বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কারামুক্তি দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত নিয়ে বিশ্বমিডিয়ায় গুরুত্ব দিয়ে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। তাতে গতকাল আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হকের বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, দুই শর্তে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ নিয়ে ফ্লোরিডাভিত্তিক ইউনাইটেড প্রেস ইন্টারন্যাশনালের সাংবাদিক ডানিয়েল হেইন্স লিখেছেন, দেশে করোনা ভাইরাস মহামারীর মধ্যে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে কারগার থেকে অস্থায়ী ভিত্তিতে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মঙ্গলবার গুলশানে নিজের বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দিয়েছেন আইনমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, মানবিক কারণে খালেদা জিয়াকে ৬ মাসের জন্য মুক্তি দেয়া হবে। তিনি আরো জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী মানবিক কারণে তাকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। এ সময়ে তিনি ঢাকায় তার বাসায় অবস্থান করে চিকিৎসা নিতে পারবেন।

তবে তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। বার্তা সংস্থা এএফপি’র রিপোর্ট প্রকাশ করেছে সিঙ্গাপুরের অনলাইন স্ট্রেইটস টাইমস ও অনলাইন টিআরটি। এতে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়া যাতে চিকিৎসা নিতে পারেন সেজন্য ৬ মাসের  শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পাচ্ছেন। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, খালেদা জিয়ার এক ভাই ও বোন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তার তীব্র রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাওয়ার অনুমতি দেয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার পরিবারের রয়েছে প্রাধান্য। এ দু’জনের মধ্যে গড়ে উঠেছে তিক্ত বিরোধ। খালেদা জিয়ার পর ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসেন শেখ হাসিনা। তারপর থেকে তিনিই দেশ শাসন করছেন। মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও ৭৪ বছর বয়সী খালেদা জিয়া অন্য কোনো দেশে যেতে পারবেন না। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এএফপিকে বলেছেন, আবেদনের ভিত্তিতে এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে শাস্তি স্থগিত করা হয়েছে। তিনি এই শর্তে মুক্তি পাচ্ছেন যে, ঢাকার বাসায় অবস্থান করেই তাকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। এএফপি লিখেছে, এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার পরিবার বা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
দুর্নীতি মামলায় শাস্তি হিসেবে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ১০ বছরের জেল দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে অনিষ্পন্ন অবস্থায় আছে আরো প্রায় তিন ডজন মামলা। বিএনপি দাবি করে এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সরকার খালেদা জিয়াকে রাজনীতির বাইরে রাখার জন্য এসব মামলা করেছে। এর আগে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বার বার তার জামিন আবেদন করলেও তা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। তারা যুক্তি দেখিয়েছেন যে, যথাযথ চিকিৎসার অভাবে কারাগারেই মারা যেতে পারেন খালেদা জিয়া।
এএফপি আরো লিখেছে, সম্প্রতি খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে একটি মেডিকেল রিপোর্ট ফাঁস হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, তার রিউমেটিক আর্থাইটিস ক্রমশ গুরুত্বর অবস্থার দিকে যাচ্ছে। এরই মধ্যে তার দুই হাঁটুতে রিপ্লেসমেন্ট অপারেশন করানো হয়েছে। ওই রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, এখন তিনি যেসব রোগে ভুগছেন এবং তাতে তার যে ক্ষতি হচ্ছে তাতে তিনি বিকলাঙ্গ অবস্থায় আছেন। প্রতিদিনের কর্মকাণ্ডে তাকে প্রায় সব কিছুতে অন্যের ওপর নির্ভর করতে হয়।
লন্ডনের ডেইলি মেইল প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা এপি’র রিপোর্ট। এতেও প্রায় একই কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দু’টি দুর্নীতি মামলায় বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে মোট ১৭ বছরের জেল দেয়া হয়েছে। বিএনপি দাবি করে, এসব মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তবে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এতে আরো বলা হয়েছে, খালেদা জিয়ার দল দাবি করেছে তিনি গুরুত্বর অসুস্থ। এর মধ্যে রয়েছে তার শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা ও আর্থাইটিস। তাকে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তার মুক্তি প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেছেন, তার শাস্তি স্থগিত করার পর সরকার তাকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার বয়স ও মানবিক কারণে তার প্রতি উদারতা দেখানো হচ্ছে। তিনি আরো জানান, তার মুক্তির বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি নোটিফিকেশন ইস্যু করবে। একই রকম রিপোর্ট করেছে ভারতের অনলাইন এএনআই।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version