ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ও শক্তিশালী টাইফুন ‘হাগিবিস’ ধেয়ে আসছে জাপানের দিকে। আজ শনিবার রাতে এটি জাপানের মধ্যভাগে আঘাত হানতে পারে। এ জন্য দেশজুড়ে জরুরি সর্তকতা জারি করা হয়েছে।
টাইফুনটি ভুমিতে আঘাত হানলে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি বলে বলে জানিয়েছে দেশটির আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা। এছাড়া এটি ঘন্টায় ২৭০ কিলোমিটার থেকে ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিবেগে ঝড়ো বাতাস বয়ে যেতে পারে। ফলে সমুদ্রের ঢেউ ১০ মিটার উপরে উঠতে পারে। ইতোমধ্যে দেশের সকল বিমান ও দ্রুতগামী বুলেট ট্রেনসহ দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। জনসাধারণের চলাচলও সীমিত করা হয়েছে। উপকূলবর্তী জনসাধারণকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। জাপান সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সতর্ক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম এনএইচকে জানিয়েছে। এদিকে শনিবার ভোর থেকেই ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ১৯৫৮ সালের শক্তিশালী হাগিবিস টাইফুনের পর এটিই হবে সবচেয়ে ভয়বহ ও শক্তিশালী টাইফুন। সে সময় প্রায় দেড় হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল।
জাপানের আবহাওয়া অফিস বলছে, তাইফুন হাগিবিস ওগাসাওয়ারা দ্বীপমালার অদূরের সমুদ্রের উপর উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আজ শনিবার হাগিবিস পূর্ব ও পশ্চিম জাপানের দিকে অগ্রসর হবে বলে স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানাগেছে। প্রচণ্ড শক্তিশালী হাগিবিস শেষ পর্যন্ত ভূমিতে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে দেশটির আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা।
ইতিমধ্যে টোকিও শহরের হানেদা এবং নারিতা আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরের সকল অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বাতিল করেছে। এছাড়া জাপান রেলওয়ে জানিয়েছে, তাইফুন হাগিবিসের কারণে বুলেট ট্রেন ও এক্সপ্রেস ট্রেনের বেশ কিছু যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। ফলে ট্রেনের সময়সূচীতেও পরিবর্তন হবে।
ওই ঝড়ের প্রভাবে আগামীকাল ওগাসাওয়ারা দ্বীপের চারিদিকের সমুদ্রে ১০ মিটার পর্যন্ত উঁচু ঢেউয়ের পাশাপাশি ঘণ্টায় ২৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত বেগ নিয়ে দমকা হাওয়া বয়ে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। ঝড়ের এই উত্তাল তরঙ্গ সপ্তাহজুড়ে দেশের পূর্ব এবং পশ্চিমাংশেও আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে। ঝড়টি আর্দ্র বায়ুর একটি স্ফীত বলয় বয়ে নিয়ে আসার কারণে শুক্রবার থেকে দেশের প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলজুড়ে ভারী বৃষ্টিপাত হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। টাইফুনের পূর্বাভাসকৃত পথ বা এর অদূরে থাকা লোকজনকে সম্ভাব্য মারাত্মক বিরূপ আবহাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে আহ্বান জানাচ্ছেন আবহাওয়া কর্মকর্তারা।
জাপানের আবহাওয়া আরোও জানায়, টাইফুন হাগিবিস রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি বয়ে আনতে পারে। কর্তৃপক্ষ লোকজনকে পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে রাখতে এবং সুরক্ষিত থাকার সব ব্যবস্থা করতে আহ্বান জানিয়েছে।
আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা ইয়াসুশি কাজিহারা বলেন, ” ধারনা করা হচ্ছে মারাত্মক শক্তি নিয়ে টাইফুন হাগিবিস তোকাই বা কান্তো অঞ্চলে শনিবার রাতে আঘাত হানবে । প্রবল বাতাস ও সমুদ্রে উত্তাল ঢেউ ছাড়াও, আমাদের ধারণা কান্তো অঞ্চলে রেকর্ড পরিমাণ ভারী বৃষ্টিপাতও হবে”।
আবহাওয়া কর্মকর্তারা টাইফুন হাগিবিসকে “খুব শক্তিশালী” টাইফুনের শ্রেণীতে ফেলেছেন। ঝড়টি প্রশান্ত মহাসাগরের ওপর দিয়ে উত্তর দিকে এগিয়ে চলেছে জাপানের প্রধান দ্বীপ হনশু লক্ষ্য করে। এর আগে টাইফুন হাগিবিস ১৯৫৮ সালে কান্তো অঞ্চল ও ইযু দ্বীপপুঞ্জে ১ হাজার ২ শ’রও বেশি মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী।
টাইফুন মোকাবিলায় প্রস্তুত জাপান
জাপান সরকার শক্তিশালী টাইফুন মোকাবিলায় প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। ট্রেন পরিষেবা কোম্পানিগুলো জানাচ্ছে, তারা টোকিও এবং নাগোইয়া’র মধ্যকার বুলেট ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া তারা নাগোইয়া ও শিন-ওসাকা এবং শিন-ওসাকা ও ওকাইয়ামা’র মধ্যকার অধিকাংশ ট্রেনও বন্ধ রাখা হয়েছে। তোহোকু, ইয়ামাগাতা, আকিতা, হোকুরিকু এবং জয়েৎসু লাইনের বুলেট ট্রেন সেবা শনিবার সকালে একটু বেলার দিকে ট্রেনের সংখ্যা কমানো হয়েছে। পরিস্থিতি দেখে সকল ট্রেন সেবা স্থগিত করা হতে পারে। পূর্ব জাপান রেলওয়ে কোম্পানি বা জেআর ইস্ট ঘোষণা করে, তারাও শনিবার সকাল ৯টা থেকে তাদের টোকিও মহানগর এলাকা এবং শিযুওকা জেলার স্থানীয় ট্রেন সেবা স্থগিত করেছে।