে খালেদা জিয়াকে মুক্তির দাবী সম্বলিত ব্যানার ছাড়াও আওয়ামী শাসনামলের নানা অপকর্মের বর্ননাসহ ব্যানার শোভা পাচ্ছিল ওই বিক্ষোভ কর্মসূচীতে। বিক্ষোভে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক, সেক্রেটারী কয়সর এম আহমেদ, মুজিবুর রহমান মুজিব , কামাল উদ্দিন, খসরুজ্জামান খসরু, মহিলা দলের আহবায়ক অঞ্জনা আলম , যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা ও অনলাইন এক্টিভিস্ট নাজমুল আহসান,  ডালিয়া লাকুরিয়া ছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন লন্ডন মহানগর বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট শেখ তারিকুল ইসলাম, বিএনপি নেতা সাইফ উল্লাহ, মোঃ মাহবুবুল আলম, যুক্তরাজ্য স্বেচ্ছাসেবক দলের মোঃ রাকিব হাসান, মোহাম্মাদ সাদিকুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম মজুমদার, মোঃ আব্দুস সামাদ, এস এম ওমর পারভেজ, মোঃ মহিন উদ্দিন, মোঃ বেলাল হোসাইন পাশা, মোঃ সেলিম রেজা, শেখ কামরুজ্জামান, ইমামুল আরাফাত হিমেল, মোঃ সাকোয়াত হোসেন, মোঃ মিজানুর রহমান ফরমান, মোঃ খালেদ মাহমুদ রাকিব, মোঃ দেলোয়ার হোসেন, মোঃ আশিকুল ইসলাম, মোহাম্মেদ আরিফ হোসাইন, রাজু আহমেদ, রুবেল আহমেদ, সাবেক শিবির নেতা নাওশিন মোস্তারী মিয়া সাহেব, কাজী মোঃ নুরুজ্জামান,আলী শাহজাদা, মোঃ রাশেদ খান, ছাত্রীসংস্থার সাবেক নেত্রী ও মানবাধিকার কর্মী নুসরাত জাহান সানি, শাকিল মিনহাজ, সুয়াইবুর রহমান, রাসেল হোসাইন, মোঃ আল আমীন, মাছউদুল হাসান, আলী হুসাইন, ওমর ফারুক, জাকির হোসেন, মোঃ কবির উদ্দিন, আবুল কাশেম, সামিউজ্জামান সিদ্দিকী, যুবদল নেতা আব্দুল আলীম, শরীফ মোহাম্মদ করিম, সাইফুল ইসলাম, মোহাম্মদ শামীম পারভেজ জুয়েল, মোঃ রফিকুল ইসলাম, মারুফ হোসাইন, মোঃ মিলন, দেলোয়র হোসাইন, হোসেন ইমাম তৌফিক, ইস্ট লন্ডন বিএনপি নেতা মোঃ হাসনাইন, মোঃ তানজিল ইসলাম, আল নাহিয়ান বিন মুরাদ, মোঃ ওয়াসিম উদ্দিন, মোহাম্মদ রিফাত মাহমুদ ভূঁইয়া, সালমান সাদী, মোঃ হাসান মোরশেদ, সৈয়দ তারেক আহমদ, মোঃ আব্দুল মুকিত রাজিব, সাদিয়া কিবরিয়া, হাবিবুর রহমান, মুহাম্মদ মুজাহিদ খালেদ (পাভেল), জামাল মিঞা, এম এ শামীম, কাজী ফয়সল আহমেদ, দোলায়ার হোসাইন, তানবিন আহমেদ, মোহাম্মদ তারেক ইকবাল, মোঃ সালাহ উদ্দিন, মোঃ রাসেল মাহমুদ, দেলোয়ার হোসাইন, প্রমূখ।
এদিকে গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চোখে সফল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। লন্ডনের মরফিল্ড চক্ষু হাসপাতালে তার চোখে অস্ত্রোপচার হয়েছে। রোববার দুপুরে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের জেষ্ঠ্য এক নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর চোখের অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে তিনি চিকিৎসকদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে আছেন।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কবে নাগাদ দেশে ফিরবেন কিংবা লন্ডনে তিনি দলীয় কোনো কর্মসূচিতে অংশ নেবেন কি না এ বিষয়ে নিশ্চিত করতে পারেননি আওয়ামী লীগের ওই নেতা। লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার আশিকুন নবী জানান, প্রধানমন্ত্রীর সফর সম্পর্কে তাদের কাছে নির্দিষ্ট কোনো শিডিউল নেই। তবে তার ভাগিনা ব্রিটেনের এমপি টিউলিপ সিদ্দিকীর বাসায় যেয়ে পারিবারিক মিলন মেলায় অংশ নেয়ার কথা রয়েছে।
জানা যায়, এই সফরে লন্ডনে ছোট বোন শেখ রেহানার পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর কথা রয়েছে শেখ হাসিনার। এছাড়া মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং তার স্ত্রীসহ ছেলে-মেয়েরা লন্ডনে অবস্থান করছেন। চোখের চিকিৎসা ও পারিবারিক সময় কাটানোসহ দুই দেশের রাষ্ট্রীয় উচ্চপর্যায়ে একান্ত বৈঠকও করবেন শেখ হাসিনা। শেখ রেহানার মেয়ে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক গত জানুয়ারিতে দ্বিতীয় সন্তানের মা হয়েছেন। নাতির সঙ্গে এবারই প্রথম দেখা হবে নানী শেখ হাসিনার। টিউলিপ তার নানা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে মিল রেখে ছেলের নাম রেখেছেন রাফায়েল মুজিব সেন্ট জন পার্সি। আর বড় মেয়ে আজালিয়া জয় পার্সির বয়স এ মাসেই তিন বছর পূর্ণ হয়েছে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version