বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনী‌তি নিষিদ্ধ করেছে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। একই সাথে শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দাবিও মেনে নিয়েছেন তারা। এছাড়া আবরার হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত ১৯ শিক্ষার্থীকেও বুয়েট থেকে সাময়িক বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছেন ভিসি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম।

আজ শুক্রবার বিকেলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে বুয়েট ভিসির বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ভিসি, ডিএসডব্লিউ পরিচালকসহ সাতজন মঞ্চে বসেন। শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও বিভিন্ন অনুষদের ডিনরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বুয়েট ক্যাম্পাস অডিটোরিয়ামে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে, বুয়েট ক্যাম্পাস অডিটোরিয়ামে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একাংশ প্রবেশ করলেও অডিটোরিয়াম ভরে যাওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী বাইরে রাস্তায় বসে অবস্থান করেন।

বৈঠকে ১০ দফা দাবি তুলে ধরেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে ষষ্ঠ দফায় আন্দোলনকারীরা দাবি করেন, ‘বুয়েটে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানারে দীর্ঘদিন ধরে বুয়েটের হলে হলে ত্রাসের রাজনীতি কায়েম করে রাখা হয়েছে। মোস্ট জুনিয়র ব্যাচকে সবসময় ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর করে রাজনৈতিক মিছিল-মিটিংয়ে যুক্ত করা হয়েছে। রাজনৈতিক ক্ষমতা অপব্যবহার করে যেকোনও সময় যেকোনও হল থেকে সাধারণ ছাত্রদের জোরপূর্বক বিতাড়িত করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে হলে হলে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। রাজনৈতিক সংগঠনের এ ধরনের কর্মকাণ্ডে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ। তাই আগামী সাত দিনের (১৫ অক্টোবর) মধ্যে বুয়েটে সব রাজনৈতিক সংগঠন ও এর কার্যক্রম স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে।’

শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বুয়েট ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা দেন ভিসি। ভিসি বলেন, ‘আমার নিজ ক্ষমতায় বুয়েটের সব রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করছি।’ এ সময় জোর করতালিতে এ সিদ্ধান্তকে অভিনন্দন জানান শিক্ষার্থীরা।

অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, এখন থেকে ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে ডিসিপ্লিনারি বোর্ডের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেওয়ার জের ধরে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে গত রোববর (৬ অক্টোবর) রাতে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপর রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের নিচতলা ও দোতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সোমবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আবরারের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।

ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ লাশের ময়নাতদন্ত করেন। তিনি বলেন, ‘ছেলেটিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।’ নিহত আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।

 

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version