এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : থাইল্যান্ডের গুহায় আটকা কিশোর ফুটবল দলের সব সদস্য ও তাদের কোচকে বাইরে বের করে আনা হয়েছে। থাই নেভি নিজেদের ফেইসবুক পাতায় এ খবর নিশ্চিত করেছে।
ফেইসবুকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, “১২ ওয়াইল্ড বোয়ার ও তাদের কোচ গুহা থেকে বেরিয়ে এসেছে এবং তারা নিরাপদ আছে।”
উদ্ধার অভিযানের তৃতীয় দিন মঙ্গলবার চার কিশোর ও তাদের কোচকে গুহা থেকে বের করে আনেন ডুবুরিরা।
পরে একে একে তিন ডুবুরি ও এক চিকিৎসকেও গুহা থেকে বের করে আনা হয়। এর মধ্যদিয়ে ১৭ দিনের ক্লান্তিকর এক অভিযান আনন্দের সঙ্গেই শেষ হলো।
গুহার ভেতরে কিশোর ফুটবল দলটির সন্ধান পাওয়ার পর থেকে ওই চারজন তাদের সঙ্গে ছিলেন।
তার আগে রোববার চার কিশোর ও সোমবার চার কিশোরকে বের করে আনা হয়।
গত ২৩ জুন থাই কিশোর ফুটবল দলের ১২ সদস্য ও তাদের কোচ চিয়াং রাই প্রদেশের ‘থাম লুয়াং’ গুহায় প্রবেশের পর আটকা পড়ে।
ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে আকস্মিক ঢলে গুহার ভেতর পানি ঢুকে তাদের বের হবার পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
নিখোঁজ হওয়ার ১০দিনের মাথায় দুই ব্রিটিশ ডুবুরি গুহা থেকে প্রায় চার কিলোমিটার ভেতরে আংশিক ডুবে থাকা একটি চেম্বারের কর্দমাক্ত পাথরখণ্ডের উপর ক্ষুধার্ত ও অন্ধকারের সঙ্গে লড়াইরত দলটিকে খুঁজে পায়।
টানা ১০ দিনের অনাহারে দলটি এমনিতেই দুর্বল ছিল। কিশোরদের সবাই সাঁতারও জানতো না।
এদিকে, যেখানে দলটিকে খুঁজে পাওয়া গেছে সেখান থেকে গুহা মুখে পৌঁছানোর রাস্তায় কোনো কোনো চেম্বার পানিতে পরিপূর্ণ ছিল এবং সেগুলো এতটাই সংকীর্ণ ছিল যে অক্সিজেন ট্যাঙ্ক পিঠ নিয়ে ওই চেম্বার পার হওয়া সম্ভব ছিল না।
প্রথমে গুহার ভেতর থেকে পাইপের সাহায্যে পানি বের করে ফেলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু থাইল্যান্ডে বর্ষা মৌসুম শুরু হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টি অব্যাহত ছিল। ফলে গুহার ভেতর পানি উচ্চতা বাড়তে থাকে।
কিভাবে কিশোর দলটিকে বের করা হবে তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনার মধ্যেই আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে কয়েকদিনের মধ্যে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে ঝুঁকি আরও বেড়ে যেতে পারে আশঙ্কায় কিশোরদের বের করে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
গত শনিবার রাতে অস্ট্রেলিয়ার একজন চিকিৎসক কিশোরদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে তাদের বের করার কাজ শুরুর পরামর্শ দেন।
পরদিন থেকে ডুবুরিরা দলটিকে বের করে আনার অভিযান শুরু করেন। এজন্য ডুবুরিদের প্রায় ছয় ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে গুহার ভেতরে প্রবেশ করে আবারও প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে বাইরে বেরিয়ে আসতে হয়।
রোববার চার ও সোমবার আরও চার কিশোরকে বের করে আনেন ডুবুরিরা। মঙ্গলবার বাকি চার কিশোর ও তাদের কোচকে বের করে আনা হয়।
তাদের সবাইকে চিয়াং রাই প্রাচানুকরহ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রথমদিন উদ্ধার চার কিশোর সুস্থ আছে। তাদের হাসপাতালে হাঁটা-চলা করতে দেখা গেছে।
দ্বিতীয়দিন উদ্ধার চার কিশোরের মধ্যে দুইজনের ফুসফুসে সংক্রমণ হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদিও এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। উদ্ধার কিশোরদের পরিবারের সঙ্গেও এখন তাদের দেখা করতে দেওয়া হয়নি।
অনাহারে শরীর দুর্বল থাকায় সংক্রমণ হতে পারে আশঙ্কায় তাদের হাসপাতালে আলাদা জায়গায় রাখা হয়েছে। তাদের খাবারের উপরও বিধি নিষেধ আরোপ করেছেন চিকিৎসকরা।