বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, সরকারের পায়ের তলায় মাটি নেই। তিনি বলেন, ‘এভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবেন না, আপনাদের সময় খুব কম। তাই এখনো সময় আছে, দয়া করে বেগম খালেদা জিয়ার কোনো অঘটন ঘটার আগেই তার মুক্তির ব্যবস্থা করুন, তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় জনগণ কিন্তু আপনাদের ক্ষমা করবে না।’
আজ মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন’ আয়োজিত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ফারুক বলেন, “সরকারের গোয়েন্দারা বিএনপি নেতাদের নিয়ে ব্যস্ত। গোয়েন্দারা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় পাহারা দেয়। তারা ব্যস্ত রয়েছে পিজি হাসপাতালের ছোট্ট রুমে কোনো চিঠি আদান-প্রদান করা হচ্ছে কিনা তা নিয়ে। কিন্তু এত বড় একটি ঘটনা ঘটে গেলো, রোহিঙ্গারা এত বড় একটি সমাবেশ করলো, সারা সমাবেশে ডিজিটাল টি-শার্ট রঙিন পোস্টার সমাবেশে অবৈধ টেলিফোনের ব্যবহার হলো – অথচ সরকারের একজন ঊর্ধ্বতন মন্ত্রী বললেন- ‘আমরা এটা কিছুই জানি না’। তাই আমি মনে করি এই সরকারের কাছে দাবি করে কোনো লাভ নেই।”
সংসদ সদস্যদের কর্মকাণ্ড নিয়ে সরকার চরম বিপাকে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘অবৈধ সংসদে চলছে প্রমোদ ভাষণ, আনন্দ বিনোদন। সংসদ সদস্যদের কর্মকাণ্ড নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে সরকার। সাম্প্রতিক সময়ে এক সাংসদের যে ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে এটা নিয়েও সরকার চরম বিপাকে আছে।’
রোহিঙ্গাদের সমাবেশ সম্পর্কে সরকারের পূর্বে জানা ছিল না- পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, ‘যে সরকার নির্বাচিত নয়, যে সরকার গত দুই বছরে রোহিঙ্গাদের সমস্যা সমাধানে কূটনৈতিক তৎপরতায় সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। যে সরকার ব্যস্ত রয়েছে শুধু বেগম জিয়ার কারাবাস দীর্ঘায়িত করায়, তাদের পক্ষে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করা কখনোই সম্ভব নয়।’
‘বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রোহিঙ্গাদের সুরে কথা বলছেন’- আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে ফারুক বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের সাহেব এই কথাগুলো কেন বলছেন সেটা আমরা জানি। কারণ তাদের পায়ের নিচে কোনো মাটি নেই, তারা গণতান্ত্রিক সরকার নয়, তারা অবৈধ সরকার। ২৯ ডিসেম্বর রাতের সরকার।’
‘রাজাকারদের তালিকা তৈরি করা হবে’- মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রীর এমন বক্তব্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই অবৈধ মন্ত্রীর কাছে আমি জানতে চাই- মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনাদের নেতারা কয়জন ছিলেন ইন্ডিয়ায়, কয়জন ট্রেনিং নিয়েছিলেন? আমার দাবি, একাত্তরে কলকাতায় বসে কারা মুভি দেখেছেন তাদেরও একটি তালিকা করা দরকার। এই সরকার মুক্তিযুদ্ধের দাবিদার সরকার এটা আমি বিশ্বাস করি না। এরা যদি মুক্তিযুদ্ধের সরকার হতো তাহলে রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বাধীনতার ঘোষকের স্ত্রী কোন কারণে আজ কারাগারে?’
সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের এ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি হতাশ নই। কোনো রাজনৈতিক কর্মীর হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। বিএনপি হতাশ দল নয়, বিএনপি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শের দল। তাই আমি এই সরকারকে বলতে চাই, আপনারা ব্যাংক খেয়েছেন, শেয়ারবাজার খেয়েছেন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছেন, বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছেন, আপনারা ৩০ তারিখের ভোট ২৯ তারিখ রাতে করেছেন। কিন্তু একবার সুযোগ পেলে বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মী মাঠে নেমে আসবে, তখন কিন্তু পালাবারও পথ পাবেন না।’
‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের’ সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে এবং ছাত্রদল নেতা পলাশ মন্ডলের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা: মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক আরিফা সুলতানা রুমা, কৃষক দলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মিয়া মোহাম্মদ আনোয়ার, ছাত্রদল নেতা আহমেদ শাকিল ও সংগঠনের নেতা মো: জিয়াউল হক আনোয়ার প্রমুখ বক্তব্য দেন।