এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : সঞ্জয় মাঞ্জরেকার থেকে শুরু করে সুনীল গাভাস্কার, সবাই একবাক্যে ফেভারিট আখ্যা দিয়েছিলেন তাদের প্রতিবেশী দেশকে। ফর্ম বিবেচনায় এবং সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানের পরিপ্রেক্ষিতে এগিয়েছিল পাকিস্তান। কিন্তু বুধবার দুবাইয়ে এশিয়া কাপের বহুল প্রতীক্ষিত মহারণে পাকিস্তান উড়ে গেল। ভারত অনায়াসে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের হরিয়ে দিল আট উইকেটে। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর এমন একপেশে ম্যাচ ক্রিকেটপ্রেমীদের কল্পনাতীত ছিল। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ২শ’ রানও করতে পারেনি পাকিস্তান। ব্যাট করতে পারেনি পুরো ৫০ ওভারও। ৪৪ ওভারের মধ্যে মাত্র ১৬২ রানে অলআউট হয়ে যায় তারা। গোটা ইনিংসে রান করেছেন তাদের মাত্র দু’জন। বাবর আজম ৪৭ ও শোয়েব মালিক ৪৩। ফাহিম আশরাফের ২১ ও মোহাম্মদ আমিরের ১৮ মন্দের ভালো। ভুবনেশ্বর কুমার ও কেদার যাদব তিনটি করে উইকেট নেন।

ভারত সেই রান টপকে যায় ১২৬ বল এবং আট উইকেট হাতে রেখে। আট উইকেটের জয়ে মুখ্য ভূমিকা দু’জনের। নিয়মিত অধিনায়ক বিরাট কোহলির অনুপস্থিতিতে ভারতকে নেতৃত্ব দেয়া রোহিত শর্মা এবং তার উদ্বোধনী জুটি শিখর ধাওয়ান। উদ্বোধনী উইকেট জুটিতে ৮৬ রান তুলে এ দু’জন জয়ের পথে এগিয়ে দেন ভারতকে। রোহিত হাফ সেঞ্চুরি (৫২) পূর্ণ করলেও ধাওয়ান তা মিস করেন চার রানের জন্য। তৃতীয় উইকেটে আম্বাতি রাইডু ও দিনেশ কার্তিক আরেকটি অবিচ্ছিন্ন পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের জুটি গড়লে ভারতের জয় সহজ হয়ে যায়। দু’জনেই সমান ৩১* রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন। রোববার সুপার ফোরের লড়াইয়ে দু’দল আবার মুখোমুখি হবে। গত বছর ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে গ্রুপপর্বে ভারতের কাছে হেরে গেলেও ফাইনালে তাদের হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল পাকিস্তান। এশিয়া কাপে সবচেয়ে সফল ভারত। তারা সর্বোচ্চ ছয়বার শিরোপা জিতেছে।

চ্যাম্পিয়নদের নিয়ে কখনও শেষ কথা বলতে নেই। আগেরদিন পুঁচকে হংকং যাদের কাঁপিয়ে দিয়েছিল, সেই ভারতই কাল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে সামনে পেয়ে ঝলসে উঠল দারুণভাবে। বুধবার দুবাইয়ে এশিয়া কাপের গ্রুপপর্বের অগ্নিগর্ভ ম্যাচে ভারতের পেস-স্পিনে নাকাল হয়ে ৪৩.১ ওভারে মাত্র ১৬২ রানেই গুটিয়ে যায় পাকিস্তান। আগেরদিন অনেক কাঁপাকাঁপির পর হংকংকে ২৬ রানে হারিয়ে এশিয়া কাপে শুভসূচনা করা বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারত কাল খুনে মেজাজে হাজির হয়েছিল সরফরাজদের সামনে। পাকিস্তানকে লণ্ডভণ্ড করে হংকংয়ের বিপক্ষে উইকেট না পাওয়ার খেদ মেটালেন ভুবনেশ্বর কুমার ও কেদার যাদব। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা পাকিস্তান ভুবনেশ্বরের পেস ও কেদার যাদবের স্পিনের কোনো জবাব দিতে পারেনি। দু’জনই নিয়েছেন সমান তিনটি করে উইকেট। আগের ম্যাচে বিশ্রাম পাওয়া পেসার জাসপ্রিত বুমরাহ’র ঝুলিতে গেছে দুই উইকেট। এই ত্রয়ীর তাণ্ডবে পাকিস্তানের মাত্র চার ব্যাটসম্যান দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেন। সর্বোচ্চ ৪৭ রান এসেছে বাবর আজমের ব্যাট থেকে। এছাড়া শোয়েব মালিক করেন ৪৩ রান। শেষদিকে ফাহিম আশরাফ (২১) ও মোহাম্মদ আমিরের (১৮*) সামান্য প্রতিরোধে দেড়শ’ পেরোতে পারে পাকিস্তান।

পাকিস্তানের শুরুটাই হয়েছিল দুঃস্বপ্নের মতো। মাত্র তিন রানের মধ্যেই দুই ওপেনার ইমাম-উল-হক ও ফখর জামানকে ফিরিয়ে দেন ভুবনেশ্বর। তৃতীয় উইকেটে বাবর আজম ও শোয়েব মালিকের ৮২ রানের জুটি পাশার দান উল্টে দেয়ার সম্ভাবনা জাগালেও সেটি আর হয়নি। বাবরকে সরাসরি বোল্ড করে এই জুটি ভাঙেন কুলদীপ যাদব। এরপর শুধু আসা-যাওয়ার মিছিল। অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ ছয় রান করেই সাজঘরের পথ ধরেন। একপ্রান্ত আগলে রাখা শোয়েব মালিক রানআউটে কাটা পড়েন দলীয় ১০০ রানের মাথায়। ১০৬ রানে ছয় উইকেট হারানো পাকিস্তানকে ১৬২ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার কৃতিত্ব ফাহিম ও আমিরের।

হংকংয়ের বিপক্ষে জয়ে আগেই সুপার ফোর নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় দু’দলের জন্যই ম্যাচটি ছিল কার্যত মর্যাদার লড়াই। অবশ্য বাইশ গজে ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি হলে মর্যাদার প্রশ্নটিই হয়ে ওঠে সবচেয়ে বড়। চিরবৈরী দুই পড়শির এই দ্বৈরথকে বলা হয় ক্রিকেটের ‘মাদার অব অল ডার্বি’। যে লড়াই দেখতে ব্যাকুল হয়ে থাকে গোটা ক্রিকেট বিশ্ব। এবার বহুল প্রার্থিত সেই মহারণের প্রথম ভাগটা নিদারুণ একপেশে হলেও ক্রিকেট রোমান্টিকদের হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। আগামী রোববার দুবাইয়ে সুপার ফোরের ম্যাচে আবার দেখা হবে ভারত-পাকিস্তানের।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version