মাহবুব আলী খানশূর ঃ বর্তমান সময়ে আলোচিত ক্যাসিনো খালেদ এর কথা বললে কারো সমস্যা হয় না কে এই খালেদ। ক্যাসিনো ও মাদক ব্যবসা নিয়ে আটক খালেদ মাহমুদকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে গুলশান থানায় ও মাদক আইনে মতিঝিল থানায় পৃথক দুটি মামলার হয়েছে। অবৈধ অস্ত্র, মাদক ও ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে অস্ত্রসহ আটক করে র‌্যাব।
খালেদ অস্ত্র , মাদক ও ক্যাসিনো ব্যবসা পরিচালনা করলেও তৃণমূলে প্রতিটি স্পটে যেতেন না। এক্ষেত্রে তার বিশ্বস্ত সঙ্গি ইকবাল হোসেন জয় যেতেন প্রতিটি স্পটে । সে ছিল খালেদের ডান হাত।খালেদের সমস্ত অপকর্মের সাক্ষী এই ইকবাল হোসেন জয়। যার মাধ্যমে খালেদ তার অপকর্মে ৮০ শতাংশ কাজ সংঘটিত করতো। ঢাকার এক বস্তিতে বেড়ে উঠে এই জয়। পরবর্তীতে খালেদের হাত ধরে ঢাকার আন্ডরওয়ার্ল্ডে কাজ শুরু করে। তার বাবা ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ।
ধানমন্ডির কলাবাগান ক্লাবের ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রক কৃষকলীগের কেন্দ্রিয় নেতা শফিকুল আলম ফিরোজ। ৭/৮ বছর ধরে পান্থপথ, কলাবাগান ও রাজাবাজারের কিছু অংশ, মিরপুর রোডের পূর্ব অংশে যারা বাড়ি করবে তাদের নগদ টাকা ও একটি করে ফ্ল্যাট দিতে হতো ফিরোজকে। আর খালেদের নিয়ন্ত্রনে ছিল খিলগাও ও সবুজবাগ এলাকা। এছাড়া আরো কিছু এলাকায় খালেদ ইকবাল হোসেন জয়কে দিয়ে বাড়ি করা বাবদ নগদ টাকা চাঁদা আদায় করতো। মানুষ খুন থেকে শুরু করে চাদাঁবাজি, টেন্ডারবাজি এমন কোন অপকর্ম নাই যা করে না ইকবাল হোসেন জয়। নির্দিষ্ট ওই এলাকা গুলোতে কেউ জমি কিনলে, এপার্টমেন্ট তুলতে চাইলে,তাদের চাদাঁ দিতে হয়। নিউমার্কেট এর ছোট বড় অনেক ব্যাবসায়ীরা তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ।
ঢাকায় কয়েকটি ফ্লাট, বিভিন্ন মার্কেটে দোকান, ব্যাংকে অঢেল টাকা রয়েছে তার। এগুলো কোনটিই টাকার বিনিময়ে কেনা নয়, বরং মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জিম্মি করে কেড়ে নেয়া। তাদের এই অপকর্মের কথা অনেকে জানলেও কেউ প্রানের ভয়ে মুখ খুলে না। এছাড়া নীরিহ লোকদের ব্ল্যাকমেইল করার মতো জঘন্য কাজও করা হতো খালেদ ও জয়ের টর্চার সেলে। খালেদের বিরুদ্ধে কেউ কোন কাজ করছে কিনা , ইকবাল ইনফর্মা হিসেবে সেই কাজ করতো।
নিজেদের অবৈধ ব্যবসা নির্ধিদায় পরিচালনা করতে পুলিশ, আওয়ামী রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও শিক্ষাবিদদের নিয়মিত সুন্দরী নারী সরবরাহ করতো এই খালেদ ও ইকবাল হোসেন জয়। উপর মহলে নারী সাপ্লাই দিয়ে থাকে বলে সে ওই জগতে ‘ এমবি ইকবাল ’ নামে পরিচিত। কলিমুল্লাহ, ইকবাল সোবহান চৌধুরী, হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন , শাবান মাহামুদ, খালেদ সহ উচ্চ পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা, ঢাকার সবাইকে সে নারী সাপ্লাই দিয়ে থাকে নিয়মিত। সাকিবের অসংখ্য ছবিতে লগ্নি হয় খালেদের কালো টাকা। আর তা হয় এই ইকবালের মাধ্যমে।
খালেদের খুটির জোর যুবলীগ তথা আওয়ামী লীগ। আর ইকবাল হোসেন জয়ের খুটির জোর খালেদ। ফিল্ম পাড়ায় যেকোন কারনে প্রতিটি ক্ষেত্রে জয়, খালেদকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। প্রকাশ্যে নামকরা পরিচালক, প্রযোজককে সে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং প্রান নাশের হুমকি দেয়। জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্নধার আজিজকে একদিন সবার সামনে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। ২০১৭ সালের ২০ এপ্রিল বিকাল ৫টায় নামকরা চলচিত্র পরিচালক বদিউল আলম খোকনকে এফডিসির প্রয়োজক সমিতির সামনে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ও হুমকি দেয় জয়। পরে তেজগাও শিল্পাঞ্চল থানায় সাধারণ ডায়েরী ( জিডি) করেন বদিউল আলম খোকন। এসব তথ্য সাংবাদিক সম্মেলন করে সবাইকে জানান পরিচালক খোকন। চলচিত্র জগতের সবাই তাদের ভয়ে মুখ না খুললেও সবাই বিরক্ত তাদের আচরন ও হুমকিতে।
ব্যাক্তিগত জীবনে তিনটি বিয়ে করেছে ইকবাল হোসেন জয়। তার বর্তমান স্ত্রী ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী জেনিফার ফেরদৌস। সে বর্তমানে মহিলা আওয়ামী লীগের একজন কর্মী এবং একজন টিভি মিডিয়া কর্মী। পরিবার নিয়ে যখন সে ব্যাংকক, সিংগাপুর, মালেশিয়া যায় তখন টাকা বস্তায় করে নিয়ে যায়। অবৈধ টাকা হওয়ায় ক্রেডিট কার্ড বা অন্য কোনভাবে টাকা নিতে পারে না জয়।
সূত্র জানায়, খালেদের ক্যাসিনোর বিষয়ে পুলিশ ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সংস্থা এবং রাজনীতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জানতেন। তাদের ‘ম্যানেজ করে’ ক্যাসিনো চালাতেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন খালেদ। এ দিকে দু’টি ক্লাবের দু’জন শীর্ষ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হলেও আরো অনেক ক্লাব রয়েছে যেখানে জুয়া পরিচালনার তথ্য প্রমাণের পরও তাদের শীর্ষ সারির কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। এ নিয়ে নানা কানাঘুষা রয়েছে। ইতোমধ্যে অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন। আবার অনেকে গ্রেফতার এড়িয়ে চলছেন বলে জানা গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দু’জন কর্মকর্তা বলেছেন, যেসব ক্লাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ মিলবে তার প্রতিটিতেই অভিযান চালানো হবে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version