শরীয়ত বাউলকে আইসিটি আইনে গ্রেপ্তার করে জেলখানায় রাখা হয়েছে, অথচ সম্প্রতি যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর স্বপক্ষে ওয়াজকারী মিজানুর রহমান আজাহারী কিভাবে দেশ ছাড়লো তা নিয়ে সংসদে প্রশ্ন তুলেছেন ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। সোমবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রেসিডেন্টের ভাষণের উপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় এই প্রশ্ন তুলে ধরেন।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, আমাদের দেশে শরীয়ত ও মারফতের দ্বন্দ্ব অনেক পুরাতন। এখন সৌদি-পাকিস্তানি ও জামাতীদের ওহাবিবাদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত করতে এ ধরনের দ্বন্দ্বের সম্পর্কে যখন রাষ্ট্রীয় আইন ব্যবহার করা হয়, তখন তা উদ্বেগের বিষয়। রাষ্ট্র কি অতীতের মতো আবার মৌলবাদকে পৃষ্টপোষকতা দিচ্ছে? না’হলে আজাহারী দেশ ছেড়ে যেতে পারে না। খতমে নবুয়ত নতুন করে হুঙ্কার ছাড়তে পারে না। হেফাজত সমর্থন প্রত্যাহারের হুমকি দিতে পারে না। এরাই ক’দিন পর পাকিস্তানি কায়দায় ব্লাসফেমী আইন প্রণয়ন করতে বলবে, যেমন এই সংসদেই যুদ্ধাপরাধী নিজামী সেই প্রস্তাব তুলেছিল।
বঙ্গবন্ধু এদেশকে ধর্মনিরপেক্ষতার মূল নীতি উপহার দিয়েছিলেন উল্লেখ করে রাশেদ খান মেনন বলেন, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি, ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজনের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু কেবল সোচ্চার ছিলেন না কেবল, বাস্তবে তার অনুসরণ করেছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন কারও ধর্মানুভূতিতে আঘাত দিলে আইন তার ব্যবস্থা নেবে। আমি এই সংসদে মাননীয় স্পিকারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে ইউটিউবে প্রচারিত ধর্মীয় উম্মাদনা সৃষ্টি ও বিভাজনের কিছু বক্তব্যের পেন-ড্রাইভ দিয়েছিলাম। সে সবের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানা নেই। তিনি আরো বলেন, গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর আগেই তারা মরিয়া আক্রমণ করবে। ধর্মবাদী তো বটেই, ওই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে ডান ও তথাকথিত বামও এক হচ্ছে। তিনি বলেন, অতীতে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের নামে যে ধর্মীয় আবরণ দিয়ে দেশকে পাকিস্তানি আদলে ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টা হয়েছিল, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে তার ছেদ ঘটানো হয়েছে। কিন্তু সেই প্রচেষ্টার অবসান হয়নি। রাষ্ট্রীয় প্রচারে, আমাদের আচার আচরণে, বেশ-ভূষার পরিবর্তনে তার রেশ আমরা দেখি। ফেসবুক, ইউটিউবের নিত্য প্রচারে সেই মনমানসিকতাকে উসকে দেয়া হচ্ছে। ভাষা আন্দোলন যেমন আমাদের জাতিসত্বাকে নির্দিষ্ট করেছে, তেমনি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধুও নির্দিষ্ট করে বলেছিলেন, ‘ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময় আমি বলব আমি বাঙালি, বাঙলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা’।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version