জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে শুক্রবার বক্তব্য রেখেছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। দুজনের বক্তব্যের প্রতি আলাদা দৃষ্টি ছিল বিশ্ববাসীর। বিশেষ করে কাশ্মীর ইস্যুতে দুজনের মতামত প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে এ বিষয়ে কোনো শব্দই উচ্চারণ করেননি মোদি। অন্যদিকে ইমরান খান সতর্ক করেন, অঞ্চলটিতে ‘রক্তগঙ্গা’ বইতে পারে। এ খবর দিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।
শুক্রবার জাতিসংঘের সদরদপ্তরে দেয়া বক্তব্যে ইমরান বলেন, ভারত-শাসিত কাশ্মীর থেকে অবরোধ প্রত্যাহার করে নিলে সেখানে রক্তগঙ্গা বইবে। তিনি কাশ্মীরে মোদির পদক্ষেপকে ‘নির্মম’ ও ‘বোকামি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। প্রসঙ্গত, আগস্টের শুরুর দিকে কাশ্মীরের স্বায়ত্ত্বশাসনের অধিকার কেড়ে নেয় মোদি সরকার। এরপর থেকে অঞ্চলটিতে নজিরবিহীন অবরোধ জারি করে রাখা হয়েছে। সেখানে মোতায়েন রয়েছে কয়েক লাখ সেনা। এছাড়া পাকিস্তানের সঙ্গেও নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে ভারতের। ভারত-শাসিত কাশ্মীরিদের পক্ষে লড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ইমরান। অন্যদিকে, ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতারা হুশিয়ারি দিয়েছেন, এটা ভারতের নিজস্ব ব্যাপার। এতে পাকিস্তান যেন হস্তক্ষেপ না করে। এমতাবস্থায় দুই পক্ষের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে যুদ্ধের আশঙ্কাও করছেন।
ইমরান জাতিসংঘে বলেন, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ হলে তা কেবল দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। কাশ্মীরে ৯ লাখ সেনা মোতায়েন করেছে ভারত। মোদির ভাষ্য, কাশ্মীরের সমৃদ্ধির জন্য এসব সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এই সেনারা সেখানে কী করবে? তাদের যখন প্রত্যাহার করা নেয়া হবে সেখানে তখন রক্তগঙ্গা বইবে। তিনি আরো বলেন, কারফিউ প্রত্যাহারের পর মোদি কী করবেন? তিনি কি মনে করেন যে, কাশ্মীরিরা চুপচাপ এই অবস্থা মেনে নেবে?
অন্যদিকে জাতিসংঘে নিজের বক্তব্যে সন্ত্রাসবাদ দমনের দিকেই গুরুত্ব দিয়েছেন মোদি। কাশ্মীর নিয়ে কোনো কথা উল্লেখ করেননি তিনি। মোদি বিশ্বনেতাদের বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থান দৃঢ়। তিনি বলেন, আমরা এমন একটি দেশের মানুষ যারা যুদ্ধে নয়, বুদ্ধের শান্তির বার্তায় বিশ্বাস করে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্র থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি শান্তি ও সংহতির বার্তা জানাচ্ছে। তিনি বিশ্বনেতাদের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এক হওয়ার আহ্বান জানান।
মোদির পরপরই বক্তব্য রাখেন ইমরান। তিনি বলেন, কাশ্মীর ঘিরে নেয়া মোদির পদক্ষেপের কারণে যুদ্ধের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। এই যুদ্ধ কেবল ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এটা কোনো হুমকি নয়, এটা একটা সতর্কতা। তিনি বলেন, পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন কোনো দেশ সবকিছু নিয়ে লড়াইয়ে নামলে, এর প্রভাব সীমান্তের বাইরেও পড়বে। পুরো বিশ্বকে এর পরিণতি ভোগ করতে হবে। বিশ্ব সম্প্রদায় এ অবস্থায় কী করবে?
ভারতের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন,  বিশ্বনেতারা কি ১২০ কোটি মানুষের একটি বাজারকে খুশি রাখবে? নাকি ন্যায় বিচার ও মানবতার পক্ষে সোচ্চার হবে?

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version