বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট)মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় রিমান্ডে থাকা এজাহারভুক্ত আসামি মেহেদী হাসান রবিন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সোমবার তিনি আবরারের ওপর নির্যাতন চালানোর বর্ণনা দিয়েছেন।

পুলিশ রিমান্ডে মেহেদী হাসান রবিন স্বীকার করেন, ঘটনার সময় আবরার ফাহাদের মুখে কয়েকটা চড়-থাপ্পড় মেরেছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি নিজেকে এই মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত ও অন্য আসামিদের নাম প্রকাশ করে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে পুলিশের কাছে জবানবন্দি দেন।
এর আগে আরো কয়েকজন নির্যাতন চালানোর কথা স্বীকার করেছেন।

সোমবার ঢাকা মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন রবিন।

ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মুজাহিদ মোজাহিদুল ওরফে মোজাহিদুর রহমান স্কিপিং রোপ দিয়ে আবরারের শরীরে বেধড়ক আঘাত করার কথা স্বীকার করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আবরারকে মারধর করে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ইফতি ক্যান্টিনে খেতে যায় বলে জানায় মোজাহিদুল। এরপর মিনিট বিশেক পর ফিরে এসে দেখে আবরার অচেতন হয়ে মেঝেতে শুয়ে আছে। তখন সে আবরারকে ধমক দিয়ে উঠে দাঁড় করায় এবং কয়েকটি চড় মারে। মুজাহিদুর রহমান তখন কক্ষে থাকা স্কিপিং রোপ দিয়ে আবরারকে বেধড়ক মারধর করার কথা স্বীকার করেছেন। এ ছাড়া সে জানায়, ওই সময় ইফতি আবার স্টাম্প দিয়ে আবরারের হাঁটু ও পায়ে আঘাত করে। তানভিরও চড়-থাপ্পড় মারে। মারধরের সময় নিজের ভূকিকা এবং অন্যদের ভূমিকার বিষয়ও তথ্য দিয়েছেন মোজাহিদুল।

রাত ১১টার দিকে অনিক সরকার আবার কক্ষে আসে। হঠাৎ অনিক স্টাম্প দিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে আবরারকে একের পর এক আঘাত শুরু করে। এভাবে টানা এক ঘণ্টা আঘাতের পর আঘাত করতে থাকে অনিক সরকার। আবরার তখন অচেতন হয়ে পড়েছিল। উহ আহ শব্দটি পর্যন্ত করেনি। সে সময় সেখানে উপস্থিত সবাই ভয় পেয়ে যায়। এরপরই ওদের মনে আচড় কাটে আবরারকে হয়তো আর বাঁচানো যাবে না। এরপর শুরু হয় মোবাইলে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাসেলের সাথে যোগাযোগ করা। এভাবেই আবরার হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন মুজাহিদ মোজাহিদুল ওরফে মোজাহিদুর রহমান।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. ওয়াহিদুজ্জামান আদালতে আবেদন করে বলেন, মামলাটি একটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড। এমন অবস্থায় আসামি জামিনে মুক্ত থাকলে মামলার বাদি ও সাক্ষীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে মামলার তদন্তে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসামিকে জেলহাজতে আটক রাখার আবেদন জানান। আদালত জামিন না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানো নির্দেশন দেন।

আবরার হত্যা মামলার ৪ নম্বর আসামি মেহেদী হাসান রবিন। তিনি বুয়েটের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। আবরার হত্যায় তিনি পাঁচ দিনের রিমান্ডে ছিলেন।

গত৬ অক্টোবর দিবাগত মধ্যরাতে বুয়েটের সাধারণ ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফাহাদকে শেরেবাংলা হলের দ্বিতীয় তলা থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। সোমবার (৭ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সোমবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢামেক ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. মো. সোহেল মাহমুদ বলেন, বাঁশ বা স্টাম্প দিয়ে পেটানো হয়ে থাকতে পারে বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদকে। এর ফলেই রক্তক্ষরণ বা পেইনের (ব্যথা) কারণে ফাহাদের মৃত্যু হয়েছে।

তিনি বলেন, ফাহাদের হাতে, পায়ে ও পিঠে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ আঘাতের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। আঘাতের ধরন দেখে মনে হয়েছে ভোঁতা কোনো জিনিস যেমন- বাঁশ বা স্টাম্প দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। তবে তার মাথায় কোনো আঘাত নেই। কপালে ছোট একটি কাটা চিহ্ন রয়েছে।

এ ঘটনায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগ।

 

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version