কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তিতে জাতিসংঘের মধ্যস্থতা কামনা করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। বুধবার তিনি পারমাণবিক শক্তিধর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতার এমন আহ্বান জানান। সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে চলমান ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক মিটিংয়ে মিডিয়া ব্রিফিংয়ের সময় তিনি বলেন, এটা হলো এক শক্তিশালী বিরোধ। এখন সময় এসে গেছে এর অবসানে পদক্ষেপ গ্রহণ করে সমাধানে আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর এগিয়ে আসার। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।

গত আগস্টে জম্মু-কাশ্মীরের বিষয়ে ভারতীয় সংবিধান থেকে স্বায়ত্তশাসনের বিধান বাতিল করে ভারত সরকার। এর মধ্য দিয়ে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ওই অঞ্চলকে দুটি ফেডারেল টেরিটোরিতে ভাগ করা হয়। এর ফলে জম্মু ও কাশ্মীর চলে গেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে।

কিন্তু কাশ্মীরের পুরোটাই নিজেদের বলে দাবি করে ভারত ও পাকিস্তান। এ নিয়ে এরই মধ্যে তাদের মধ্যে এ পর্যন্ত সার্বিক দুটি যুদ্ধ হয়েছে। কাশ্মীরের কিছু অংশের দখলে রয়েছে ভারত। বাকি অংশে পাকিস্তান। ১৯৮০র দশকের শেষভাগ থেকে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদী সহিংসতা দেখা দেয়।

এরই মধ্যে ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন করা হয়েছে। ইমরান খান মনে করেন, মুসলিমদেরকে টার্গেট করেই করা হয়েছে এই আইন। এর বিরুদ্ধে ভারতের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে নয়া দিল্লি কি জবাব দেবে তা নিয়ে বড় আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেন ইমরান খান। তিনি বলেন, আমরা এই মুহূর্তে যুদ্ধের খুব কাছাকাছি নেই। যদি ভারতে প্রতিবাদ বিক্ষোভের চেহারা এর চেয়েও খারাপের দিকে যায়, তখন দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হতে পারে।

এ সময় ইমরান খান আরো জানান, মঙ্গলবার এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার আলোচনা হয়েছে। যদি পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয় তাহলে তার পরিণাম কি হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পরে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি দুই দেশের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তিতে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন। আগের অনেক বছরের চেয়ে এখন আফগানিস্তানে তালেবান বিদ্রোহীদের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে বলে দাবি করেন ইমরান খান। ওই যুদ্ধে তিনি কখনোই সামরিক সমাধান দেখেন না বলেও দাবি করেন। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান হলো, তারা সমঝোতা হওয়া উচিত বলে মনে করে এবং তাদের কাছে আছে একটি শান্তি পরিকল্পনা।

এ ছাড়া বুধবার দু’জনের মধ্যে আরো কথা হয়েছে। এ সময়ে ট্রাম্পকে ইমরান খান বলেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হবে বিশ্বের জন্য বিপর্যয়কর। তবে তার এ বক্তব্যের কোনো পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেন নি ট্রাম্প। এক পর্যায়ে ইমরান খানের কাছে জানতে চাওয়া হয়, চীনে নির্যাতিত উইঘুর সম্প্রদায়ের আত্মরক্ষার বিষয়ে পাকিস্তান কেন নীরব? জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, কমপক্ষে ১০ লাখ উইঘুর সম্প্রদায় ও অন্যান্য মুসলিমকে আটক রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে ইমরান খান বলেন, বেইজিংয়ের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক এত গুরুত্বপূর্ণ যে, এ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলার দরকার নেই। তিনি বলেন, আমরা যখন তলানিতে পৌঁছে গিয়েছিলাম তখন আমাদেরকে সাহায্য করেছে চীন। এ জন্য চীন সরকারের প্রতি আমরা সত্যিই কৃতজ্ঞ। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, চীনের সঙ্গে যেকোনো ইস্যু মোকাবিলা করা হবে প্রাইভেট উপায়ে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version