এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যক চীনা বিনিয়োগকারী ও কর্মী রয়েছেন। স্থানীয়দের জন্য তারা প্রচুর সংযোগ সৃষ্টি করছেন। এ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন নই। আমরা খুশি। তারা এ দেশের অর্থনীতিকে সাহায্য করছেন। বাংলাদেশে চীনাদের বিনিয়োগ নিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন ঢাকায় সেন্ট্রাল ওমেন্স ইউনিভার্সিটির আইনের লেকচারার ফারহান হক। চীনা বিনিয়োগ ও কর্মীদের বিষয়ে সমর্থন করেন বাংলাদেশিরা ও রাজনীতিকরা। তাদের অন্যতম বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য মুহাম্মদ শফিকুর রহমান।

তিনি বলেন, আমরা বিশ্বের প্রতিটি দেশের প্রতিজনকে স্বাগত জানাই। এরই মধ্যে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছেন চীনা নাগরিকরা। যদি আপনি আমাদের মার্কেট, শপিং মল পরিদর্শন করেন তাহলে বিপুল পণ্যের সমাহার দেখতে পাবেন, যা চীনে তৈরি। চীনা বিনিয়োগ আমাদের দেশকে সহায়তা করছে। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে তারা এসব কথা বলেছেন।

এ নিয়ে দীর্ঘ এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট। এতে বাংলাদেশে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, আগে বাংলাদেশের অবকাঠামো খাত ছিল অনুন্নত। এভারগ্রিন প্রোডাক্টসের চ্যাং এক দশক আগে প্রথম বাংলাদেশে এসেছিলেন। তখন ছিল বর্ষা মৌসুম। এ সম্পর্কে চ্যাং বলেন, মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছিল। তাতে বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছিল ঢাকা। আমার গাড়ির চাকা পানিতে তলিয়ে যেত পুরোপুরি। বিদ্যুতের অবস্থা ছিল নাজুক। যখনই ঢাকা আসতাম, প্রতিবারই দেখতাম বিদ্যুতের ঘাটতি। বিদ্যুৎহীন থাকতে হতো প্রতিবার চার ঘণ্টা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্যুতের সেই অবস্থা নেই। রাস্তাগুলো চওড়া করা হয়েছে। মহাসড়ক ও ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি মনে করেন, চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তা সত্ত্বেও বিশাল কন্টেইনারবাহী জাহাজে পণ্য বাংলাদেশে পৌঁছাতে চার থেকে ৫ সপ্তাহ সময় লেগে যায়। এক্ষেত্রে চীন থেকে কম্বোডিয়ায় সময় লাগে মাত্র ১০ দিন। এজন্য চ্যাংয়ের এক বন্ধু তার কারখানা খুলেছেন কম্বোডিয়ায়। তবে বাংলাদেশে ব্যবসা করার সুবিধা একটিই। তা হলো- এখানে শ্রম খরচ কম। আর বাজে দিক হলো, শিপিংয়ে সময় লাগে অনেক বেশি। এর ফলে উৎপাদিত পণ্য কারখানায়ই জমা থাকে বেশি।

একই রকম কথা বলেছেন হংকংয়ের ডেভিড লাম মিং-হিউং। তিনি চশমা প্রস্তুতকারক একটি কারখানার জেনারেল ম্যানেজার। তার মতে, চীন থেকে পণ্যের চালান বাংলাদেশে শিপিং খাতে সময় লাগে এক মাসের মতো। যদি এক্ষেত্রে বার্থের সংকট থাকে তাহলে আরো এক সপ্তাহ সময় বেশি লাগবে। তার মতে, ১৯৭০ এর দশকে প্রথম যখন চীন উন্মুক্ত নীতি গ্রহণ করেছিল, ঠিক এই মুহূর্তে বাংলাদেশ সেই চীনের মতো। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য চীনা মডেল ব্যবহার করছে বাংলাদেশ।

২০১৬ সালে বাংলাদেশ সফর করেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি জিনপিং। ওই সময় দুই দেশ ২৭টি বিনিয়োগ ও ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করে। যার পরিমাণ ২৪০০ কোটি ডলার। সি জিনপিংয়ের ওই সফরের পর চীন থেকে বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশের একটি পত্রিকার হিসাব মতে, ২০১৭/১৮ অর্থবছরে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ কোটি ৬০ লাখ ডলার। ২০১৬/১৭ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৬ কোটি ৮৫ লাখ ডলার।

ওদিকে চীনা বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ঋণের ফাঁদে আটকে ফেলা নিয়ে যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে তাকে ভুল বোঝাবুঝি, পুরোপুরি ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করেছেন ঢাকায় চীনা দূতাবাসের উপ-প্রধান চেন ওয়েই। তিনি যোগ করেন, বাংলাদেশ শুধু চীনের সহায়তার ওপরই নির্ভর করে না। একই সঙ্গে তার অর্থনীতিতে গতি আনার জন্য নির্ভর করে ভারত, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর। এসব দেশের বিনিয়োগ ও সহায়তাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ সব দেশের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে তার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল রাখতে চায়। এক্ষেত্রে কোনো একক পক্ষকে তারা বেছে নেয় নি।

ওদিকে নয়া দিল্লির সেন্টার অব পলিসি রিচার্সের প্রফেসর ব্রাহ্ম চ্যালানির হিসাব মতে, বাংলাদেশে মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি সরকারি ঋণ হলো জাতীয় প্রবৃদ্ধির শতকরা প্রায় ১৪ ভাগের সমতুল্য। এই ঋণ সহনীয়। বাংলাদেশ এটা নিশ্চিত করতে চায় যে, তার এই ঋণের মাত্রা ম্যানেজযোগ্য। ‘বাংলাদেশ: পলিটিক্স, ইকোনমি অ্যান্ড সিভিল সোসাইটি’ বইয়ের লেখক ও লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সের প্রফেসর ডেভিড লুইস বলেন, কার্যকর রপ্তানি কৌশলের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্তিশালী। এসব রপ্তানির ওপর ভিত্তি করে দ্রুত অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। এর মধ্যে প্রধানতম খাত হলো গার্মেন্ট। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির মূলে রয়েছে এই খাত।

তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীনের পরে বাংলাদেশ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক। এ বছর বাংলাদেশ ৩৯০০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করার আশা করছে। ২০২১ সালের মধ্যে সরকার এই অঙ্ক ৫০০০ কোটি ডলারে উন্নীত করতে চায়। সূত্র : মানবজমিন

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version