প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের যুদ্ধাপরাধ তদন্ত করে দেখার জন্য তহবিল বরাদ্দ করেছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ।

রোহিঙ্গা মুসলমান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর যথেচ্ছ গ্রেফতার, নির্যাতন, ধর্ষণ, হেফাজতে মৃত্যুসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে একটি নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করেছে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদ।

রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে উত্তেজনা প্রশমনে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহবান জানানো হয় প্রস্তাবটিতে।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের যুদ্ধাপরাধ তদন্ত করে দেখার জন্য তহবিল বরাদ্দ করেছে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদ।

জাতিসঙ্ঘ তিনশো সাত কোটি ডলারের এই তদন্ত তহবিলে প্রথমবারের মতো সিরিয়া ও মিয়ানমারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে শুক্রবার আনা নিন্দা প্রস্তাবে জাতিসঙ্ঘের ১৯৩টি সদস্য দেশের মধ্যে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় ১৩৪টি দেশ আর বিপক্ষে ভোট পড়ে নয়টি। ভোটদানে বিরত ছিল ২৮টি দেশ।

জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে পাশ হওয়া কোনো প্রস্তাব দেশটি মানতে বাধ্য না হলেও, বিশ্ব মতামতের ক্ষেত্রে এ ধরণের প্রস্তাব প্রভাব ফেলে থাকে।

তবে মিয়ানমারের দাবি, তারা উগ্রবাদীদের দমন করতে তাদের এসব অভিযান।

গত নভেম্বর মাসে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে মামলা করে মিয়ানমার, যে শুনানিতে হাজিরা দিয়েছেন দেশটির নেত্রী অং সান সু চি।

নির্যাতনের কারণে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এগারো লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে

মিয়ানমারে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে রোহিঙ্গা মুসলমান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের যেসব তথ্য উপাত্ত তুলে ধরেছিল একটি স্বাধীন তদন্ত দল, সেগুলোও তুলে ধরা হয় নিন্দা প্রস্তাবে। সেসব ঘটনাকে আন্তর্জাতিক আইনে চরম অপরাধ বলে মিশনটি বর্ণনা করেছিল।

এই প্রস্তাব অনুমোদনের পর জাতিসংঘে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত হাও দো সুয়ান একে ”মানবাধিকার লঙ্ঘনের নামে আরেকটি বৈষম্যমূলক ও বিশেষভাবে বাছাই করার দ্বৈত আচরণ” বলে বর্ণনা করেছেন, যার মাধ্যমে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চাপ দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে তার অভিযোগ।

তিনি বলেছেন, এই প্রস্তাবটি রাখাইন রাজ্যে জটিল পরিস্থিতি সমাধানে কোন ভূমিকা রাখবে না।

এই প্রস্তাব সেখানে ‘অবিশ্বাসের বীজ বপন’ করবে বলে তিনি বলছেন। তার মতে, এটি ওই অঞ্চলে নানা সম্প্রদায়ের মধ্যে আরো মেরুকরণ তৈরি করবে।

 

জাতিসঙ্ঘের ওই প্রস্তাবে চার দশক ধরে প্রতিবেশী বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসার ব্যাপারে সতর্কবার্তা তুলে ধরা হয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। ২০১৭ সালের অগাস্ট মাসে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর দমন পীড়ন অভিযান চালানোর পর থেকেই এসেছে সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা।

বাংলাদেশ থেকে কয়েক বার রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে আলাপ আলোচনা হলেও, মিয়ানমারে নিরাপদ পরিবেশের অভাবে ফিরতে রাজি হয়নি রোহিঙ্গারা।

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে গত ১১ই নভেম্বর আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে মামলা করে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। বিবিসি

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version