এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ বাকি আর এর মধ্যে ব্যাপক চাপের মধ্যে পড়েছে পাকিস্তানের সবচেয়ে পুরনো ও মর্যাদাবান একটি পত্রিকা ডন।

শহর এলাকায় পত্রিকাটির বিতরণ অনেকটা বন্ধ। কারণ এসব এলাকার বেশিরভাগই ডিফেন্স হাউজিং অথরিটির নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু এ অবস্থা শুধু ডন পত্রিকাটিরই নয়। গত মার্চে জিও টেলিভিশন নেটওয়ার্কেরও একই দশা হয়েছিল। -খবর বিবিসি বাংলার।

আর এ দুটি ঘটনাই আসলে সদ্য ক্ষমতা হারানো প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও প্রতাপশালী সেনাবাহিনীর মধ্যকার স্নায়ুযুদ্ধেরই বহির্প্রকাশ।

পাকিস্তানের বেসামরিক কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা এ ধরনের কোনো কিছুর আদেশ দেয়নি। তাই সঙ্গত কারণেই দৃষ্টি চলে যাচ্ছে সামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে।

ডনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাটি নেয়া শুরু হয়েছে মূলত নওয়াজ শরিফের একটি সাক্ষাৎকারকে কেন্দ্র করে, যেটি চলতি মাসের শুরুতেই প্রকাশিত হয়েছে।

যেখানে শরিফ পাকিস্তানি জঙ্গিদের সীমান্ত অতিক্রম করে মুম্বাইয়ে ১৫০ জনকে হত্যার অনুমতি দেয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, কেন পাকিস্তান ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিচার করেনি? অথচ তারা পাকিস্তানেই আটক হয়েছিল। মনে করা হয় যে, এসব মন্তব্যে সামরিক বাহিনীর দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। জিও টেলিভিশন নেটওয়ার্ককেও একই কারণে শাস্তি পেতে হয়েছে।

জিওর একজন প্রতিবেদক নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলা নিয়মিত অনুসরণ করছিলেন। তিনি একটি তথ্য বের করে আনেন যে কারণে শরিফকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু ওই তথ্যের ভিত্তি একেবারেই দুর্বল। কিন্তু সামরিক বাহিনী উদ্বিগ্ন কেন?

সমালোচকরা বলেন, সামরিক বাহিনী গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। এ ছাড়া তাদের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য অন্তত দুটি ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। আর এর প্রথমটি শরিফ নিজেই তৈরি করেছেন।

কারণ তার জনপ্রিয়তার কমতি দেখা যাচ্ছিল না, যা সেনাবাহিনীকে বিব্রত করে তুলে। কারণ তাদের কাছে মনে হচ্ছিল যে এখনই না থামালে সামনের নির্বাচনেও তিনি বিজয়ী হতে পারেন।

আরেকটি হল- উপজাতি এলাকাগুলোতে আন্দোলন বেড়ে যাওয়া। এসব আন্দোলন শান্তিপূর্ণ থাকলেও যুদ্ধগুলো কীভাবে হয় এবং স্থানীয়রা সে জন্য কী মূল্য দেয় এমন প্রশ্নগুলো উঠছিল। শরিফ কী কী জানেন?

নওয়াজ শরিফ ১৯৯০-এর পর থেকে তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। ক্ষমতার শক্তিগুলোর সঙ্গে তার যোগাযোগ আশির দশকে জেনারেল জিয়াউল হক যখন তাকে পাঞ্জাবের অর্থমন্ত্রী বানান তখন থেকেই। সামরিক বাহিনীর সঙ্গে একটি যোগসূত্র তারও ছিল।

আবার ১৯৯৯ সালে আলোচিত কারগিল যুদ্ধের ভেতরের গল্পও তার জানা। কারণ তিনি তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আর পাকিস্তানের সেনাবাহিনীও তখন সে যুদ্ধের সূচনা করেছিল।

শরিফ অনেকবারই এমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, যুদ্ধটি ছিল পরিকল্পিত, যা বাস্তবায়ন করেছিলেন তখনকার সেনাপ্রধান পারভেজ মোশাররফ। যদিও এর বিস্তারিত তিনি প্রকাশ করেননি।

বিশ্লেষকদের বিশ্বাস, নওয়াজ শরিফ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন সেটি ঠেকাতেই ওই যুদ্ধ। কিন্তু নওয়াজ শরিফ কতদূর যেতে পারেন?

আশির দশক থেকেই দেশটিতে সেনাবাহিনীই বড় ব্যবসায়িক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। একই সঙ্গে রাজনীতি ও সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাও তাদের নিয়ন্ত্রণে।

নওয়াজ এখন সামরিক বাহিনীর জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছেন বিব্রতকর সত্যগুলো নিয়ে। বা হয়তো তিনিও একটি সমঝোতা চুক্তি চাইছেন এর মাধ্যমে।

কিন্তু গণমাধ্যমের কাছে একটি বিষয় পরিষ্কার যে গণমাধ্যমকে এভাবে কখনই চাপের মুখে থাকতে হয়নি এবং নওয়াজ শরিফের দল ভাঙার একটি চেষ্টা চলছে আগামী নির্বাচনের আগেই।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version