মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে অভিশংসিত করার প্রচেষ্টায় বড় ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে ডেমোক্র্যাটরা। তাদের নিয়ন্ত্রিত পার্লামেন্টের নি¤œকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের ‘হাউজ জুডিসিয়ারি কমিটি’ মঙ্গলবার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে দুই ধারায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে। কমিটির প্রধান জেরি ন্যাডলার ধারা দুটি প্রকাশ করেন। বলেন, প্রথম ধারায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও দ্বিতীয় ধারায় কংগ্রেসের কাজে বাধা সৃষ্টির চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। এ খবর দিয়েছে বিবিসি।
খবরে বলা হয়,  ট্রাম্পের  বিরুদ্ধে সামরিক সহযোগিতা আটকে ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধারে ইউক্রেনের সরকারকে চাপ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ অভিযোগে কয়েক মাস ধরে তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। অবশেষে, আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। ট্রাম্প সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

তাকে অভিশংসনের চেষ্টাকে ‘পাগলামী’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। হোয়াইট হাউজের এক মুখপাত্র জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে চান।
বিবিসি জানায়, চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভস জুডিসিয়ারি কমিটি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর অনুমোদন নিয়ে ভোট দেবে। ভোটে পাস হলে অভিযোগের বিলগুলো পূর্ণ ভোটের জন্য নি¤œকক্ষে উপস্থাপন করা হবে। যদি নিম্নকক্ষেও পাস হয় তাহলে উচ্চকক্ষ সিনেটে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য বিবেচিত হবে ধারাগুলো। বিলগুলো সিনেটে পৌঁছাতে জানুয়ারি পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৫শে জুলাই ইউক্রেনের সদ্য-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনালাপ করেন ট্রাম্প। নাম গোপন রেখে এক অভ্যন্তরীন সূত্র কংগ্রেসে অভিযোগ করে, ওই ফোনকলে অযাচিত দাবি করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ডেমোক্র্যাটিক প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেন ও তার ছেলে হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে জেলেনস্কিকে চাপ দিয়েছিলেন বলে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। অন্যথায় মোটা অঙ্কের সামরিক সহযোগিতা আটকে রাখার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এছাড়া, জেলেনস্কিকে ২০১৬ মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়া নয়, ইউক্রেন হস্তক্ষেপ করেছিল এমন একটি গুজব ছড়াতেও দাবি জানিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যদিও বেশিরভাগ আইনপ্রণেতাই শেষের অভিযোগটিকে ভুয়া দাবি করেছে।

অভিযোগ
ট্রাম্পের  বিরুদ্ধে দুই ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের অপরাধ ও অপকর্ম করার অভিযোগ রয়েছে।
প্রথম অভিযোগটি হচ্ছে, অযাচিত ব্যক্তি স্বার্থসিদ্ধির জন্য সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার করেছেন ট্রাম্প। ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইউক্রেনকে হস্তক্ষেপ করতে চাপ প্রয়োগ করে জাতীয় স্বার্থকে ঝুঁকিতে ফেলেছেন।
দ্বিতীয় অভিযোগটি হচ্ছে, ধরা পড়ার পর, প্রতিনিধি পরিষদে তার বিরুদ্ধে চালু হওয়া অভিশংসন তদন্তের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন আচরণ করেন ট্রাম্প। এতে কংগ্রেসের প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করেছেন তিনি।
ন্যাডলার বলেন, ট্রাম্প নিজেকে আইনের উর্ধ্বে মনে করেন। আমাদের বিষয়টি পরিষ্কার করতে হবে যে, কেউ না, এমনকি প্রেসিডেন্টও আইনেও উর্ধ্বে না।
প্রসঙ্গত, প্রতিনিধি পরিষদ যদি ট্রাম্পকে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেয় তাহলে তিনি অভিশংসন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়া তৃতীয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট হবেন। এর আগে ১৯৬৮ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট অ্যানড্রিও জনসনকে অভিশংসিত করতে ভোট দিয়েছিল প্রতিনিধি পরিষদ। তবে উচ্চকক্ষ সিনেটে এক ভোটের ব্যবধানে ছাড়া পেয়ে যান তিনি। পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের বিরুদ্ধেও নি¤œকক্ষে অভিশংসন বিল পাস হয়। তবে তিনিও সিনেটে খালাসি পেয়ে যান।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version