ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনালাপ নিয়ে অভিযোগকারী কে, তা জানতে চান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ফোনালাপে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনৈতিক সুবিধা চেয়েছিলেন বলে হুইসেলব্লোয়ার বা সতর্কতাকারী অভিযোগ করেন। সুরক্ষার জন্য হুইসেলব্লোয়ারের পরিচয় গোপন রেখেছে গোয়েন্দা সংস্থা।

হুইসেলব্লোয়ার সম্পর্কে গতকাল রোববার ট্রাম্প ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগকারী কে, তা জানার অধিকার আমার রয়েছে।’

ইউক্রেন বিতর্কের সূত্রপাত এই হুইসেলব্লোয়ারের অভিযোগ ঘিরে। এই অভিযোগ ট্রাম্পের অভিশংসন তদন্তের মতো গুরুতর বিষয়ের দিকে ঠেলে নিয়ে গেছে।

হুইসেলব্লোয়ারের অভিযোগে বলা হয়, গত ২৫ জুলাই ইউক্রেনের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে অভিনন্দন জানাতে ফোন করেন ট্রাম্প। ফোনে তিনি ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট পদপ্রার্থী জো বাইডেন ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে জেলেনস্কিকে চাপ দেন।

বিষয়টি নিয়ে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর শীর্ষ আইনজীবীর কাছে হুইসেলব্লোয়ার হিসেবে এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন। বলা হচ্ছে, ওই ব্যক্তি সিআইএর একজন কর্মকর্তা। যুক্তরাষ্ট্রের আইনে হুইসেলব্লোয়ারের পরিচয় গোপন রাখাসহ তাঁর আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়টি কঠোরভাবে মেনে চলা হয়।

আজ সোমবার সিএনএন অনলাইনের খবরে বলা হয়, অভিযোগকারীর ব্যাপারে ট্রাম্প এক টুইটে বলেন, ‘আর সব আমেরিকানের মতো আমি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগকারীকে দেখার অধিকার রাখি। বিশেষ করে যখন এই অভিযোগকারী, কথিত হুইসেলব্লোয়ার, একজন বিদেশি নেতার সঙ্গে আমার যথাযথ কথোপকথনকে সম্পূর্ণ অসত্য ও প্রতারণামূলকভাবে উপস্থাপন করেছেন।’

হুইসেলব্লোয়ারের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তাঁর পক্ষের আইনজীবীরা ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জোসেফ মাগুয়ারের কাছে গত শনিবার একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়, গত সপ্তাহের নানা ঘটনায় তাঁদের উদ্বেগ বেড়েছে। তাঁদের মক্কেলের (হুইসেলব্লোয়ার) পরিচয় প্রকাশ হয়ে পড়তে পারে। এমনটা হলে তা তাঁর জন্য ব্যাপক ক্ষতি ডেকে আনবে।

আজ বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়, বাইডেনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের তদন্ত শুরুর কোনো কারণ দেখছেন না দেশটির সাবেক প্রসিকিউটর জেনারেল ইউরি লুতসেনকো। তাঁর মতে, বাইডেন ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত করতে চাইলে তা যুক্তরাষ্ট্রেরই করা উচিত।

লুতসেনকো বিবিসিকে বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী রুডি জুলিয়ানির সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছে। জুলিয়ানি তাঁর কাছে জানতে চেয়েছেন, বাইডেনের ব্যাপারে ইউক্রেনে তদন্ত করা সম্ভব কি না? তিনি জুলিয়ানিকে বলেছেন, এটা তাঁদের বিচারের বিষয় না। এটা যুক্তরাষ্ট্রের দিক দিয়ে হতে পারে।

বাইডেনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের কাছে কোনো তথ্য আছে কি না? বিবিসি প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে লুতসেনকো বলেন, ‘ইউক্রেনের আইনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, এমন কোনো কিছু আমি করতে পারব না।’

ট্রাম্পের দাবি, বাইডেন ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকার সময় ইউক্রেনের একটি গ্যাস কোম্পানির ব্যাপারে সে দেশের সরকার যে তদন্ত শুরু করে, তা বন্ধে তিনি (বাইডেন) চাপ প্রয়োগ করেন।

হুইসেলব্লোয়ারের অভিযোগের বিষয়টি সামনে আসার পর ইউক্রেন ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিশংসনযোগ্য অপরাধ করেছেন কি না, তা তদন্তে কমিটি করেছেন ডেমোক্র্যাটরা।

স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাট স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি আনুষ্ঠানিকভাবে এই তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, বাইডেনকে ঘায়েল করতে ট্রাম্প বিদেশি শক্তির সাহায্য চেয়েছেন। সে ক্ষেত্রে দর-কষাকষিতে ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক সহায়তাকে ব্যবহার করেছেন।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version