এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : হরমুজ প্রণালিতে গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইরান। ওমান উপসাগর ও আরব সাগরকে সংযোগকারী এ প্রণালিতে ইতিমধ্যে ছোট ছোট জাহাজ ও স্পিডবোটের মহড়া শুরু করেছে তেহরান। ইরানের নৌবাহিনী ইসলামিক রিপাবলিক এলিট গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীকে ধ্বংস করতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

মার্কিন নৌবাহিনীর শক্তিমত্তা ও সংখ্যাধিক্যে সেরা হলেও আইআরজিসির যানগুলো ক্ষুদ্র, দ্রুতগতির ও মরণঘাতী। এসব স্পিডবোটের ক্ষুদ্রাকৃতির কারণেই এগুলো বিশ্বের বড় বড় জাহাজের জন্য হুমকিজনক। ছোট অস্ত্র দিয়ে পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রকে দমনে সমুদ্রে গেরিলা সেনা গড়ে তুলছে ইরান। খবর বিজনেস ইনসাইডারের।

ভূরাজনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্ট্রাটফরের জ্যেষ্ঠ সামরিক বিশ্লেষক ওমর লামরানি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর বিরুদ্ধে সক্ষমতার প্রতিযোগিতায় গিয়ে বড় বড় বিধ্বংসী জাহাজ তৈরির পরিকল্পনা নেই ইরানের। ক্ষুদ্র স্পিডবোট, বন্দুক, বিস্ফোরক ও কিছু ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী জাহাজ দিয়ে সমুদ্রে গেরিলা যুদ্ধ করতে চাইছে দেশটি।’

লামরানি আরও বলেন, ‘তারা (ইরান) জানে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্রদের শক্তির কাছে তারা পারবে না। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় জাহাজকে টার্গেট করে ছোট জনযান দিয়ে দ্রুতগতিতে ঘন ঘন আঘাত হেনে তাদের কাবু করার পরিকল্পনা নিয়েছে ইরান। দেশটির জন্য এটা একটি সুইসাইড মিশন।’

ফক্স নিউজ জানায়, যুক্তরাষ্ট্রকে হামলার এ পরিকল্পনায় যথার্থ প্রশিক্ষণ নিয়েছে আইআরজিসি সেনারা। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানান, বিশ্বের তেল বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ রুট হরমুজ প্রণালি বন্ধে অর্ধশতাধিক ক্ষুদ্রাকৃতির বোট নামিয়েছে তেহরান। ইরানের এ হামলা পরিকল্পনা মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রেরও সমক্ষমতা রয়েছে।

লামরানি বলেন, ইরানের ছোট ছোট বোটের বিরুদ্ধে মার্কিন নৌবাহিনীর বড় অস্ত্র হেলিকপ্টার। ক্ষুদ্র অস্ত্রসজ্জিত কপ্টারগুলো তেহরানের বিরুদ্ধে দ্রুতই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।

গত মাসে ইরানের তেল রফতানির আয় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার হুমকি দেয় যুক্তরাষ্ট্র। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে বিশ্বের তেল রফতানির গুরুত্বপূর্ণ পথ হরমুজ প্রণালি বন্ধের হুমকি দেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। ইরানকে কোনো দেশ হুমকি দিলেই দেশটি হরমুজকে তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করে।

এর আসল কারণ, আন্তর্জাতিক তেল বাণিজ্যে হরমুজ প্রণালির ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান। আর তাই হরমুজের গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অবস্থানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের লড়াই বহুদিনের।

হরমুজ প্রণালি হল ওমান ও ইরানের মাঝখানে অবস্থিত এক ফালি সরু জলপথ। এ প্রণালি উপসাগরীয় অঞ্চলের সবচেয়ে বড় তেল উৎপাদনকারী দেশ সৌদি আরবকে ওমান উপসাগর ও আরব সাগরের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। জলপথটির সবচেয়ে সরু অংশের দৈর্ঘ্য ২১ মাইল ও প্রস্থ ২ মাইল। সমুদ্রপথে বিশ্বের তেল বাণিজ্যের ৩৫ শতাংশই এ প্রণালি দিয়েই হয়ে থাকে।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version