এম মাহাবুবুর রহমান

স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ তাদের লেখায় ও স্মৃতিচারণে বিভিন্ন ঘটনাবলীর মাধ্যমে তৎকালীন চিত্র তুলে ধরেছেন। লেখনীতে তারা বলেছেন, জিয়াউর রহমানই স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা দেন। এই মহান নেতার জন্মদিনে প্রাসঙ্গিকভাবেই এমন কিছু তথ্য পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

জেনারেল (অব) শফিউল্লাহ: মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ৩ নং সেক্টরের কমান্ডার মেজর শফিউল্লাহ তার গ্রন্থে BANGLADESH AT WAR (DHAKA, ACADEMIC PUBLISHERS  ১৯৮৯) ৪৩-৪৫ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, “মেজর জিয়া ২৫ মার্চের রাত্রিতে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সদলবলে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন, তার কমান্ডিং অফিসার জানজুয়া ও অন্যদের প্রথমে গ্রেফতার এবং পরে হত্যা করে পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। পরে ২৬ মার্চ তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর মোকাবেলার জন্য সকলকে আহবান করেন। এ ঘোষণায় তিনি নিজকে রাষ্ট্রপ্রধানরূপে ঘোষণা করেন। ২৭ মার্চ মেজর জিয়া স্বাধীন বেতার কেন্দ্র থেকে আরেকটি ঘোষণায় বলেন, বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ককরূপে আমি মেজর জিয়া  শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি ((I MAJOR ZIA, PROVISIONAL COMMANDER IN-CHIEF OF THE BANGLADESH LIBERATION ARMY, HEREBY PROCLAIM, ON BEHALF OF SHEIK MUJIBUR RAHMAN, THE INDEPENDENCE OF BANGLADESH).

ড. ওয়াজেদ মিয়া: ২০০২ সালের ১৩ মার্চ ঢাকার দৈনিক নিউনেশন পত্রিকাকে শেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়া বলেছেন, THE BANGABANDU NEITHER DECLARED INDEPENDENCE NOR HAND OVER ANY WRITTEN DOCUMENT TO ANYBODY. ‘একাত্তরে শেখ হাসিনার বন্দিজীবন’ সম্পর্কে ড. ওয়াজেদ মিয়ার একটি সাক্ষাতকার ১৯৯১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দৈনিক বাংলা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি বলেন, ২৭ মার্চ আমার বন্ধু ড. মোজাম্মেল হক আমাকে ডেকে বললেন, রেডিওতে মেজর জিয়া নামে একজনের ভাষণ শোনা যাচ্ছে। তিনি বঙ্গবন্ধুর নামে স্বাধীনতা ঘোষণা দিচ্ছেন। আমি ও শেখ হাসিনা গিয়ে জিয়ার সেই ঘোষণা শুনলাম।

মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী: সাবেক সেনাকর্মকর্তা ও বর্তমান আ্ওয়ামী লীগের নেতা মেজর জেনারেল (অব) সুবিদ আলী ভূঁইযয়া তার ‘মুক্তিযুদ্ধে নয় মাস’ গ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ‘বেতারে পুনঃপুনঃ ঘোষণা করা হচ্ছিলো আর পনের মিনিট পরে মেজর জিয়া বেতার ভাষণ দেবেন। ঘণ্টা দেড়েক চেষ্টার পর তিনি তার ঐতিহাসিক ভাষণটি তৈরি করে নিজেই সেটি ইংরেজিতে ও বাংলায় পাঠ করেন। তবে মেজর জিয়া ঐ বেতার ভাষণে নিজেকে ‘হেড অব দি স্টেট’ অর্থাৎ‘রাষ্ট্র প্রধান’ রূপেই ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু পরের দিনই পূর্বের দেয়া বেতার ভাষণটির সংশোধন করে তিনি ঘোষণা দেন যে, এ মুক্তিযুদ্ধ তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে।”

ইন্দিরাগান্ধী: ১৯৭১ সালের ৬ নবেম্বর কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী বলেছেন, ‘THE CRY OF INDEPENDENCE (OF BANGLADESH) AROSE AFTER SHEIKH MUJIB WAS ARRESTED AND NOT BEFORE HE (S• MUJIB) HIMSELF• SO FAR AS I KNOW HE HAS NOT ASKED FOR INDEPENDENCE EVEN NOW’

তাজউদ্দীন আহমদ: ১৯৭২ সালের ১১ এপ্রিল নবগঠিত বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ তার প্রথম বেতার ভাষণে বলেছেন, “THE BRILLIANT SUCCESS OF OUR FIGHTING FORCES AND THE DAILY ADDITIONS TO THEIR STRENGTH IN MAIN POWER AND CAPTURED WEAPONS HAS ENABLED THE GOVERNMENT OF THE PEOPLEÕS REPUBLIC OF BANGLADESH• FIRST ANNOUNCED THROUGH MAJOR ZIAUR RAHMAN TO SETUP FULL-FLEDGED OPERATIONAL BASE FROM WHICH IT IS ADMINISTRATING THE LIBERATED AREAS’ (সূত্রঃ বাংলাদেশ ডকুমেন্টস, গবর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া)।

নীলমসঞ্জীব রেড্ডি: ১৯৭৭ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ভারত সফরে গেলে সে দেশের রাষ্ট্রপতির দেয়া ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি নীলম সঞ্জীব রেড্ডি বলেছেন, YOUR POSITION IS ALREADY ASSURED IN THE ANNALS OF THE HISTORY OF YOUR COUNTRY AS A BRAVE FREEDOM FIGHTER WHO WAS THE FIRST TO DECLARE THE INDEPENDENCE OF BANGLADESH.”

ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা সুখান্ত সিং: মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা সুখান্ত সিং তার THE LIBERATION OF BANGLADESH• VOL•  ও (DELHI LANCER PUBLISHERS ১৯৮০) বইয়ের ৯ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ‘ইতোমধ্যে ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম বেতার থেকে একজন বাঙালিঅফিসার মেজর জিয়ার কণ্ঠস্বর ভেসে আসে’। তিনি আরো লিখেছেন, ‘এই ঘোষণার মাধ্যমে বাঙালি সেনা অফিসারগণ রাজনৈতিক নেতাদের অসন্তুষ্ট করতে চাননি। অন্যদিকে ইতিহাসের এই সন্ধিক্ষণে জাতিকে দিক-নির্দেশনা দেবার আবশ্যকতা ছিল’।

ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট: ১৯৭২ সালের ১৮ জানুয়ারী ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট শেখ মুজিবকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘আপনি যদি বলতেন, ‘আমি স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ঘোষণা দিচ্ছি তাতে কি ঘটতো’। শেখ মুজিবের জবাব ছিলো- ‘বিশেষ করে এই দিনটিতে আমি তা করতে চাইনি যে, তারা বলুক ‘শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে এবং আঘাত হানা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই’। (সূত্র বাঙালী হত্যাকান্ড ও পাকিস্তানের ভাঙন, মাসুদুলহক)।

সূত্র: দৈনিক আমার দেশ।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version