ছোট বেলা থেকেই কবিতা লিখতে ভালবাসেন।
লেখাকেই পেশা করবেন এমন স্বপ্ন দেখতেন লুতফুন নাহার। কিন্তু সেটা স্বপ্নই রয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত নিজের খরচেই বহু কষ্টে এবার বই মেলায় প্রথম একটি কবিতার বই ছাপিয়ে ফেলেছেন।
বলছিলেন, “বই ছাপতে গিয়ে বেশ বেগ পোহাতে হয়েছে। বাংলাদেশে নতুন লেখকদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই”
একুশের বই মেলায় কথা হচ্ছিল তার সাথে। বই মেলার লেখক কর্নারে, লেখক হয়ে উঠতে চান এমন অনেকেই ঘোরাফেরা করেন।
এমন একজন রতনতনু ঘোষ বলছেন, বই লিখে বাংলাদেশে খেয়ে পরে বেচে থাকা যায় না। এটাই একটা বড় সমস্যা। বই ছাপতে গিয়ে বেশ বেগ পোহাতে হয়েছে। বাংলাদেশে নতুন লেখকদের পাশে দাঁড়ানো মতো কেউ নেই
লেখক হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশের অনেকেই লেখেন নেশা বা শখে। কিন্তু জীবিকা চলে ভিন্ন কোন পেশায়। অনেকেই শিক্ষা ও সাংবাদিকতায় রয়েছেন।
লুতফুন নাহার আবাসন পেশায় কাজ করেন। বলছিলেন শুরুতে নিজের বই নিজের খরচেই বের করেন নতুন লেখকেরা এমনটাই বাংলাদেশের সংস্কৃতি।
তার মতে তরুণ লেখকের জমা দেয়া পাণ্ডুলিপি পড়ে, বই বাজারে ছাড়া ও তার পৃষ্ঠপোষকতার ঝুঁকি খুব কম প্রকাশকই নিতে চান।
প্রকাশকদের কাছে নিজেই বই ছাপতে গেলে তারা বড় অংকের টাকা চেয়ে বসেন। ঢাকায় বইয়ের বাজার ঘুরে দেখা গেল বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলার লেখকদের পুরনো লেখাই গল্প সমগ্র বা শ্রেষ্ঠ সংগ্রহ হিসেবে বাজারে আনছেন অনেক প্রকাশক।
প্রকাশকেরা বলছেন বাংলাদেশে ব্যতিক্রমী ও মৌলিক লেখা ইদানীং বেশ কম জোটে। সৃজনশীল নতুন লেখক গড়ে উঠছে কম।
শ্রাবণ প্রকাশনীর রবিন আহসান বলছিলেন, “সংবাদপত্রের সাহিত্য পাতায় আর লিটল ম্যাগাজিনে লিখে হাত পাকিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান সারির বেশিরভাগ লেখক। তেমনটা ইদানীং আর চোখে পড়ছে না”
এবারের মেলায়ও নানান স্টলে সারি সারি সাজানোর রয়েছে বহু লেখকের বই।কিন্তু বাংলাদেশে শুধু লেখাকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন এমন লেখকের খোজ নিতে গেলে মোটে দুজনের নামই বেশি ওঠে।
সংবাদপত্রের সাহিত্য পাতায় আর লিটল ম্যাগাজিনে লিখে হাত পাকিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান সারির বেশিরভাগ লেখক। তেমনটা ইদানীং আর চোখে পড়ছে না
প্রয়াত হুমায়ুন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ছেড়ে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত উপন্যাস ও নাটক লিখেছেন।
অপর আর একজন ইমদাদুল হক মিলন। মেলায় ফ্যানদের অটোগ্রাফ দেয়ার ফাকে তিনি অবশ্য বলছিলেন, তার শুরুটা ছিল অনেক কষ্টের। তবে লেখাকে পেশা হিসেবে তার পরও নেয়া সম্ভব।
বলছিলেন, ৮৩ সালের দিকে কাগজে একটি লেখার জন্য পেতেন কুড়ি টাকা আর উপন্যাসের জন্য ৩০০টাকার মতো। প্রায় দশ বছর লেগেছে পুরোপুরি পেশাদার লেখক হতে।
তার মতে, আগের থেকে লেখায় হাত পাকিয়ে নেয়ার যায়গা এখন অনেক বেশি। “এখন অনেক খবরের কাগজ, অনেক ঈদ সংখ্যা বের হয়। বহু নতুন টিভি চ্যানেলে নাটক লেখারও সুযোগ রয়েছে এখন। বাংলাদেশে তবুও অনেকেই লেখাকে পেশা হিসেবে নেয়ার সাহস পান না”, বলছিলেন জনপ্রিয় এই লেখক।
ইমদাদুল হক মিলন বলছিলেন বাংলাদেশে বই পড়ুয়ার সংখ্যা অনেক কম তাই বাজারও অনেক ছোট। তাই হয়ত লেখাকে পেশা হিসেবে নেবার সাহস অনেকেই করছেন না। তবে তারপরও স্বপ্ন দেখেন অনেকেই।