পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে মধ্যে সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য পর্দার অন্তরালে কূটনৈতিক আলোচনা যখন অনেক দূর এগিয়েছে এমনকি নরেন্দ্র মোদি ও ইমরান খানের মধ্যে একটি বৈঠকও আয়োজনের প্রস্তুতি চলছিল তখনই কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করেছে ভারত। এমন দাবি করেছে পাকিস্তানের সংবাদ মাধ্যম দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
পত্রিকাটি লিখেছে, ভারত সরকার অধিকৃত কাশ্মিরের বিশেষ মর্যদা বাতিল করার মাত্র কয়েকদিন আগে দিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে পর্দার অন্তরারে আলোচনা অনেকদূর গড়িয়েছিল। আগামী মাসে নিউ ইয়র্কে মোদি ও ইমরানের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক আয়োজন ছিলো এই আলোচনা কেন্দ্রবিন্দুতে। জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে হওয়ার কথা ছিলো বৈঠকটি।
এছাড়া দুই দেশের মধ্যকার দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা সংলাপও চালু করার পরিকল্পনা ছিলো এর মাধ্যমে। কিন্তু ভারত সরকার কাশ্মির নিয়ে বিতর্কীত পদক্ষেপটি নেয়ায় দুই দেশের মধ্যে আবারো উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ফলে মোদি-ইমরান বৈঠকসহ অন্যান্য অগ্রগতি যে বাতিল হচ্ছে সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না।
এক্সপ্রেস ট্রিবিউন লিখেছে, ভারত ও পাকিস্তান- উভয় দেশের কূটনৈতিক সূত্র থেকে তারা পর্দার অন্তরালে সম্পর্ক উন্নয়নের আলোচনার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। মে মাসে মোদি দ্বিতীয় দফা ক্ষমতায় আসার পর এই আলোচনা শুরু হয়। তবে সংবাদ মাধ্যমে যাতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা না হয় সে জন্যই এই তৎপরতা গোপন রাখা হয়েছিল।
পাকিস্তান থেকে সম্প্রতি বহিষ্কৃত ভারতীয় হাইকমিশনার অজয় বিসারিয়া ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব সোহাইল মাহমুদ নিজ নিজ দেশের পক্ষে এই গোপন আলোচনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন।
ভারতের সর্বশেষ নির্বাচনের পর মোদি ও ইমরান খানের মধ্যে চিঠি চালাচালির পরই এই গোপন কূটনৈতিক তৎপরতার পথ খুলেছিল বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে। এক কর্মকর্তা বলেছেন, মোদিকে ইমরানের টুইটারে শুভেচ্ছা জানানো থেকে টেলিফোন আলাপ- সব কিছুই সতর্ককতার সাথে সাজানো হয়েছিল।
এছাড়া গত জুনে বিশকেকে অনুষ্ঠিত সাংহাই সহযোগিতা সম্মেলনেও দুই দেশের রাষ্ট্রনেতার মধ্যে পরিকল্পিতভাবেই ছোট্ট একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তবে আলোচনা এড়াতে উভয় দেশ বৈঠকটিকে অনানুষ্ঠানিক হিসেবে ঘোষণা দেয়; কিন্তু ওই সময় ‘শুধু করমর্দন ও শুভেচ্ছা বিনিময় হয়েছে’ বলা হলেও এর বেশি কিছু আলোচনা হয়েছিল দুই নেতার মধ্যে।
আর এই সবকিছুই করা হচ্ছিল দুই দেশের মধ্যে নতুন করে কূটনৈতিক যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য। যাতে বিষয়টি নিয়ে বেশি আলোচনা না হয় সে জন্য উভয় দেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রকাশ্যে কোন ঘোষণা না দেয়ার। সম্পর্ক উন্নয়নের স্বার্থে ভারতের কিছু দাবি পূরণে পাকিস্তান সরকার আগ্রহীও হয়েছিল; কিন্তু কাশ্মির নিয়ে ভারতের হঠাৎ পদক্ষেপের ফলে দুই দেশের সম্পর্ক আবার খারাপ হতে শুরু করে। এত অগ্রগতির মধ্যেও ৫ আগস্ট ভারতের এমন পদক্ষেপে আশ্চর্য হয়ে যায় ইমরান খানের সরকার।
যে ইমরান খান এক সময় বলেছিলেন কাশ্মির সমস্যা সমাধানে সবচেয়ে ভালো কাজ করতে পারবেন নরেন্দ্র মোদি, তিনিই এই ঘটনার পর মোদিকে হিটলারের সাথে তুলনা করেন।
এত কিছুর কারণে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের আলোচনা বাতিল হয়ে যায়। যাকে পাকিস্তানি সংবাদ মাধ্যমটি বর্ণনা করেছে ‘পেছন থেকে ছুরিকাঘাত’ হিসেবে।