কাশ্মিরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা তুলে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ভারত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে সাক্ষাতের পর দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সোমবার এই ঘোষণা দেন। পাশাপাশি সোমবার রাজ্যসভায় এ সংক্রান্ত বিলও উত্থাপন করেছেন অমিত শাহ। আর এর মাধ্যমে সংবিধানের ৩৭০ ধারা তুলে দিয়ে কাশ্মিরের সাংবিধানিক মর্যাদা কার্যতঃ বাতিল করলো ভারতের মোদি সরকার।

কিন্তু ভারতীয় সংবিধানের ৩৫-এ এবং ৩৭০ ধারায় কী সুবিধা ভোগ করতেন কাশ্মিরের মুসলমানরা? আর কেনই বা এই ধারা নিয়ে ভারতের হিন্দুত্বাদী সরকার এতোটা বেসামাল? ভারতীয় সংবিধানের ৩৫-এ ধারা অনুযায়ী ভারত অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মিরের স্থায়ী বাসিন্দাদের বিশেষ অধিকার ও সুবিধা দেয়া হয়েছে। ৩৫-এ ধারা অপসারণ করা হলে বাইরের অন্যান্য রাজ্যের লোকজন সেখানে জমি কিনে বসতি স্থাপন করার সুযোগ পাবে এবং উপত্যকার স্থায়ী বাসিন্দা হতে পারবে। এতোদিন ভারতের অন্যান্য রাজ্যের লোকজন কাশ্মিরে জমি কিনতে পারতেন না এবং সেখানে স্থায়ী বাসিন্দা হতে পারতেন না। সংবিধানের এই ধারা তুলে দেয়ার ফলে কাশ্মিরের মুসলিম জনগোষ্ঠীর স্বতস্ত্র বৈশিষ্ট হুমকির মুখে পড়বে।

দেশটির বর্তমান ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি ও আরএসএসের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কাশ্মীরি মানুষজন নিজ ভূমিতে সংখ্যালঘু হয়ে পড়বেন ও ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনিদের মতো তাদেরও বাস্তুচ্যুত হতে হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে সুপ্রিম কোর্টে কাশ্মিরকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে ভারতীয় সংবিধানের ওই ধারাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিমকের্টে আবেদন করে বিজেপি-আরএসএসের মদতপুষ্ট এক বেসরকারি সংগঠন। ২০১৪ সালে সুপ্রিমকোর্টে করা ওই আবেদনে জম্মু-কাশ্মির থেকে ৩৫-এ ধারা বাতিল করার আবেদন জানানো হয়।

সে সময় জম্মু-কাশ্মির সরকার আদালতে পাল্টা হলফনামা দিয়ে ওই আবেদন খারিজ করার দাবি জানায়। কিন্তু জম্মু-কাশ্মির সরকার একাধিকবার অনুরোধ করলেও কেন্দ্রীয় সরকার ওই ধারার পক্ষে কোনো সাফাই দেয়নি। অধিকন্তু অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেনুগোপাল বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন।

জম্মু-কাশ্মিরের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিও ওই ইস্যুতে এর আগে বলেছিলেন, ‘রাজ্য থেকে ৩৫-এ ধারা তুলে নেয়া হলে উপত্যকায় ভারতের জাতীয় পতাকা তোলার মতো আর কেউ থাকবে না।’ জম্মু-কাশ্মির রাজ্যের বিজেপি মুখপাত্র বীরেন্দ্র গুপ্ত সে সময় বলেন, ‘মেহবুবার মন্তব্যে আমরা হতবাক! ভারতীয় সংবিধানে সাময়িকভাবে ৩৭০ ধারা যুক্ত করা হয়েছিল। সংবিধানের ৩৫-এ ও ৩৭০ ধারা এমন নয় যে তাতে হাত দেয়া যাবে না।’

জম্মু-কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ডা. ফারুক আবদুল্লাহ অবশ্য বলেন, ওই ধারা তুলে দেয়া হলে, জম্মু-কাশ্মির নিয়ে অনেক প্রশ্নই উঠে আসবে এমনকি জম্মু-কাশ্মিরের ভারতভুক্তি নিয়েও বিতর্ক উঠবে। কেন্দ্রীয় সরকার এসব নিয়ে বিতর্কের জন্য প্রস্তুত আছে তো?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাশ্মিরকে দেয়া বিশেষ মর্যাদা সম্বলিত ধারা ৩৭০ ও ৩৫এ ধারা বিলুপ্ত করা হলে কাশ্মির ভারতের অন্যান্য সাধারণ রাজ্যের মতো করেই ভাগ করা হবে, পুনর্বিন্যাস করা যাবে আইনসভার আসনও।

এরই মধ্যে যেসব গুঞ্জন বেশি ছড়িয়েছে তা হলো, কেন্দ্র সরকার সংবিধানের ৩৭০ ধারা, ৩৫এ ধারা বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মিরকে আলাদা রাজ্য ঘোষণা করতে পারে। একইসাথে লাদাখকে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে পরিণত করে দুই রাজ্যের আসন পুনর্বিন্যাস করতে পারে। সেইসাথে বড়সড় রকমের সামরিক অভিযান পরিচালনা করা হতে পারে ভারত অধিকৃত পুরো জম্মু-কাশ্মির জুড়ে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version