এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলন ছড়িয়ে গেছে সবখানে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যোগ দেয়ায় তৃতীয় দিনে আন্দোলন আরও তীব্র আকার ধারণ করে। মঙ্গলবার ক্লাস-পরীক্ষা ফেলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা দলমত নির্বিশেষে যোগ দেন বিক্ষোভ সমাবেশে। ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে রাস্তা অবরোধ করেন। প্রায় সারা দিন ঢাকার রাজপথ অবরোধ করে রাখায় সাধারণ মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন।

কোটা সংস্কার নিয়ে অর্থমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্য এই আন্দোলন আরও উসকে দেয়। আন্দোলনের কৌশল প্রশ্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিভক্ত হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এক প্লাটফর্মে মিশে গেছেন। এতে শক্তি আরও বৃদ্ধি পায়। এরপরই তারা সারা দেশে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে টানা অবরোধের ঘোষণা দেয়। ফলে আজ থেকে অনির্দিষ্টকাল ধরে চলবে এই অবরোধ। এ সময়ে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চশিক্ষা দানকারী কলেজে ক্লাস-পরীক্ষা হবে না। শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করবেন। রাত ৮টায় এ ঘোষণা দিয়ে সমাবেশ শেষ করা হয়। এ ঘোষণার আগে রাত পৌনে ৮টার দিকে এক মন্ত্রীর কুশপুত্তলিকা দাহ করেন তারা। এর আগে দাবি পূরণের জন্য টিএসসি এলাকায় অবস্থান নেয়া শত শত শিক্ষার্থী দিনভর আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে স্লোগান দেয়। তীব্র গরম ও রোদ তাদের প্রতিবন্ধক হতে পারেনি। দিনভর ক্লান্তিহীন মিছিল, স্লোগান, সমাবেশ শেষে আন্দোলনকারীরা যেন রাতে আরও উজ্জীবিত হয়ে উঠেন।

আন্দোলনকারীরা ঘোষণা করেন, কোটা পদ্ধতি সংস্কারের ব্যাপারে তারা কেবল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ থেকেই ঘোষণা আশা করেন। এ ব্যাপারে অন্য কোনো মন্ত্রীর বক্তব্য তারা গ্রহণ করবেন না। আন্দোলনকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ক্যাম্পাসে বহিরাগতরা তাদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ এবং আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের প্রতি তারা আহ্বান জানান।

আন্দোলনের তৃতীয় দিনে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা ক্লাস-পরীক্ষা ফেলে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় রাজপথে নেমে এসে অবরোধ তৈরি করেন। এতে গোটা রাজধানীতে তীব্র যানজট তৈরি হয়। ভয়াবহ দুর্ভোগে পড়েন লাখ লাখ নগরবাসী। অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকেন। আবার অনেকে মাইলের পর মাইল হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছান। অনেক মার্কেটে বেচাবিক্রি বন্ধ হয়ে যায়। এসব শিক্ষার্থী কোটা সংস্কারের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্যাট আরোপের প্রস্তাবেরও প্রতিবাদ জানান। এছাড়া দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও শত শত সাধারণ শিক্ষার্থী এবং চাকরিপ্রত্যাশীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আগারগাঁও লিঙ্ক রোড দখল করে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ত্রিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রেলপথ অবরোধ করেন। একইভাবে রাজশাহী, চট্টগ্রাম, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সড়ক ও রেলপথ অবরোধের খবর পাওয়া গেছে। দেশের সব স্থানের বিক্ষোভ থেকেই দ্রুত কোটা সংস্কারে সরকারি ঘোষণার দাবি তোলা হয়।

মঙ্গলবার আন্দোলনকারীদের ৫ দফা দাবির সঙ্গে আরও দুটি যুক্ত হয়। একটি হচ্ছে- কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর সংসদে দেয়া বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। আরেকটি হচ্ছে- বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্যাট আরোপ করা যাবে না। অবশ্য শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় দাবির বিষয়টি মঙ্গলবারই সমাধান করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) এক সভায় অনির্ধারিত আলোচনায় এ মুহূর্তে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তথা শিক্ষায় ভ্যাট না বসানোর নির্দেশ দেন। পরে অর্থমন্ত্রীও ভ্যাট সম্পর্কে নিজের দেয়া সোমবারের বক্তব্য থেকে সরে আসেন।

এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের তৃতীয় দিনে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন ও ব্যক্তির সমর্থন যুক্ত হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, কোটা ব্যবস্থা সংস্কার হওয়া দরকার। কিন্তু তিনি বাজেটের পর কোটা সংস্কারে হাত দেয়ার কথা বলায় আন্দোলন আরও উসকে দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির মানববন্ধন থেকে সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতি নৈতিক সমর্থনের ঘোষণা দেন। সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন আন্দোলনরতদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের মামলা-মোকদ্দমা হলে আইনি সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর ও চরমোনাইর পীর মুফতি সৈয়দ মো. রেজাউল করিম কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনকে যৌক্তিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এর আগে সোমবার বিএনপি এ আন্দোলনকে যৌক্তিক উল্লেখ করে ক্ষমতায় গেলে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের ঘোষণা দিয়েছে। কথাসাহিত্যিক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালসহ অন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও শিক্ষার্থীদের দাবিকে যৌক্তিক বলে উল্লেখ করেছেন। এসব পেশাজীবী ও রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি সংগঠনগুলোর নেতারা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : আন্দোলনের তীব্রতার মুখে সোমবার সড়ক ও সেতুমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকারি দলের নেতারা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে সরকারের তরফ থেকে প্রতিশ্রুতি পেয়ে আন্দোলনকারীদের মূল কমিটির নেতারা ৭ মে পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত রাখার ঘোষণা দেন। কিন্তু বেশির ভাগ সাধারণ শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেন। সোমবারই তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণার পাশাপাশি রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত টিএসসি এলাকায় অবস্থান করেন। এ পরিস্থিতিতে আন্দোলনকারীরা তিন ভাগ হয়ে মঙ্গলবার সকাল থেকে কোটা সংস্কারের আন্দোলন শুরু করে। এর মধ্যে আন্দোলনকারী সংগঠন ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’-এর বাইরেও আরও দুটি গ্রুপ তৈরি হয়। সকাল থেকে মূল কমিটির বাইরে পৃথক দুটি কমিটিকে আন্দোলন করতে দেখা যায়। এর মধ্যে মূল কমিটির নেতারা কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন। তখন তারা বলেন, সোমবার সংসদে বক্তৃতায় কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলেছেন। বিকাল ৫টার মধ্যে ওই বক্তব্য প্রত্যাহারের জন্য তাকে আলটিমেটাম দেয়া হয়। অন্যথায় সারা দেশে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে তারা উল্লেখ করেন। বিপরীত দিকে শত শত সাধারণ আন্দোলনকারীকে নিয়ে আরেক অংশ টিএসসি এলাকায় অবস্থান নেন। বিভক্ত গ্র“পগুলোর মধ্যে দিনভর আলোচনা চলে। বিকাল ৫টা ৫০ মিনিটের দিকে সব পক্ষ একত্রিত হয়ে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন। পরে সবাই মিলে টিএসসিতে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ফিরে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি শুরু করেন।

এর আগে বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে কয়েকশ’ শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের একটি মিছিল রোকেয়া হলের সামনে দিয়ে টিএসসি হয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে জড়ো হয়। পরে সাড়ে ১১টায় আরও তিনটি মিছিল এসে মিলিত হয় রাজু ভাস্কর্যের সমাবেশে। এরপরই যেন বাঁধ ভেঙে যায়। দলে দলে এসে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে যোগ দিতে থাকেন। রাজু ভাস্কর্যের সামনে হাজারও আন্দোলনকারী কোটা সংস্কারের পক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন। তখন শিক্ষার্থীরা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের (ভিসি) বাসভবনের হামলার যদি বিচার হয়, তবে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার কেন হবে না? শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ প্রশাসনকে এর জবাব দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার করতে হবে। এ সময় শিক্ষার্থীরা স্লোগান তোলেন- ‘হলে হলে হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘রামদা নিয়ে ক্যাম্পাসে কেন’, ‘ক্যাম্পাসে পুলিশ কেন’, ‘ছাত্রদের ওপর হামলা কেন’, ‘ছাত্রের বুকে গুলি কেন’ প্রশাসন জবাব দে। ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নেই’, ‘এক দফা এক দাবি, কোটা প্রথার সংস্কার চাই’।

কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাবির আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী বলেন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ভিসির বাসভবনে হামলাকারী কয়েকজনকে চিহ্নিত করা গেছে। আন্দোলনের নামে যারা ভিসির বাসভবনে হামলা করেছে তাদের বিচার হবে। আমাদের প্রশ্ন যারা ক্যাম্পাসে ঢুকে রামদা নিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা করল, পুলিশ টিয়ারশেল ছুড়ল, হামলায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হল, রক্ত ঝরল, সেই হামলাকারীদের বিচার তো তিনি চাইলেন না।

রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান নেয়া রাকিব হোসেন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, পুলিশ হলে হলে টিয়ারশেল, গুলি ছুড়েছে, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে। ঢাবি প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে। আমরা এমন অথর্ব প্রশাসন চাই না। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আন্দোলনকারীদের কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন এই পক্ষটিকে মিছিল না করার অনুরোধ জানান। সরকার শেষ পর্যন্ত কী করে, তা দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়ার অনুরোধ জানান। তবে সেই অনুরোধ উপেক্ষা করে মিছিল শুরু করে আন্দোলনকারীদের একটি পক্ষ।

রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের বলেন, তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। সাত দিনের মধ্যে তাদের পাঁচ দফা দাবি মানতে হবে। দাবিগুলো হচ্ছে- কোটা ব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নিয়ে আসা; কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে খালি থাকা পদগুলোতে মেধাবীদের নিয়োগ দেয়া; কোনো ধরনের বিশেষ পরীক্ষা না নেয়া; সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সবার জন্য অভিন্ন বয়সসীমা এবং চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একবারের বেশি ব্যবহার না করা।

দুপুর আড়াইটার দিকে মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সৈয়দ মোহাম্মদ জুবায়ের উদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা কোটা সংস্কারের আন্দোলনের মূল কমিটির সঙ্গে একমত। তবে আমরা সরকারের মুখের কথা বিশ্বাস করি না। তিন দিনের মধ্যে সংস্কারের বিষয় লিখিত দিতে হবে। আমাদের অনেক শিক্ষার্থী আন্দোলনের সময় সন্ত্রাসী ও পুলিশি হামলার শিকার হয়েছেন। তাদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। হামলার বিচার করতে হবে। হলের ভেতর পুলিশ হামলার বিচার করতে হবে। এজন্য আমরা এই আন্দোলন করছি।

এদিকে মঙ্গলবার বিকাল ৪টার দিকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা পুলিশের এক এসআইকে মারধর করেছেন। মারধরের শিকার ওই এসআইর নাম সাইফুল ইসলাম। তিনি ধানমণ্ডি থানায় কর্মরত। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের অফিসে যাওয়ার জন্য রাজু ভাস্কর্যের সামনে এলে তাকে থামান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। পরে আন্দোলনকারীরা তাকে মারধর করেন। একইসঙ্গে তার মোটরসাইকেল (ঢাকা মেট্রো ল-১৭-৬৫-৯২) কেড়ে নিয়ে ভাঙচুর করা হয়। এ সময় এক পথচারীর একটি মোটরসাইকেলও ভাংচুর করা হয়।

বিকালে ঐক্যবদ্ধ শক্তি : দ্বিধাবিভক্তি ভুলে মঙ্গলবার বিকালে ফের একযোগে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। কোটা সংস্কার আন্দোলন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাশেদ খান ও নুরুল হক নুর বিকাল ৫টা ৫০ মিনিটে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানান, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে সুনির্দিষ্টভাবে ঘোষণা দিতে হবে। ঘোষণায় কবে নাগাদ কোটা সংস্কার করা হবে সেটি উল্লেখ করতে হবে। এছাড়া গ্রেফতারকৃতদের অবিলম্বে মুক্তি এবং আহতদের সরকারি সহায়তায় চিকিৎসার দাবি জানান তারা। এসব দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সারাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়, জেলা, উপজেলা, কলেজে অনির্দিষ্টকাল অবরোধ, ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন চলবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর সেখান থেকে একটি মিছিল বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে রাজু ভাস্কর্যে পুনরায় অবস্থান শুরু করে। এছাড়া ঐক্যবদ্ধ মিছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা প্রদক্ষিণ করে।

বিকালের এ সংবাদ সম্মেলনে রাশেদ খান আরও বলেন, কৃষিমন্ত্রী আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলেছেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিকাল ৫টার মধ্যে বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি তা করেন নি। তাছাড়া অর্থমন্ত্রী ‘আসন্ন বাজেটের আগে কোটা সংস্কার হবে না’ এমন বক্তব্য দিয়েছেন। যা সোমবার সরকারের সঙ্গে আলোচনার বিপরীত। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যতদিন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা সংস্কারের বিষয়ে বক্তব্য দিবেন না, ততদিন পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’

এর আগে সকালের সংবাদ সম্মেলনে ভিসির বাসভবনে হামলাকারীদের বহিরাগত দাবি করে রাশেদ খান বলেন, আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ নয়। পাশাপাশি আন্দোলন করার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো থেকে যেন কোনো আন্দোলনকারীকে বের করে দেয়া না হয় সেজন্য অনুরোধ করা হয়।

ছড়িয়ে গেল আন্দোলন : এ দফায় প্রথমবারের মতো মঙ্গলবার আন্দোলনে নামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কোটাপদ্ধতি সংস্কার, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর বক্তব্য প্রত্যাহার ও ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর থেকে বিকাল ৫টা ১০ মিনিট পর্যন্ত রাজধানীর প্রগতি সরণি অবরোধ করে বিক্ষোভ করে পাঁচটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হল আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এবং ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি। তাছাড়া অভিন্ন দাবিতে একই সময়ে রামপুরায় ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, ফার্মগেটে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসেফিক, ধানমণ্ডিতে ড্যাফোডিলস ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস, কলাবাগানে স্টেট ইউনিভার্সিটি, তেজগাঁওয়ে আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং উত্তরায় শান্তা মারিয়াম ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় থাকায় কোনো ধরনের নাশকতা বা ভাংচুরের ঘটনা ঘটেনি।

আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র সাইক মঙ্গলবার সন্ধায় জানান, সারাদিন রাস্তা অবরোধের কারণে মানুষের অনেক দুর্ভোগ হয়েছে। মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে পুলিশ প্রশাসন এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে বিকাল ৫টার পর আমরা রাস্তা অবরোধ তুলে নিই। তবে অন্দোলন থেকে সরে আসিনি। বুধবার আবারও রাস্তায় নামা হতে পারে।

আন্দোলনকারী নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্র পলাশ বলেন, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম ঘোষণা করে আন্দোলনে নেমেছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র মেহেদী হাসান বলেন, দেশের মোট জনগণের ৯৭ দশমিক ৩৭ ভাগের জন্য ৪৪ ভাগ এবং ২ দশমিক ৬৩ ভাগের জন্য ৫৬ ভাগ কোটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এ বৈষম্য আমরা আর দেখতে চাই না।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version