সীমান্ত পেরিয়ে নানা কৌশলে ঢুকছে অস্ত্র। আর এ অস্ত্র বহন করতে এক শ্রেণির গরিব লোকজনকে ভাড়া করে অস্ত্র কারবারিরা। অল্প টাকার বিনিময়ে তারা সীমান্ত পার করে নির্দিষ্টস্থানে অস্ত্র পৌঁছে দেয়। ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় অস্ত্র পৌঁছাতে সহযোগিতা করে ভারতের লোকজন। এসব অস্ত্র প্রস্তুতের জন্য ভারতে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট কারখানা। অল্প টাকাতেই এসব কারখানায় অস্ত্র তৈরি করা হয়। এই অস্ত্রের অন্যতম বাজার হচ্ছে বাংলাদেশ। দেশে ঢোকার পরপরই অস্ত্রগুলো চলে যায় অপরাধীদের হাতে।

কখনও কখনও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সদস্যরা জব্দ করেন এসব অস্ত্র। অবৈধ এসব অস্ত্র সন্ত্রাসী, জঙ্গি ও ডাকাতদের হাতে চলে যায়। তাছাড়াও বৈধ অস্ত্রের পাশাপাশি প্রভাবশালীদের অনেকে সংগ্রহে রাখেন অবৈধ অস্ত্র।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে অবৈধ অস্ত্র সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য। যশোরের দর্শনা, বেনাপোল, সাতক্ষীরার শাঁকারা, মেহেরপুর, চাপাইনবাবগঞ্জ, কুমিল্লাসহ অন্তত ৩০টি রুট দিয়ে আমদানি করা হয় অবৈধ অস্ত্র। বিভিন্ন পণ্যের গাড়িতে করে এসব অস্ত্র আমদানি হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অস্ত্রের বিভিন্ন অংশ আলাদা আলাদাভাবে আমদানি করা হয়। কারও কাছে স্প্রিং বা ট্রিগার, কারও কাছে শুধুই নল। এভাবেই নানা কৌশলে আমদানি করা হয় অবৈধ অস্ত্র। গত মাসে সীমান্ত এলাকায় ছয়টি বন্দুক, একটি পিস্তল, ৫৩টি ককটেল ও ৬২ রাউন্ড গুলি জব্দ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ। মে মাসে দুটি পিস্তলসহ বিভিন্ন ধরণের ১২টি আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করা হয়। একইভাবে এপ্রিল মাসে আটটি পিস্তল জব্দ করে বিজিবি।

বিজিবি’র কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে কিছু অস্ত্র আটক হলেও গোয়েন্দাদের ধারণা বেশিরভাগ চালানই বিজিবিসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশে নিয়ে আসা হচ্ছে। ভারত থেকে বাংলাদেশে অস্ত্র এনে ৩০ হাজার থেকে লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়।
বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ সেন্টার বিডিপিসি’র গবেষণা সূত্রে জানা গেছে, দেশে অবৈধ অস্ত্র আমদানির শতাধিক সিন্ডিকেট রয়েছে। অবৈধ অস্ত্রের মালিকরা অস্ত্র ভাড়া দিচ্ছেন এক শ্রেণির সন্ত্রাসীদের কাছে। যশোর, খুলনা ছাড়াও চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙ্গামাটির পাহাড়ি এলাকায় অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে প্রায়ই। সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো আধিপত্য বিস্তারের জন্য এসব অস্ত্র ব্যবহার করছে। একইভাবে দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করে সন্ত্রাসীরা।
অত্যাধুনিক অস্ত্র প্রবেশের বিষয় আলোচনায় আসে গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পরপরই। হলি আর্টিজানে হামলার জন্য চাঁপাই নবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে আমের ঝুড়িতে করে আনা হয় অস্ত্র। এরমধ্যে পিস্তল ও পাঁচটি একে-২২ ছিল। একইভাবে যশোরের চৌগাছা সীমান্ত দিয়ে করা আনা হয় বোমা।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে আসা বেশির ভাগ অস্ত্র তৈরি হয় ভারতে। ভারতের বিহারের রাজধানী পাটনা থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বের শহর মুঙ্গেরে তৈরি হয় এসব অস্ত্র। মুঙ্গের তৈরি অস্ত্র অবৈধ পথে আসে বাংলাদেশে। গত বছরের শেষের দিকে পাচারের সময় প্রায় অর্ধশত একে-৪৭ বন্দুক জব্দ করে ভারতের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। মুঙ্গেরের চুরওয়া, মস্তকপুর, বরহদ, নয়াগাঁও, তৌফির দিয়ারা, শাদিপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে কুটির শিল্পের মতো অবৈধ অস্ত্র তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানায় অল্প খরচে অস্ত্র তৈরি করে বাংলাদেশের অবৈধ অস্ত্রের সিন্ডিকেটের কাছে বিক্রি করা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেখানে অর্ডার দিয়ে অস্ত্র তৈরি করে অপরাধী চক্র।

এসব বিষয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের পিআরও মুহম্মদ মোহসিন রেজা বলেন, বিভিন্ন কৌশলে অস্ত্র, চোরাচালান আমদানি করে চোরাকারবারিরা। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিজিবি অত্যন্ত তৎপর। যে কারণেই অবৈধ অস্ত্র আটক হচ্ছে বলে জানান তিনি।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version