বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ পানিসীমায় ঢুকে অবাধে ইলিশ মাছসহ অন্যান্য মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে ভারতীয় জেলেরা। ভারতীয় ট্রলিং ট্রলারের জেলেদের দৌরাত্মে বাংলাদেশের জেলেরা সাগরে মাছ ধরতে পারছেন না। বঙ্গোপসাগরের বয়া এলাকা থেকে পূর্বে কলাপাড়া উপকুল পর্যন্ত ভারতীয় ট্রলিং ট্রলার দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ৩টি ভারতীয় ফিসিং ট্রলারসহ ৩৮ জেলেকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছে।
বঙ্গোপসাগর থেকে ফিরে আসা জেলেদের অভিযোগ, প্রায় প্রতিদিনই ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের পানিসীমায় ট্রলিং ট্রলার নিয়ে এসে ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে। ভারতীয় জেলেদের উৎপাতে দেশী জেলেরা মাছ ধরতে পারছে না। তারা দেশীয় জেলেদের জাল কেটে নিয়ে যায় এবং মাছ না ধরার জন্য বিভিন্ন হুমকি দেয় বলে অভিযোগ করেন বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার খোন্তাকাটা গ্রামের জেলে আলম মাঝি।
এদিকে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বঙ্গোপসাগরের ফেয়ারওয়ে বয়া এলাকায় সাগরে অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনী তিনটি ট্রলারসহ ৩৮ জন ভারতীয় জেলেকে আটক করে মোংলা থানায় সোপর্দ করে। পরে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
বাংলাদেশ ফিসিং ট্রলার মালিক সমিতির সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম খোকন জানান, ভারতীয় জেলেদের উৎপাতে দেশি জেলেদের বর্তমান ইলিশ মৌসুমে সাগরে মাছ শিকার ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, অতীতে ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের পানিসীমার কিছুটা ভেতরে ঢুকে মাছ শিকার করতো। বর্তমানে তারা সাগরের বয়া এলাকা থেকে পূর্বে কলাপাড়া উপকূল পর্যন্ত ট্রলিং ট্রলার নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ভারতীয় জেলেরা দ্রুতগতির ট্রলারে বসে বাইনোকুলার দিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে চলাচল করে থাকে বলে জেলেদের বরাত দিয়ে তিনি জানান।
দুবলা ফিশারমেন গ্রুপের সভাপতি কামাল উদ্দিন আহম্মেদ অভিযোগ করেন, বর্তমানে সাগরে ভারতীয় জেলেদের উৎপাত বহুগুণ বেড়েছে। প্রায় সারাবছরই ভারতীয় জেলেরা সাগরে টহলরত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজকে ফাঁকি দিয়ে দেশীয় পানিসীমায় অনুপ্রবেশ করে মাছ ধরে নিয়ে যায়। ভারতীয় এসব জেলেরা অনেক সময় দেশীয় জেলেদের মারধর করে মাছ লুট করেও নিয়ে যায়। সাগরে আরো বেশি করে নৌবাহিনীর টহল বৃদ্ধির দাবি জানান তিনি। পাশিাপাশি আগামী ৯ অক্টোবর থেকে দেশে সাগর ও নদী এলাকায় ইলিশ আহরণ সরকারি ভাবে নিষিদ্ধ থাকার সুযোগে ভারতীয় জেলেদের সাগরে অনুপ্রবেশ আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।
কোস্টগার্ড পশ্চিমজোন মোংলা অপারেশন কর্মকর্তা লে. ইমতিয়াজ আলম জানান, দেশীয় জেলেরা সমুদ্রের ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে মাছ ধরতে পারে। আর ভারতীয়রা বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার প্রায় ১৫০ কিলোমিটার ভেতরে প্রবেশ করে থাকে। ভারতীয় জেলেরা মাছ ধরতে দ্রুতগামী নৌযান ও কারেন্ট জালসহ জিপিএস নামক বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করে। এসব জেলেদের ধরতে নৌবাহিনীর পাশাপাশি তারাও সাগরে অভিযান অব্যাহত রেখেছেন।