কাছের মানুষ বা বন্ধুবান্ধবকে মনের খবর জানাতে একটা সময় চিঠি লেখার চল ছিল বেশি। কাছের মানুষকে লেখার প্রবণতা হারিয়ে না গেলেও বদলে গেছে চিঠি লেখার ধরন। বিশেষ করে, আজকের তরুণেরা তাদের মনের কথা এখন বেশি লেখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এই মাধ্যমে গল্পগুজব বা বার্তা আদান-প্রদানের ব্যবস্থাকে বলা হয় চ্যাটিং।
জরিপের তথ্য বলছে, অবসর সময় কাটাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চ্যাটিং করা এখন তরুণদের কাছে খুবই প্রিয় একটি বিষয়। তরুণেরা এখন প্রতিদিন গড়ে ৮০ মিনিটের বেশি সময় চ্যাটিংয়ের পেছনে ব্যয় করে। তরুণদের অবসরের প্রিয় কাজের তালিকায় চ্যাটিং আছে ৫ নম্বরে। ৪১ শতাংশ তরুণ চ্যাটিং করে অবসর কাটায়। আবার নিয়মিত ইন্টারনেট ব্যবহারকারী তরুণদের ৯৯ দশমিক ৪ শতাংশই বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চ্যাটিং করে। অর্থাৎ ইন্টারনেট ব্যবহার যারা করে, তাদের সবাই কোনো না কোনোভাবে চ্যাটিং করে।
চ্যাটিংয়ের এ প্রবণতা গ্রামের চেয়ে শহুরে তরুণদের মধ্যে বেশি। শহরে চ্যাটিং করার হার ৫৪ শতাংশ, গ্রামে এই হার ৩৬। ইন্টারনেট সংযোগের অভাব বা অপ্রতুলতা এ ক্ষেত্রে গ্রামের তরুণদের পিছিয়ে রাখছে। আবার মেয়েদের চেয়ে ছেলেরা অনেক বেশি মাত্রায় চ্যাটিং করে। মেয়েদের চ্যাটিং করার হার যেখানে ২৩ শতাংশ, ছেলেদের ক্ষেত্রে তা ৬০ শতাংশ। অর্থাৎ মেয়েদের তুলনায় দ্বিগুণ ছেলে চ্যাট করে।
বিভাগওয়ারি সবচেয়ে বেশি চ্যাট করে ঢাকা বিভাগের তরুণেরা। এখানে চ্যাটিং করার হার ৫৪ শতাংশ। অন্য বিভাগে এ প্রবণতা ২৫ থেকে ৩৩ শতাংশ। পড়ালেখা শেষ করেছে এমন তরুণের চেয়ে পড়ালেখা করছে—এমন তরুণদের মধ্যে চ্যাটিং করার প্রবণতা বেশি। শিক্ষার্থীদের মধ্যে চ্যাটিং করে ৬২ শতাংশ, বাকিদের মধ্যে এ হার ২৯ শতাংশ।
বিবাহিতদের চেয়ে অবিবাহিত তরুণেরা চ্যাটিং বেশি করে। এখন পর্যন্ত বিয়ে হয়নি এমন তরুণদের মধ্যে ৫৯ শতাংশ ফেসবুকে চ্যাটিং করে। বিপরীতে বিবাহিত তরুণদের ২৪ শতাংশ চ্যাটিংয়ে সময় দেয়। অর্থাৎ বিয়ে করলে চ্যাটিং করার প্রবণতা অনেকটাই কমে যায়।
বয়সভেদে তরুণদের মধ্যে চ্যাট করার প্রবণতায় আছে পার্থক্য। জরিপে দেখা যাচ্ছে, বয়স যত কম চ্যাট করার প্রবণতা তত বেশি। যেমন ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের ৪৭ শতাংশ চ্যাটিং করে। ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে এ প্রবণতা একটু কম, ৪৪ শতাংশ। এদের তুলনায় ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা চ্যাট করে অনেক কম, ৩৩ শতাংশ।
জরিপ অনুযায়ী, স্নাতক বা আরও উচ্চপর্যায়ে পড়ালেখা করছে, এমন তরুণদের ৭৩ শতাংশ অবসরে চ্যাটিং করে। এসএসসি, এইচএসসি বা ডিপ্লোমা করা তরুণদের মধ্যে এ হার ৬১ শতাংশ। মাধ্যমিক ও প্রাথমিক পর্যায় পর্যন্ত পড়ালেখা করা তরুণেরা চ্যাটিং করে সবচেয়ে কম, যথাক্রমে ২৮ ও ১৮ শতাংশ।
পেশাগত অবস্থানের ভিত্তিতে সবচেয়ে বেশি চ্যাট করে বেসরকারি চাকরিজীবী, শিক্ষার্থী ও বেকার তরুণেরা। এই তিন শ্রেণির চ্যাটিং করার হার ৫৬ থেকে ৬৪ শতাংশ। সরকারি চাকরিজীবী, অদক্ষ শ্রমিক ও গৃহিণীরা তুলনায় কম চ্যাটিং করে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চ্যাটিং নিয়ে যুক্তরাজ্যের রয়াল ইকোনমিক সোসাইটির এক গবেষণায় বলা হয়েছে, তরুণেরা যত বেশি সময় চ্যাটিংয়ে ব্যয় করে, জীবন নিয়ে তাদের সন্তুষ্টির পরিমাণ ততই কমতে থাকে। এর ফলে তাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের সব ক্ষেত্রেই নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।