এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : সরকারের ‘রূপকল্প-২০২১’সহ অন্যান্য অগ্রাধিকারমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নে প্রয়োজন দক্ষ ও কার্যকর একটি জনপ্রশাসন। এজন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এ লক্ষ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে ৩ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। অর্থ ব্যয়ের একটি রূপরেখা তুলে ধরে সম্প্রতি জনপ্রশাসনের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান আধা-সরকারিপত্র (ডিও) দিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়কে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

ডিও লেটারে ড. মোজ্জাম্মেল হক খান বলেন, সরকারের রূপকল্প-২০২১, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য-২০৩০ এবং সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় চিহ্নিত অগ্রাধিকারমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নে একটি দক্ষ ও কার্যকর জনপ্রশাসন অপরিহার্য। জনপ্রশাসনকে সুচারুভাবে কার্যকর রাখা ও মন্ত্রণালয়ের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের জন্য আগামী বাজেটে মোট ৩ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা প্রয়োজন।

তবে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে ২ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সেই হিসাবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দাবির মধ্যে ব্যবধান ১ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয়তা যৌক্তিক মনে হলে বরাদ্দ বাড়ানো হবে।

অতিরিক্ত অর্থ চাওয়া প্রসঙ্গে জনপ্রশাসনের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান ডিও লেটারে বলেছেন, অতিরিক্ত বরাদ্দের চাহিদা মূলত জনপ্রশাসনকে সুচারুভাবে কার্যকর রাখার জন্য। পাশাপাশি এ মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও বেড়েছে। এ দুটি বিষয় অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিবেচনা করে অতিরিক্ত এই টাকা প্রয়োজন।

সূত্রমতে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত ব্যয়ের একটি তালিকা প্রণয়ন করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, আগামী বছর সরকারি যানবাহন অধিদফতরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের জিপগাড়ি ক্রয়, বহুতল পার্কিং ও জ্বালানি খরচ বাবদ ২৪৪ কোটি টাকা ব্যয় হবে। সচিবালয় অংশে কল্যাণ অনুদান বাবদ ব্যয় হবে ৩৮৪ কোটি টাকা। কর্মকর্তাদের গাড়ির অগ্রিমবাবদ দরকার ৬০ কোটি টাকা। এছাড়া লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সংস্কার বাবদ ২ কোটি টাকা, মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধিদফতের যানবাহন, অফিস সরঞ্জাম খাতে প্রায় ১৬ কোটি টাকা এবং লোকপ্রশাসন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রশিক্ষণ ও নতুন যানবাহন ক্রয় বাবদ ৯ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া আরও ৬টি নতুন উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।

বাড়তি বরাদ্দ চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আগামী অর্থবছরের জন্য যে ভিশন নির্ধারণ করেছে তার মধ্যে রয়েছে- জনপ্রশাসনের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানো, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, মাঠপর্যায়ে সরকারি পলিসি কার্যকর, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কল্যাণ ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন পদক্ষেপ। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এখানে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়লে তা দ্রুত দারিদ্র্য নিরসন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। এছাড়া এর মধ্যে জনপ্রশাসনের সার্বিক কর্মী ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে দ্রুত সেবা প্রদানকে অগ্রাধিকার হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।

অন্যদিকে, আগামী বাজেটে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রাথমিকভাবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ২ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯৫৪ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে সচিবালয়ে। প্রশিক্ষণ খাতে ১৬ কোটি টাকা, বিভাগীয় প্রশাসনে সাড়ে ২৭ কোটি টাকা, জেলা প্রশাসনে ৪৭০ কোটি টাকা, উপজেলা প্রশাসনে ৩০৮ কোটি টাকা, মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধিদফতরে ব্যয় করা হবে ৭৬ কোটি টাকা। এছাড়া সরকারি যানবাহন অধিদফতরে ১৮৬ কোটি টাকা ও কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের অধীনে ব্যয় করা হবে ১০৪ কোটি টাকা। বাকি ৩৪ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে অন্যান্য খাতে। এ বরাদ্দ সম্পর্কে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের পেশাগত মান উন্নয়নে প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এজন্য গ্রহণ করা হয়েছে নীতিমালা ও কর্মপরিকল্পনা। দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়া সরকারের বিভিন্ন দলিল, চেক মুদ্রণ এ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সম্পন্ন হচ্ছে। এসব দিক বিবেচনা করে অর্থ মন্ত্রণালয় উল্লিখিত বরাদ্দ চূড়ান্ত করেছে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version