নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্ট চার্চের পর এবার নামাজরত মুসল্লিদের ওপর অস্ত্রধারীরা গুলি করে কমপক্ষে ১৬ জনকে হত্যা করেছে আফ্রিকার দেশ বুরকিনা ফাসোতে। শুক্রবার সন্ধ্যায় মুসল্লিরা যখন একটি মসজিদে নামাজ আদায় করছিলেন তখন সেখানে অতর্কিতে হামলা চালায় অস্ত্রধারীরা। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এ খবর দেয়া হয়েছে। এ ঘটনা ঘটেছে দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় গ্রাম সালমোসিতে গ্রান্ড মসজিদে। এই এলাকাটি মালি সীমান্তের কাছে। এ সময় স্থানীয় অধিবাসীরা ভয়ে, আতঙ্কে পালাতে থাকেন। পাশের শহর গোরোম-গোরোম এর একজন বাসিন্দা বলেছেন, পরের দিন সকাল থেকেই ওই এলাকা ছাড়া শুরু করেছেন এলাকাবাসী। একটি সূত্র বলেছেন, ঘটনাস্থলেই কমপক্ষে ১৩ জন নিহত হয়েছেন।

পরে আহত তিনজন মারা যান। আহত দু’জনের অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। এলাকায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। তবে তাতে আতঙ্ক কাটছে না। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হামলাকারীদের পরিচয় সনাক্ত করা যায় নি। হামলার দায়ও কেউ স্বীকার করেনি।
গত কয়েক বছরে বুরকিনা ফাসোতে সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর বেশির ভাগের সঙ্গে জড়িত আল কায়েদা, ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লিভ্যান্ট (আইসিল)-এর মতো সশস্ত্র গ্রুপগুলো। প্রতিবেশী মালি থেকে কিছু গ্রুপ বুরকিনা ফাসোতে প্রবেশ করে সেখানে জাতিগত সহিংসতা ও ধর্মীয় উত্তেজনা ছড়িয়ে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে গেরিলা স্টাইলে হামলা চালানো হচ্ছে। তারা রাস্তার পাশে স্থলবোমা পুঁতে রাখছে ও আত্মঘাতী বোমা হামলা চালাচ্ছে। এতে কমপক্ষে ৬০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। তবে নাগরিক সমাজের গ্রুপগুলোর মতে এই সংখ্যা কমপক্ষে ১০০০। বলা হচ্ছে, সেখানে প্রতিদিনই হামলা হয়।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক এজেন্সির মতে এসব সহিংসতার কারণে কমপক্ষে ৫ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে। এমন অবস্থায় জাতিসংঘের ওই এজেন্সি মানবিক সঙ্কট সৃষ্টির সতর্কতা দিয়েছে। বলা হয়েছে, এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ১৫ লাখ মানুষ। এমন সহিংসতায় সেখানে বন্ধ হয়ে গেছে কমপক্ষে ৩ হাজার স্কুল। সহিংসতার প্রভাব পড়েছে গ্রামীণ অর্থনীতিতে। বিঘিœত হচ্ছে বাণিজ্য ও বাজার ব্যবস্থাপনা। গত সপ্তাহেই তো সেখানকার উত্তরাঞ্চলে একটি স্বর্ণের খনিতে অস্ত্রধারীদের হামলায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ২০ জন।
দেশে যখন এমন অবস্থা তখন বুরকিনা ফাসোর প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের কাছে নেই ভাল সরঞ্জাম। তারা দুর্বলভাবে প্রশিক্ষিত। এরই মধ্যে তারা ক্রমবর্ধমান সহিংসতা বন্ধে অসমর্থ এর প্রমাণ দিয়েছে। বুরকিনা ফাসোতে রয়েছে ফ্রান্সের ২০০ সেনা সদস্য। সেখানে তারা বারখানে আঞ্চলিক অপারেশনে অংশ নিয়ে থাকে। দেশে সহিংসতা বৃদ্ধি পেলেও বেশির ভাগ অধিবাসী বুরকিনা ফাসোতে বিদেশী সেনা উপস্থিতির বিরোধিতা করেন।
শনিবার দেশের প্রায় ১০০০ মানুষ রাজধানী ওগাদুগোতে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়ে র‌্যালি করেছেন। একই সঙ্গে তারা আফ্রিকা বিদেশী সেনা উপস্থিতির বিরোধিতা করেন। ওই বিক্ষোভের একজন আয়োজক গাবিন কোরবেওগো বলেন, আমাদের দেশে বিদেশী সেনাদের ঘাঁটি স্থাপনের জন্য একটি আদর্শ কারণ দেখানো হয় সন্ত্রাস। আমাদের বিভিন্ন অঞ্চলে এরই মধ্যে পা ফেলেছে ফরাসি, আমেরিকান, কানাডিয়ান, জার্মানি ও অন্য দেশের সেনারা। তারা বলছে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চায়। কিন্তু তাদের এত বিপুল পরিমাণে উপস্থিতি সত্ত্বেও সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো শক্তিশালী হচ্ছেই।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version