এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : ইংল্যান্ড ফুটবলকে ফেরাতে পারল না আঁতুড় ঘরে। তবে ক্রোয়াটরা গড়ল ইতিহাস। ইংলিশদের স্বপ্ন গুঁড়িয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে ক্রোয়েশিয়া।
মস্কোর লুজনিকি স্টেডিয়ামে বুধবার রাতে রাশিয়া বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে ২-১ গোলে জিতেছে জ্লাতকো দালিচের দল। আগামী রোববার এই মাঠেই ফাইনালের প্রতিপক্ষ তাদের ফ্রান্স।
কিরান ট্রিপিয়ারের দুর্দান্ত ফ্রি-কিকে ম্যাচের শুরুতেই এগিয়ে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু শেষ চার পর্যন্ত অপেক্ষাকৃত সহজ প্রতিপক্ষকে পেয়ে আসা গ্যারথ সাউথগেটের দল ভেঙে পড়ে ক্রোয়াটদের আক্রমণে। দ্বিতীয়ার্ধে একের পর এক আক্রমণ চালানো ক্রোয়েশিয়াকে সমতায় ফেরান ইভান পেরিসিচ। আর অতিরিক্ত সময়ে দলটির একমাত্র ফরোয়ার্ড মারিও মানজুকিচের গোলে রচিত হয় ইতিহাস।
দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনাল খেলার লক্ষ্যে থাকা ইংল্যান্ড এগিয়ে যায় পঞ্চম মিনিটেই। ডি-বক্সের একটু বাইরে থেকে ওপরের ডান কোণ লক্ষ্য করে নেওয়া ট্রিপিয়ারের বাঁকানো ফ্রি-কিক ঠেকানোর সুযোগই পাননি গোলরক্ষক দানিয়েল সুবাসিচ।
জাতীয় দলের হয়ে এটাই টটেনহ্যাম হটস্পার ডিফেন্ডারের প্রথম গোল।
২২তম মিনিটে ইভান স্ত্রিনিচের ভুল পাসে বড় বিপদে পড়তে পারতো ক্রোয়েশিয়া, তবে রাহিম স্টার্লিংয়ের বাড়ানো বল ধরার সময় হ্যারি কেইন অফসাইডে থাকায় সে যাত্রা বেঁচে যায় ক্রোয়াটরা।
আধ ঘণ্টার মাথাতে ডি-বক্সে ফাঁকা জায়গায় বল পেয়েও রাশিয়া বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা হ্যারি কেইন দুর্বল শট মারেন গোলরক্ষক বরাবর। পাঁচ মিনিট পর পাল্টা আক্রমণে কেইন আর ডেলে আলি হয়ে বল পেয়ে জেসি লিনগার্ড মারেন পোস্টের বাইরে।
বিরতির পর মরিয়া হয়ে আক্রমণে উঠে ৬৫তম মিনিটে গোলের সুযোগ পায় ক্রোয়েশিয়া। তবে ডি-বক্স থেকে পেরিসিচের শট ফেরে রক্ষণে দুই জনের গায়ে লেগে। তবে তিন মিনিট পর ডান দিক থেকে শিমে ভারসালকোর ক্রসে পা অনেক উঁচিয়ে বল জালে পাঠান পেরিসিচ।
চার মিনিট পর ভাগ্যের সহায়তায় বেঁচে যায় ইংল্যান্ড। পেরিসিচের শটে বল পিকফোর্ডকে ফাঁকি দিলেও পোস্টে লেগে ফিরে।
৮৩তম মিনিটে বুক দিয়ে ডি-বক্সে বল নামিয়ে মানজুকিচের নেওয়া শট দক্ষতার সঙ্গে ঠেকান পিকফোর্ড। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
অতিরিক্ত সময়ের বিরতির ঠিক আগে গোলরক্ষককে একা পেয়েছিলেন মানজুকিচ। পেরিসিচের ছয় গজ বক্সে একটু উঁচু করে বাড়ানো বলে পাও লাগিয়েছিলেন ইউভেন্তুস স্ট্রাইকার। কিন্তু ছুটে এসে কোনোমতে সে যাত্রায় দলকে বাঁচান পিকফোর্ড।
তবে বিরতির পর আর রুখতে পারেননি এভারটনের এই গোলরক্ষক। ১০৯তম মিনিটে পেরিসিচের হেডে বাড়ানো বল ছয় গজের বক্সের মুখে পেয়ে বাঁ-পায়ের কোনাকুনি শটে ক্রোয়েশিয়াকে জয় এনে দেন মানজুকিচ। ১৯৯৮ সালে বিশ্বকাপ অভিষেকেই সেমি-ফাইনাল খেলার সাফল্য ছাড়িয়ে গেল মদ্রিচ-রাকিতিচরা। সামনে সুযোগ এখন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের তালিকাতে নাম ওঠানোর।
নাইজেরিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা ক্রোয়েশিয়ার গ্রুপ পর্বটা দারুণ কাটে। দ্বিতীয় ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দেওয়ার পর আইসল্যান্ডকে ২-১ ব্যবধানে হারায় ক্রোয়াটরা। শেষ ষোলোয় ডেনমার্ক ও কোয়ার্টার-ফাইনালে রাশিয়াকে টাইব্রেকারে হারায় দলটি।
তিউনিসিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ম্যাচে দুর্বল পানামাকে ৬-১ গোলে উড়িয়ে দেয়। আর শেষ ম্যাচে বেলজিয়ামের কাছে ১-০ গোলে হেরে থাকে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে অপেক্ষাকৃত সহজ পাশে। শেষ ষোলোয় কলম্বিয়াকে টাইব্রেকারে হারানোর পর কোয়ার্টার-ফাইনালে সুইডেনকে ২-০ গোলে হারিয়ে আরেকটি ফাইনালের স্বপ্ন দেখছিল ১৯৬৬ সালের চ্যাম্পিয়নরা। এখন শনিবার বেলজিয়ামের সঙ্গে তৃতীয় স্থানের লড়াইয়ে নামতে হবে ইংলিশদের।