এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : রাজধানীর বাড্ডায় স্থানীয় এমপি ও বেরাইদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলিতে একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও চারজন। একটি সিমেন্ট কোম্পানিতে সরবরাহের কাজকে কেন্দ্র করে এ ঘটনাটি ঘটেছে বলে পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন।

নিহত কামরুজ্জামান ওরফে দুখু বেরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের ছোট ভাই। গুলিবিদ্ধ বাকি চারজন হলেন জাহাঙ্গীরের আরেক ভাই তাজ মোহাম্মদ, চাচা নাজির হোসেন, ফুপাতো ভাই শরিফ হোসেন ও কামাল হোসেন।
তাজ মোহাম্মদের গলায়, নাজিরের পায়ে, শরিফের পেটে ও কামালের চোখে গুলি লেগেছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া চেয়ারম্যানের ভাগনে সানিও আহত হয়েছেন।

এর আগে থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রার্থিতা নিয়ে ওই স্থানীয় এমপি ও ইউপি চেয়ারম্যানের মধ্য দ্বন্দ্ব ছিল।

বাড্ডা থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী বলেন, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। আহত ব্যক্তিদের বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

নিহত কামরুজ্জামানের ভাই মো. শাহীন আলম জানান, বেরাইদ এলাকার একটি সিমেন্ট কোম্পানির রেডি মিক্স কংক্রিট তৈরির কাঁচামাল (পাথর ও বালু) সরবরাহ করে আসছিলেন কামরুজ্জামান। চলতি মাসে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও এমপি একেএম রহমতুল্লাহর ভাগনে মো. ফারুক, আইয়ুব ওই কাজের দখল নেয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা চলছিল। রোববার বেলা দেড়টার দিকে কামরুজ্জামান, তার ভাগনে সানি, ভাতিজা আবদুল হাকিমকে নিয়ে আগের কাজের বিল জমা দিতে সিমেন্ট কারখানায় যান। সেখানে ফারুক হোসেনের নেতৃত্বে আজাদ, মহসিন, মারুফ, সাজ্জাদসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে তাঁদের বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে এমপির লোকজন সানির মাথা ফাটিয়ে দেয়।

শাহীন আলম বলেন, ওই অবস্থায় তাঁরা এলাকায় চলে আসেন। সাড়ে তিনটার দিকে আরও লোকজন নিয়ে তাঁরা পাটনি পাড়ার এলাকায় যান। সেখানকার ৩০ ফিট রাস্তার বাঁকে ফোর্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বিল্ডার্সের সামনে পৌঁছালে এমপির লোকজনের মুখোমুখি পড়েন তারা। দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি বাধে। একপর্যায়ে তাদের উদ্দেশ করে গুলি করতে থাকেন এমপির লোকজন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নিয়ারুল ইসলাম বলেন, এমপির ভাগনে ফারুকের বাসার কাছে এ ঘটনা ঘটে। তারা গুলি করা শুরু করলে কামরুজ্জামান ঘাড়ের পেছনে হাত দিয়ে পড়ে যান। ঘটনাস্থলের এক শ গজের মধ্যে তখন দুই গাড়ি পুলিশ ছিল। তারা তাঁকে ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

চেয়ারম্যানের লোকজন কেবল সাংসদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে গুলি ছোড়ার অভিযোগ আনলেও পুলিশ বলছে দুই পক্ষই গোলাগুলি করেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বেরাইদ ইউনিয়ন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বর্তমানে এটি ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। এই ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাংসদ রহমতউল্লাহ ও বেরাইদ ইউনিয়নের সর্বশেষ নির্বাচিত চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের মধ্যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, কাউন্সিলর নির্বাচনের আগে (আদালতের আদেশে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হয়নি) বেরাইদ মুসলিম হাইস্কুল মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বসে কাউন্সিলর হিসেবে রহমতউল্লার ছেলে হেদায়েত উল্লাহকে প্রার্থী ঠিক করেন। ওই সময় জাহাঙ্গীর আলমও উপস্থিত ছিলেন। জাহাঙ্গীর সাংসদের ছেলের প্রার্থী হওয়া নিয়ে হ্যাঁ-না কিছু বলেননি। কিন্তু মনোনয়ন ফরম ছাড়ার পর হেদায়েত উল্লাহর পাশাপাশি জাহাঙ্গীর কাউন্সির প্রার্থী হিসেবে মনোনোয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। এরপর থেকে এমপি ও জাহাঙ্গীরের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নেয়। এমন দ্বন্দ্বের মধ্যেই জাহাঙ্গীর উচ্চ আদালতে নির্বাচন স্থগিতের জন্য আবেদন করেন। আদালতের নির্দেশে শেষ পর্যন্ত আর নির্বাচন হয়নি।

জানা গেছে, জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ‘বেরাইদ নাগরিক কমিটির’ ব্যানারে একাধিকবার মুসলিম হাইস্কুল মাঠে সমাবেশ করেছেন এমপি রহমতউল্লাহর কর্মী-সমর্থকেরা। এসব সমাবেশে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়েছিল।

এমপি একেএম রহমতুল্লাহ বলেন, ছেলেমেয়েরা ঝগড়া করতে করতে ঘটনাটা হয়ে গেছে। হত্যার চিন্তা করে কেউই এটা করতে যায়নি। দুই পক্ষের মধ্যে যে মারামারি হয়েছে, তখন দুর্ঘটনাক্রমে ঘটনাটি ঘটেছে।

ভাগনের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে এমপি বলেন, ফারুক ওই সময় বসুন্ধরায় তাঁর টাকা তোলার জন্য গিয়েছিলেন। এর প্রমাণও তাঁর কাছে রয়েছে।

ঘটনাটি কী নিয়ে হয়েছে—এ জবাবে এমপি বলেন, তুচ্ছ একটি ঘটনা নিয়ে এটা হয়েছে। তুচ্ছ ঘটনাটি কী সেটা জানতে চাইলে, উত্তরে তিনি বলেন, ‘ওদের মধ্যে কী হয়েছে সেটা আমি না জানলে বলব কীভাবে।’

ব্যবসায় সাংসদের লোকজন বাধা দিয়েছে বলে এই মারামারি হয়েছে বলে চেয়ারম্যানের পক্ষের লোকজনের অভিযোগ করছেন। এ বিষয়ে এমপি বলেন, ‘আমি একজন এমপি, আর সে চেয়ারম্যান। এখানে আমি ৯২ শতাংশ ভোট পাই। সে একসময় আমার লোকই ছিল। সহায় সম্পত্তিও করেছে আমার নাম বিক্রি করে।’ এ বিষয়ে মোবাইলে এর বেশি কথা বলতে পারবেন না বলে জানান তিনি।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version