আসামের সমস্যার মাধ্যমে ভারত
বাংলাদেশকে চাপে রাখতে চায়

ইতিহাস গবেষক ও সাংবাদিক এম নূরুন্নবী বলেছেন, এনআরসি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রমানিত হয়েছে আসামে এক কোটি অবৈধ বাংলাদেশী থাকার বিষয়টি বাংলাদেশ বিদ্বেষী প্রপাগান্ডা ছাড়া আর কিছুই না। ভারতীয় শাসকগোষ্ঠী মনে করে, যেহেতু আসামে মুসলমানরা দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠী ( ৩৫%),ফলে মুসলিম জনসংখ্যা বাড়তে থাকলে আসাম একদিন কাশ্মীরের মতো মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ রাজ্যে পরিণত কবে। একদিকে ট্রাইবালদের কাছে বাঙ্গালী বেড়ে যাওয়ার আতংক অন্যদিকে দিল্লীর কাছে বাঙ্গালী মুসলিম বেড়ে যাওয়ার আতংক। মূলত ওই দুই আতংকের কারনেই এনআরসি প্রক্রিয়া করেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। গত বৃহস্পতিবার ইউনিভার্সাল ভয়েস ফর জাস্টিস ( ইউভিজে) আয়োজিত ‘‘এনআরসি অব আসাম ঃ পার্সপেক্টিভ অব সাউথ এশিয়া’’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
ইউনিভার্সাল ভয়েস ফর জাস্টিসের ভাইস চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলামের পরিচালনায় আয়োজিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের চেয়ারম্যান আবু সালেহ ইয়াহিয়া।

সেমিনারে আসামের সাম্প্রতিক এনআরসি ভারত ও এর পাশ্ববর্তী দেশসমূহে কোন প্রভাব পড়বে কিনা আর পড়লেও তা কি ধরনের প্রভাব পড়বে এসব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন বক্তারা। সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইউভিজের পাবলিক রিলেশন সেক্রেটারী ফরিদুল ইসলাম, অফিস সেক্রেটারী তরিকুল ইসলাম, রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং সেক্রেটারী বি এম মাজহারুল ইসলাম, সোশ্যাল মিডিয়া সেক্রেটারী ওমর ফারুক, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সেক্রেটারী ফয়েজ উল্লাহ, মানবাধিকার সংগঠন হোয়াইট পিজিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, ইউভিজের সদস্য মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, কবির হোসেন, ইশতিয়াক হোসেন, আশরাফুল ইসলাম ফেরদৌস, কাজী মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, নুসরাত জাহান সনি প্রমুখ।

সেমিনারে এম নূরুন্নবী বলেন, আসামে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ অবৈধ বাংলাদেশী বলতে মূলত বাংলাদেশী মুসলিমদেরকেই বুঝিয়ে থাকে। আর হিন্দুদের বেলায় তারা শরনার্থী শব্দটি ব্যবহার করে থাকে। ঐতিহাসিকভাবে আসামে ট্রাইবাল বনাম বাঙ্গালী দ্বন্দ্ব রয়েছে। ট্রাইবাল জনগোষ্ঠী মনে করে, বাঙ্গালী জনসংখ্যা বাড়তে থাকলে একসময় তারা আসামে মাইনোরিটি হয়ে যাবে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিজেপি/ আরএসএস এর সদস্যরা বাঙ্গালী – ট্রাইবাল দ্বন্দ্বকে হিন্দু – মুসলমান দ্বন্দ্বে রুপান্তরিত করেছে।

তিনি বলেন, এনআরসির ফলাফলে দেখা গেছে , চূড়ান্ত তালিকা থেকে ১৯ লাখ লোকের নাম বাদ পড়েছে। যাদের ,মধ্যে ৪ লাখ আপীল করেনি। তারা মূলত আসামের আশেপাশের রাজ্য থেকে এসেছে অর্থাৎ এনআরসি তালিকা থেকে বাদ পড়া লোকের সংখ্যা ১৫ লাখ। এই ১৫ লাখের মধ্যে ৫/৬ লাখ মুসলমান রয়েছে। এইসব মুসলমানদের মধ্যে সবাই আসামের স্থানীয় বাসিন্দা। তবে নদী ভাংগন – বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে তারা যথাসময়ে ডকুমেন্ট জমা দিতে পারেনি। আবার অনেকে অতি দারিদ্রতার কারনে সঠিক ডকুমেন্ট সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়েছে। বাকী যে ৯/১০ লাখ হিন্দু বাদ পড়েছে তাদের পরিবারের কোন না কোন সদস্যের নাম এনআরসিতে এসেছে। ওইসব লোক আইনের সহায়তায় চূড়ান্ত তালিকায় তাদের নাম নিতে সক্ষম হবে। তাছাড়া হিন্দুদের মধ্যে যারা দরিদ্র ও পড়াশুনা না জানা লোক রয়েছে তারা কিছুটা আর্থিক সহায়তা পেলে এবং প্রতিবেশি শিক্ষিতের সহায়তা করলে যথাসময়ে ডকুমেন্ট জমা দিয়ে আসামের স্থানীয় বাসিন্দা প্রমান করতে পারবে।

অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, আসামের এক কোটি অবৈধ বাংলাদেশী থাকার বিষয়টি একটা প্রপাগান্ড ছাড়া কিছুই না। এই প্রপাগান্ডার ক্ষেত্রে ট্রাইবালদের যেমন কর্তৃত্ব ধরে রাখার বিষয়টি জড়িত তেমনি দিল্লীর কাছে আসামে কাশ্মীরের মতো মুসলিম মেজরিটি হওয়ার আতংক কাজ করতেছে। তবে কেউ কেউ মনে করেন দিল্লী এই প্রপাগান্ডার মাধ্যমে বাংলাদেশকে রাজনৈতিকভাবে চাপে রাখতে চায়।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version