আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা অবহেলা করে রাষ্ট্র পরিচালনা করি না। মানুষের সুখ-দুঃখের সাথী হয়ে, বিপদে মানুষের পাশে থেকে, তাদের কল্যাণের কথা চিন্তা করে সর্বোপরি দেশের উন্নয়ন করার নীতি নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করছি। আর সে জন্যই আজ দেশটা এগিয়ে যাচ্ছে। আগামী দিনে দেশকে কোথায় নিয়ে যাব সে পরিকল্পনাও আছে এবং সেটা ইতিমধ্যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সেই প্রস্তুতিটা আমাদের নিতে হবে। সেই পথগুলো আমাদের ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে হবে। বাধাগুলো অতিক্রম করতে হবে। আর সে জন্য সব থেকে বেশি প্রয়োজন সাংগঠনিকভাবে দলকে শক্তিশালী করা, জনমত সৃষ্টি করা।

শুক্রবার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভার শুরুতে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন বৃষ্টি হচ্ছে, বন্যা হচ্ছে, কোথাও নদীভাঙন হতে পারে বা পাহাড় ধস হতে পারে। প্রতিনিয়ত সারা দেশে কোথায় কী ঘটছে সে খবর আমরা নিচ্ছি এবং সেখানে যার যা দায়িত্ব সেটা পালন করে যাচ্ছে। এখানে এতটুকু শৈথিল্য নেই। কারণ তাদের সব কাজ আমাকে সঙ্গে সঙ্গে ‘মেসেজ’ দিয়ে জানাতে হয়।

দুর্যোগ মোকাবেলায় বিএনপি সরকারের একটি ঘটনার কথা স্মরণ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ’৯১-এর ঘূর্ণিঝড়, তখন তো বিএনপি সরকার ক্ষমতায়। তারা জানেই না এত বড় একটা ঘূর্ণিঝড় হয়েছে, এত মানুষ মারা গেছে। পার্লামেন্টে যখন আমি বললাম এত বড় ঘূর্ণিঝড় হয়েছে, এত মানুষ মারা গেছে। তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া পার্লামেন্টে বলে দিলেন, যত মানুষ মরার কথা ছিল তত মানুষ মরে নাই। আমি জিজ্ঞেস করতে বাধ্য হলাম, কত মানুষ মরলে আপনার তত মানুষ হবে বলেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমাদের দল জনগণের কথা বলার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছিল। দলটিকে সুসংগঠিত করে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন জাতির পিতা। সেই স্বাধীনতার সুফল প্রত্যেক মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছাব, আমরা এটাই চাই। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আমরা সরকার গঠন করে যে জায়গাটায় নিয়ে আসতে পেরেছি সেখানে মূল শক্তিটাই ছিল দেশের জনগণ ও তাদের সমর্থন। যে কারণে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পেরেছে।

সরকার গঠনের আগে আওয়ামী লীগের কিছু পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের নিজেদের একটা চিন্তাভাবনা, পরিকল্পনা ছিল। আমরা সরকারে এলে কী করব? কোথায় যাব? সেগুলোর সবকিছু মোটামুটি একটা তৈরি করা ছিল বলেই আমরা সরকারে আসার পর আমাদের কাজগুলো করতে পেরেছি।

উন্নয়নের যাত্রাপথের নানা বাধা-বিপত্তির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের এই চলার পথ কিন্তু খুব সহজ ছিল না। প্রতি পদে পদে বাধা, অগ্নিসন্ত্রাস, খুন, নির্যাতন অনেক কিছু সহ্য করতে হয়েছে। তারপরও আমরা কিন্তু এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি। আমরা একটা লক্ষ্য পূরণ করতে পেরেছি। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যে স্বীকৃতি পেয়েছি সেটাকে আমাদের ধরে রাখতে হবে।

ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সাংগঠনিকভাবে দলকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি জনমত সৃষ্টি করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। এ জন্য দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের সক্রিয় হওয়ার তাগিদ দেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, উপদেষ্টারা আমাদের ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্কের’ মতো। আপনাদের সবাইকে সক্রিয় হতে হবে। আমাদের বিভিন্ন উপ-কমিটি করা আছে। আপনারা মিটিং, সেমিনার করছেন। সেটা অব্যাহত রাখেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ১০ বছরে আমরা কিন্তু হোঁচট খাইনি কিংবা পিছিয়ে যাইনি, আবার হঠাৎ করেও লাফ দিইনি। আমরা খুব স্থিরভাবে দেশটাকে ধাপে ধাপে এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। আমরা আরও সামনে যেতে চাই। বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ গড়তে চাই। সে পরিকল্পনা আমাদের আছে।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে কিছু লোক আছে যাদের কোনোকিছুই ভালো লাগে না। আমরা অর্থনৈতিকভাবে যতদূরই এগোই, কিছু লোক সবসময় এটাকে ভিন্ন চোখে দেখে, এটা তাদের অভ্যাস। তারা আসলে কখনও গণতান্ত্রিক ধারাটা চায় না। গণতান্ত্রিক ধারাটা হলে আমার মনে হয় তাদের যেন দম বন্ধ হয়ে যায়। তারা নিঃশ্বাস নিতে পারে না। তাদের কাছে মনে হয় যেন অস্বাভাবিক কিছু হলে তাদের খুব দাম বাড়ে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, দেশের মানুষ দরিদ্র থাকবে না। বিনা চিকিৎসায় কষ্ট পাবে না। অশিক্ষার অন্ধকারে থাকবে না। এ দেশটা হবে সার্বিকভাবে একটা উন্নত সমৃদ্ধ দেশ। হ্যাঁ, আমরা খুব বড় বড় উন্নত দেশের মতো উন্নয়ন হয়তো করতে পারব না; কিন্তু প্রতিটি মানুষই তার জীবনটাকে অর্থবহ করবে, দারিদ্র্যের হাত থেকে মুক্তি পাবে, সুন্দরভাবে বাঁচতে পারবে- এমন একটি দেশ আমরা গড়ে তুলব।

  1. সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
Share.

Comments are closed.

Exit mobile version