জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন রাকিবুল হাসান। তাঁর স্মার্টফোন আছে। ফেসবুকে কতটা সময় কাটান—এ প্রশ্ন করতেই বললেন, প্রতিদিনই ঘণ্টা খানেক ব্যয় করেন। মূল উদ্দেশ্য, সরকারি চাকরির খবরাখবর পাওয়া।

এখন ফেসবুকে ব্যাংক ও বিসিএসের প্রস্তুতি নেওয়ার বিভিন্ন গ্রুপ আছে। রাকিবুল হাসানের মতো অনেকেই এখন ফেসবুকে থাকেন এসব গ্রুপের সদস্য হয়ে। এসব গ্রুপে নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতিমূলক বিভিন্ন পোস্ট দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও পরীক্ষার ফলাফলের খবরও থাকে সেখানে। ফলে এক জায়গাতেই পাওয়া যায় চাকরিসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সবকিছু।

দেশের তরুণদের ভাবনা জানতে প্রথম আলোর উদ্যোগে ওআরজি-কোয়েস্ট গত মার্চে সারা দেশে জরিপ করেছে। আজ ছাপা হয়েছে জরিপের শেষ পর্ব। এতে দেখা গেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের ৯৫ শতাংশের কাছে ফেসবুক প্রথম পছন্দ। বয়স, পেশা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, ছেলেমেয়ে—সবার পছন্দের তালিকায় এক নম্বরে আছে ফেসবুক। এর মধ্যে একমাত্র ব্যতিক্রম গৃহবধূরা। এই শ্রেণির ৬৫ শতাংশের কাছে ফেসবুক জনপ্রিয়।

রাকিবুল হাসান বলেন, ‘আমি ফেসবুকেই এখন চাকরির খবর পাই। গ্রুপগুলোতে খবর পাওয়ার সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে ঢুকি। আবার নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফলের খবরও এখান থেকে পাই। এ ছাড়া বন্ধু-বান্ধবদের খোঁজখবরও পাওয়া যায় একটি মাধ্যমেই। সুতরাং সুবিধা হয়।’

জরিপ অনুসারে, ফেসবুকের পরে তরুণদের পছন্দের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে অ্যাপভিত্তিক যোগাযোগমাধ্যম ইমো। উত্তরদাতা ৫৭ শতাংশ তরুণ নিয়মিত এটি ব্যবহার করেন। আরেক যোগাযোগমাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপ বর্তমান প্রজন্মের পছন্দের ৪ নম্বরে আছে। ৫ নম্বরে রয়েছে ভাইবার। দেশে ও দেশের বাইরে মুঠোফোনে কথা বলা, ভিডিও কল, লাইভ চ্যাটের জন্য এসব অ্যাপ ব্যবহার হয়। মূলত ব্যবসায়ী, গৃহিণী ও বেকার—এই তিন শ্রেণির কাছে এসব অ্যাপ বেশি জনপ্রিয়।

পড়াশোনার পাট চুকিয়ে আমদানি-রপ্তানির ব্যবসায় নেমেছেন পিনাক রায় (২৯)। ব্যবসার কাজেই বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলতে হয় তাঁকে। এ জন্য তাঁর একমাত্র ভরসা ইমো ও হোয়াটসঅ্যাপ। তিনি বলেন, ‘যদি ফোনে যোগাযোগ করতে চাই, তাহলে অনেক খরচ। আবার এখান থেকে কোনো পণ্য পাঠাতে চাইলে, সেগুলোর ছবিও পাঠানো যায় এসব অ্যাপ দিয়ে। দেশের মধ্যেও সবাই এগুলো ব্যবহার করে। বিশেষ করে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ব্যবসা করতে চাইলে যোগাযোগের জন্য এই অ্যাপগুলোর কোনো বিকল্প নেই।’

জরিপ অনুযায়ী তরুণেরা মনে করে, বৈচিত্র্যপূর্ণ সংবাদ ও তথ্যপ্রাপ্তির জন্য সবচেয়ে কার্যকর হলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। ৯৬ শতাংশ উত্তরদাতা বিষয়টির পক্ষে ইতিবাচক মতামত দিয়েছে। তথ্য পাওয়ার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয় নিয়ে মতামত প্রকাশ, মতবিনিময়, আলোচনা-সমালোচনার জন্য তরুণেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। ৯৫ শতাংশ তরুণ মতপ্রকাশের এই স্বাধীনতার বিষয়টিকে এসব মাধ্যম ব্যবহারের অন্যতম ইতিবাচক দিক হিসেবে দেখে। আর তরুণেরা এখন চ্যাটিংয়ের পেছনে ব্যয় করে প্রতিদিন গড়ে ৮০ মিনিটের বেশি সময়।

একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় চাকরি করেন নুসরাত জাহান। বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন নিউজ পোর্টালের ফেসবুক পেজ ফলো করেন তিনি। এসব থেকেই চলতি খবর জেনে নেন। নুসরাত বলেন, ‘কাজের ফাঁকে প্রতিটি পত্রিকার ওয়েবসাইটে ঢোকা সম্ভব হয় না। কিন্তু ফেসবুকে ফলো দিয়ে রাখলে গুরুত্বপূর্ণ খবরের পোস্ট সহজেই জানা যায়। সব পত্রিকাই তা পোস্ট করে। এতে করে পছন্দের খবর বেছে নেওয়া যায়। আবার কোনো ইস্যু নিয়ে নিজের মতামতও জানাই ফেসবুকে। কারণ, এটি উন্মুক্ত মাধ্যম। বন্ধুদের খবরও এখান থেকেই পাই।’ তবে, নির্ভরযোগ্য তথ্যের জন্য ফেসবুকে ভরসা রাখেন না তিনি।

প্রথম আলোর জরিপের তথ্য বলছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইন্টারনেটে বেশি সময় দেওয়ার কারণে তরুণদের পড়ালেখার সময় কমে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা ক্লাসের বাইরে পড়ালেখায় গড়ে সময় দেয় মাত্র ৩৯ মিনিট। এর মধ্যে ৫৬ শতাংশ ৩০ মিনিট বা তারও কম সময় পড়ালেখা করে ক্লাসের বাইরে।

একটি সরকারি কলেজের মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক রুনা রানী রায় বলেন, ক্লাস নিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বারবার বলতে হয় ফোন ব্যবহার না করার কথা। অনেকেই শ্রেণিকক্ষে বসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে। তিনি বলেন, ‘শ্রেণিকক্ষেই যদি এমন অবস্থা হয়, তবে অন্যান্য সময়ে তারা ফেসবুক কতটা ব্যবহার করে, সেটি তো বোঝাই যায়।’

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version